কলকাতা: আরজি কর মামলায় নিম্ন আদালতে দোষী সাব্যস্ত সঞ্জয় রায়। সর্বোচ্চ শাস্তি নয়, তার আমৃত্যু কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছেন শিয়ালদহ আদালতের ফার্স্ট জাজ অনির্বাণ দাস। কিন্তু রায়দানের পর সোচ্চার হয়েছে বাংলা। সমাজের একাধিক স্তর থেকে অভিযোগ উঠছিল, সঞ্জয় একা দোষী নয়। আসল অপরাধীদের আড়াল করতেই ফাঁসানো হয়েছে সঞ্জয়কে। এদিকে, সঞ্জয়ের ফাঁসির সাজার দাবি জানিয়ে হাইকোর্টের দ্বারস্থ রাজ্য সরকার। খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিম্ন আদালতের রায়ে অসন্তুষ্ট। এবার সঞ্জয় রায়ের হয়ে ব্যক্তিগতভাবে লড়াইয়ের ইচ্ছাপ্রকাশ করলেন এক আইনজীবী।
আইনজীবীদের একাংশের মতে, সঞ্জয়কে ফাঁসানো হয়েছে। রায়ে একাধিক জায়গা ধোঁয়াশা ঠেকেছে তাঁদের কাছে। সেই বিষয়টি উল্লেখ করেই মামলা লড়ার ইচ্ছাপ্রকাশ করেন যশ জালান নামে এই আইনজীবী।
আরজি করের ঘটনার নৃশংসতা ও বিভৎসতায় বিরক্ত হয়ে শিয়ালদহ আদালতে সঞ্জয় রায়ের হয়ে কোনও আইনজীবীই মামলা লড়তে চাননি। শেষ পর্যন্ত লিগল এডের পক্ষ থেকে আইনজীবী দেওয়া হয়। আর জি কর মামলায় আপাতত সঞ্জয়কে একাই দোষী মনে করেছে আদালত। গত সোমবার যখন শিয়ালদহ আদালতের সঞ্জয়ের সাজা ঘোষণা হচ্ছে, তখন তার ফাঁসির পক্ষে জোরাল সওয়াল করেছিলেন সিবিআই-এর আইনজীবী। কিন্তু সঞ্জয়ের যাতে সর্বোচ্চ সাজা না হয় তার জন্য লিগল এড নিযুক্ত আইনজীবী সেঁজুতি চক্রবর্তী ও কবিতা সরকার প্রাণপন চেষ্টা চালিয়েছিলেন। তাঁদের হাতিয়ার ছিল একটাই শব্দবন্ধ। শেষমেশ তাতেই মান্যতা দিয়ে বিচারক বলেন, ‘এই ঘটনা বিরলের মধ্যে বিরলতম নয়।’
সঞ্জয়ের ফাঁসি হয়নি। তার আমৃত্যু কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। এবার তার হয়ে উচ্চ আদালতে ব্যক্তিগত মামলা করতে চাইলেন জশ জালান নামে এক আইনজীবী। আইনজীবীদের অন্দরের প্রশ্ন উঠেছে, সঞ্জয়কে ফাঁসানো হয়েছে। রায়ে একাধিক জায়গা ধোঁয়াশা ঠেকেছে তাঁদের কাছে। তাই হাইকোর্টে নিজেরাই এসেছেন সঞ্জয়ের হয়ে লড়াই করতে। আইনজীবীদের একাংশ এটাও মনে করছে, সঞ্জয়কে বাঁচিয়ে রাখা অত্যন্ত জরুরি। কারণ বিচারকের মতেও, ‘সঞ্জয়ের থেকে ভাল কেউ জানেন না, আসলে কী হয়েছে!’ তাই সত্যিই যদি কোনও মাথা থেকে থাকে, সত্যিই কাউকে আড়ালের প্রয়াস চলছে, সেক্ষেত্রেও সেই নাম জানার একমাত্র হাতিয়ার সঞ্জয়ই, মনে করছেন আইনজীবীদের একাংশ।
বুধবার হাইকোর্টে বিচারপতি দেবাংশু বসাকের বেঞ্চে চলছে নিম্ন আদালতের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে রাজ্যের মামলার গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে সওয়াল জবাব, তখন অন্যদিকে হাইকোর্টে মামলা করতে হাজির আইনজীবী যশ জালান ও তাঁর সহযোগী। তাঁদের অভিযোগ, জেলে তাঁদের সঞ্জয়ের সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হচ্ছে না। এদিন আদালতে অভিযোগও করেন ওই আইনজীবী।
সূত্রের খবর যশ নন, তাঁর সিনিয়র কোনও আইনজীবী এই মামলা লড়বেন। মামলাটি মৃত্যুদণ্ড বিরোধী কোন এন জিওর পক্ষ থেকে করা হবে। ভারতবর্ষে মৃত্যুদণ্ডের বিরোধিতা করে এই মুহুর্তে অনেক এন জিও কাজ করছে। তেমনই স্বেচ্ছেসেবী সংস্থার পক্ষ থেকে মামলা করা হবে জানা যাচ্ছে। আদালতে অনেকেই মন্তব্য করেছেন, সঞ্জয়কে ‘বলির পাঁঠা’ করা হয়েছে।