আলাপনের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ আনতে পারে কেন্দ্র, আইনি পন্থা নিয়ে চলছে বিস্তর আলোচনা

শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Alapan Bandyopadhyay ) বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে কেন্দ্রীয় সরকার।

আলাপনের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ আনতে পারে কেন্দ্র, আইনি পন্থা নিয়ে চলছে বিস্তর আলোচনা
আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ আনতে পারে কেন্দ্র
Follow Us:
| Updated on: May 31, 2021 | 12:38 PM

কলকাতা: শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Alapan Bandyopadhyay ) বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে কেন্দ্রীয় সরকার। আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়কে বাংলা থেকে রিলিজ না করার কথা জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে চিঠি পাঠান, তা পরই পরবর্তী পদক্ষেপ করতে চলেছে কেন্দ্র। এই মুহূর্তে আইনি দিকগুলি খতিয়ে দেখছে কেন্দ্র।

সোমবার সকাল ১০টায় তাঁর নয়াদিল্লিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের কর্মিবর্গ দফতরে পৌঁছনর কথা ছিল। কিন্তু দেখা যায়, সকাল পর্যন্ত দিল্লিগামী কোনও বিমানেই আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামে বুকিং নেই। এরপর জল্পনা তুঙ্গে ওঠে। এরই মাঝেই জানা যায়, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি পাঠিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

চিঠিতে তিনি স্পষ্ট উল্লেখ করেছেন, ‘রাজ্য কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। এই সময় কোনও মতেই মুখ্যসচিবকে ছাড়া সম্ভব নয়’। রাজ্যের সঙ্গে কোনও আলোচনা না করেই কেন পদক্ষেপ করা হল, তা চিঠিতে প্রশ্ন তুলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর বক্তব্য, এই নির্দেশ অসাংবিধানিক ও নজিরবিহীন। আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের বদলির নির্দেশ প্রত্যাহারের আর্জি জানিয়েছেন তিনি।

মুখ্যমন্ত্রীর এই চিঠির পরই রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা আঁচ করতে পেরেছিলেন কেন্দ্র-রাজ্য সংঘাত তুঙ্গে উঠতে চলেছে। আরও স্পষ্ট করে বলতে গেলে বলা যায়, এই সংঘাত মূলত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বনাম মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। কারণ, আলাপন যে দফতরের আইএএস, সেই কর্মিবর্গ দফতর স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর অধীনস্থ।

আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়কে কেন রিলিজ করা হয়নি, কেন তিনি দিল্লি যেতে পারছেন না- সেই প্রত্যেকটি বিষয় চিঠিতে উল্লেখ করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পাঁচ পাতার এই চিঠিতে আইনি সংস্থানগুলো উল্লেখ করে, কয়েকটি ঘটনাপ্রবাহ তুলে ধরেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এক্ষেত্রে উল্লেখ্য, ২৮ তারিখ ইয়াস নিয়ে কলাইকুণ্ডায় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর রিভিউ বৈঠক। সেদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেবল রিপোর্ট দিয়েই দিঘা চলে যান। বৈঠকে পুরো সময় ছিলেন না। কিন্তু পরবর্তীতে সেটা নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। কলাইকুণ্ডার বৈঠক নিয়ে যে বিতর্ক তৈরি হয়েছিল, তার সঙ্গে কি এই বিষয়ের কোনও যোগসূত্র রয়েছে? সেই ইঙ্গিত দেন মুখ্যমন্ত্রী।

মুখ্যমন্ত্রী চিঠিতে জানান, ২৮ তারিখ অর্থাৎ বৈঠকের দিন ইয়াস বিপর্যস্ত এলাকা আকাশপথে ঘুরে দেখার কথা ছিল তাঁর। সে কর্মসূচি আগেই নির্ধারিত ছিল। মুখ্যমন্ত্রী সেকথা স্পষ্ট উল্লেখ করেন চিঠিতে। সেদিন প্রধানমন্ত্রীর অনুমতি নিয়েই যে তিনি দিঘা পরিদর্শনে গিয়েছিলেন, তা চিঠিতে আরও একবার স্মরণ করিয়ে দেন তিনি।

আরও পড়ুন: আলাপনকে ছাড়ছে না রাজ্য, কারণ দর্শিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে ‘নরমে-গরমে’ চিঠি মুখ্যমন্ত্রীর!

পাশাপাশি প্রশ্ন তুলেছেন মেয়াদ বৃদ্ধির সম্মতি দেওয়ার চার দিন পরই কেন বদলির নির্দেশ দেওয়া হল? উল্লেখ্য, ৩১ মে অবসর গ্রহণের কথা ছিল আলাপনের। কিন্তু এর পরও তাঁকে মুখ্যসচিব পদে রেখে দেওয়ার জন্যে কেন্দ্রকে প্রস্তাব পাঠায় রাজ্য। কেন্দ্র তাতে সম্মতিও দেয়। গত ২৪ তারিখ যখন আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের তিন মাসের মেয়াদ বৃদ্ধির সম্মতি দেয় কেন্দ্র। ঠিক তার চারদিন পরই ২৮ মে রাতের চিঠি। যেখানে তাঁকে দিল্লিতে নর্থ ব্লকে রিপোর্ট করতে বলা হয়। চিঠির শেষ পাতায় রাজ্যের স্বার্থে বেশ কিছুটা নরম সুরেই বদলির নির্দেশ প্রত্যাহারের আর্জি জানিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।