কলকাতা: কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা জোর করে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম মুখ থেকে বার করার চেষ্টা করছে। বৃহস্পতিবার আদালতে পেশের আগে আবারও বোমা ফাটালেন নিয়োগে দুর্নীতিতে গ্রেফতার হওয়া প্রাক্তন তৃণমূল যুব নেতা কুন্তল ঘোষ। উল্লেখ্য, ঠিক এই বক্তব্যটাই বুধবার শহিদ মিনারের মঞ্চ থেকে বলতে শোনা গিয়েছে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন সেরকমই তত্ত্ব খাঁড়া করলেন কুন্তল। বৃহস্পতিবার ব্যাঙ্কশাল আদালতে পেশ করার আগে কুন্তল ঘোষকে প্রশ্ন করা হয়, প্রমাণ ছাড়া গ্রেফতার প্রসঙ্গে শহিদ মিনারে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় যা বলেছেন,তা নিয়ে কী বলবেন? গ্রেফতারির পরও কুন্তলকে বরাবরই অত্যন্ত ‘কনফিডেন্ট’ দেখিয়েছে। দৃশ্যত এদিন ছিলেন আরও বেশি আত্মবিশ্বাসী। বিশ্লেষকদের কথায়, যেন নেতার বলা বাণী ‘অক্সিজেনের’ কাজ করছে। তারই প্রমাণ মিলল কুন্তলের কথাতেই। তিনি বলেন, “অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলে দেওয়া মানে আমাদের বুক চওড়া করা। এজেন্সিরা বিভিন্নভাবে ভয় দেখিয়ে আমাদের কাছ থেকে নেতাদের নাম বের করার চেষ্টা করছে।” দল থেকে বহিষ্কৃত হওয়ার পরও তিনি বলেন, “মা মাটি মানুষের আদর্শের দলের লোক। আমরা ওই ধরনের ভয়কে পাত্তা দিই না। আমরা বুক চওড়া করে চলি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় যখন বলেছে। একটা কথা বলতে পারি কেন্দ্রীয় সংস্থা যে ভাবে আমাদের জোর করে নাম বার করার চেষ্টা করছে।” কুন্তলের বক্তব্য, “আমাদের বিভিন্নরকম ভয় দেখানো হচ্ছে। চমকানো হচ্ছে। মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর কথা বলা হচ্ছে। ২১ বছর জেল খাটানোর কথা বলা হচ্ছে। যাতে বাইরে কথা না বলি। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম বলতে বলপূর্বক চাপ দেওয়া হচ্ছে।”
কুন্তল বলেন, “আমাদের যত নেতা আছে, তাঁদের নাম বের করার চেষ্টা করছে। বলপূর্বক চেষ্টা করছে।” আবারও প্রশ্ন, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম বের করার চেষ্টা করছে? একটি শব্দে কুন্তলের উত্তর, ‘অবশ্যই’। আবার আদালত থেকে বেরনোর সময়ে কুন্তল বলেন, “আমি শুধু অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে একটাই অনুরোধ রাখবো, আমার পরিবারে কেউ নেই। দুটো বাচ্চা, মা আর স্ত্রী রয়েছে। তারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। তাদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা যেন তিনি করেন।”
রাজনৈতিক অভিজ্ঞরা মনে করছেন, কুন্তল এদিন নতুন কিছুই বলেননি। নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় তো নিজেই শহিদ মিনারে দাঁড়িয়ে স্পষ্ট বলেছেন, “ভাইপো এই করেছি, ভাইপো ওই করেছি, তিন বছর হয়ে গেল, এখনও মুখ দিয়ে অভিষেক নামটা বের হয়নি। মদন মিত্রদের বলা হয়েছিল, অভিষেকের নাম নাও ছেড়ে দেব।” সঙ্গে হুঁশিয়ারিও দেন, “আমার যদি কোথাও যোগসাজশ থাকে, যদি প্রমাণ করতে পারে, তাতে আমি বলে দিলাম, এখানেই মৃত্যু বরণ করব।”
সেক্ষেত্রে কুন্তল তাঁর পূর্বতন নেতার বক্তব্যেরই রেশ টেনে কথা বলেছেন। এখনও পর্যন্ত গ্রেফতারির পর থেকে যতবার প্রকাশ্যে এসেছেন কুন্তল, কারোর না কারোর নাম নিয়েছে, তদন্তে তাঁর বলা নাম জড়িয়েছে একাধিক। সে কালীঘাটের কাকুই হোক কিংবা হৈমন্তী। কুন্তল সংবাদমাধ্যমের কাছেই দাবি করেছিলেন, তাঁরা নাকি সরাসরি দুর্নীতির টাকা ভোগ করেছেন। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার তদন্তে উঠে এসেছে নিয়োগ দুর্নীতি সম্পর্কে চাঞ্চল্যকর তথ্যও। এত কিছুর পর হঠাৎ করেই কুন্তল দাবি করলেন, জোর করে আসলে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা তাঁর মুখ থেকে নেতাদের নাম বার করার চেষ্টা করছে। সেক্ষেত্রে কুন্তলের এই নয়া বক্তব্য অভিষেকের বক্তব্যেরই উপসংহার বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।