Nirmal Maji: নির্মল মাজির অপসারণ, কোন চোখে দেখছে চিকিৎসক সংগঠন?
Nirmal Maji: রাজ্য মেডিকেল কাউন্সিলের সভাপতি, আইএমএ'র কলকাতা শাখারও সভাপতি নির্মল মাজি। অনেকে বলেন নির্মল মাজি নাকি বিতর্কের বরপুত্র।
কলকাতা: একটা সময় এমনও শোনা যেত নির্মল মাজির অনুমতি ছাড়া রাজ্যের স্বাস্থ্যক্ষেত্রে নাকি একটা পাতাও নড়ে না। তাঁর দাপট এতটাই, দিনের পর দিন হুমকির অভিযোগ, দুর্নীতি-বিতর্কে জড়িয়েও বহাল তবিয়তে বসে ছিলেন স্বাস্থ্যক্ষেত্রের গুরুত্বপূর্ণ পদে। সেই নির্মল মাজির উপরই কোপ পড়ল শুক্রবার। কলকাতা মেডিকেল কলেজের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান পদ থেকে অপসারণ হল নির্মল মাজির। তাঁর জায়গায় এলেন চিকিৎসক সুদীপ্ত রায়। নবান্নের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে একদিকে যেমন নানা প্রশ্ন উঠছে। একইভাবে চিকিৎসক সংগঠন থেকে রাজনীতির বিরোধীরা এই সিদ্ধান্ত খুশি। চিকিৎসক নেতা মানস গুমটা বলেন, “কিছুটা হলেও আমরা খুশি। একজন চিকিৎসক হিসাবে এবং একটি সংগঠনের সদস্য হিসাবে সরকারের এই সিদ্ধান্তকে আমরা স্বাগত জানাচ্ছি।” অন্যদিকে কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী সুভাষ সরকারের প্রতিক্রিয়া, “অনেক আগেই ওকে সরানো উচিত ছিল। অনেকটা দেরি হয়ে গেল।”
এদিন মানস গুমটা বলেন, “একজন প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তি, বিশেষ করে তিনি যখন চিকিৎসক, তাঁর বিরুদ্ধে প্রতিদিন কোনও না কোনও অভিযোগ উঠবে এটা কোনওদিনই কাঙ্খিত হতে পারে না। এতে গোটা চিকিৎসক সমাজই আখেরে কালিমালিপ্ত হয়। এই অভিযোগের মধ্যে তো শুধু এই নয় যে হুমকি দেওয়া, গভীর যুদ্ধের সময় যখন জীবন বাজি রেখে চিকিৎসকরা কাজ করছেন, তখন ভয়ঙ্কর দুর্নীতির অভিযোগও উঠেছে। ফলে যিনি অভিযোগ করছেন তাঁর যেমন কিছু দায় থাকে, যিনি অভিযুক্ত তাঁরও কিছু দায় থেকে যাচ্ছে। তাঁকেও তো অভিযোগমুক্ত হতে হবে। একটা ঐতিহ্যপূর্ণ বিল্ডিং, সেটা ভেঙে ট্রমা সেন্টার তৈরির পরিকল্পনা হয়েছে। অবসরের এক বছর বাকি আছে, এরকম একজন বরিষ্ঠ চিকিৎসককে জনসমক্ষে অপমান করা হয়েছে সেটা তাঁর শুধু অপমান নয়, গোটা চিকিৎসক সমাজের অপমান। আইনের পথে হেঁটে সমস্ত শাস্তি পাওয়া উচিৎ ছিল।”
অন্যদিকে বিজেপি সাংসদ সুভাষ সরকার বলেন, “মানুষ অনেকদিন আগেই আওয়াজ তুলেছিল, যখন পিজিতে কুকুরের ডায়ালিসিস হয়েছিল। যখন মেডিকেল কলেজ থেকে কোভিডের ওষুধ উধাও হয়ে গেল। সরাতে একটু দেরী হয়ে গেল।” রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান হলেও নির্মল মাজি হাসপাতালের দৈনন্দিন কাজেও ছরি ঘোরাতেন বলেই অভিযোগ। চিকিৎসক-বিধায়ক নির্মল মাজির পড়াশোনা কলকাতা মেডিকেলেই। ডাক্তারি পড়ুয়া হিসাবে ছাত্র আন্দোলনও করেছেন। ১৯৮৭ সালে এমবিবিএস পাশ করেন। কোনওদিনই সরকারি বা বেসরকারি জায়গায় চাকরি করেননি।
কোনওদিন ব্যক্তিগত প্র্যাকটিসও করেননি বলেই শোনা যায়। তিনবারের তৃণমূল বিধায়ক তিনি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্ত্রিসভায় প্রতিমন্ত্রী থেকেছেন। রাজ্য মেডিকেল কাউন্সিলের সভাপতি, আইএমএ’র কলকাতা শাখারও সভাপতি নির্মল মাজি। অনেকে বলেন নির্মল মাজি নাকি বিতর্কের বরপুত্র। এই তালিকা দীর্ঘ। এসএসকেএম হাসপাতালে কুকুরের ডায়ালিসিসকাণ্ডে অভিযুক্ত তিনি। টসিলিজুমার কেলেঙ্কারিতেও নাম জড়িয়েছে তাঁর। রয়েছে আয়ুশ নিয়োগ দুর্নীতিতেও অভিযোগ। এমনও অভিযোগ, মেডিকেলে অধ্যক্ষের পদত্যাগেও হাত ছিল তাঁর। আইএমএ’র ভোটে ডাক্তারদের ঝগড়া একেবারে পাড়ার কলতলার ঝগড়ার চেহারা নিয়েছিল কিছুদিন আগেই। সেখানেই নাম উঠে আসে নির্মল মাজির। তবে কোনওদিনই তাঁর বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি বলেই অভিযোগ চিকিৎসকদের একাংশের। হঠাৎ বৃহস্পতিবার এমন কী হল, কেন তাঁকে সরতে হল, চিকিৎসক মহলে ঘুরপাক খাচ্ছে সে প্রশ্নও।