কলকাতা: প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীর গ্রেফতারির পর ক্রমশ শাসক দলের বিরুদ্ধে সুর চড়া হচ্ছে বিরোধীদের। সেই আবহেই এবার বিস্ফোরক দাবি করলেন মিঠুন চক্রবর্তী। কলকাতায় এসে তিনি দাবি করলেন, ৩৮ জন তৃণমূল বিধায়ক বিজেপির সঙ্গে ভাল সম্পর্কে রয়েছেন। শাসক দলের ২১ জন বিধায়ক তাঁর সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করেছেন বলেও দাবি করলেন মিঠুন। বুধবার কলকাতায় এসে বিজেপি নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন অভিনেতা তথা রাজনীতিক মিঠুন চক্রবর্তী। এরপর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে এমন দাবি করেন তিনি।
বুধবারই একটি অনুষ্ঠানে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেছেন, ২০২৪-এ কোনওভাবেই বিজেপি কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসবে না। এ ব্যাপারে তিনি আত্মবিশ্বাসী বলেই দাবি করেছেন তৃণমূল সুপ্রিমো। তিনি জানিয়েছেন, কী অঙ্ক, কী পরিসংখ্যান, সেই হিসেব তাঁর জানা নেই। শুধু এটুকু জানেন বিজেপি ক্ষমতায় আসবে না। এই প্রসঙ্গে মিঠুন চক্রবর্তীকে প্রশ্ন করা হলে তিনি পাল্টা দাবি করেন, তৃণমূলের একগুচ্ছ বিধায়ক বিজেপির সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন। মিঠুন বলেন, ‘চলুন একটি ব্রেকিং নিউজ দিচ্ছি। ২৮ জন বিধায়ক বিজেপির সঙ্গে ভাল সম্পর্কে আছেন। তার মধ্যে ২১ জন আমার সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ রেখেছেন।’ তাই ২০২৪ নিয়ে মমতা এমন দাবি করলেও বিশেষ চিন্তিত নন তিনি।
মিঠুনের এই মন্তব্য ঘিরে নানা জল্পনা শুরু হয়েছে। কিছুদিন আগেই মহারাষ্ট্রে উদ্ধব ঠাকরেকে সরিয়ে শিবসেনার বিদ্রোহী গোষ্ঠী বিজেপির সঙ্গে হাত মিলিয়ে সরকার গঠন করেছে। এরপর একাধিকবার বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে বলতে শোনা গিয়েছে, কে বলতে পারবে মহারাষ্ট্রের মতো সরকার ভাঙনের হাওয়া অন্য রাজ্যে প্রবেশ করবে না। মহারাষ্ট্র থেকে ঝাড়খণ্ড হয়ে সেই হাওয়া বাংলায় প্রবেশ করতেই পারে। ২০২৬ সালে নয়। ২০২৪ সালে তৃণমূল সরকারের পতন ঘটবে বলেও একাধিকবার মন্তব্য করেছেন তিনি। শুভেন্দুর এই মন্তব্যকে তৃণমূল গুরুত্ব দিতে না চাইলেও ২১ জুলাইয়ের সভায় প্রসঙ্গটি তোলেন স্বয়ং দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি অভিযোগ করেন, বাংলায় সরকার ফেলার চক্রান্ত করছে বিজেপি। তারপরই তাঁর হুঁশিয়ারি, “বাংলাকে ক্রস কোরো না। এখানে যে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার আছে না… বউত বঢ়িয়া হ্যায়।” রাজনীতির কারবারিরা বলছেন, রাজনৈতিক এই ঘটনাপ্রবাহে মিঠুনের এই মন্তব্য যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় আবার একাধিকবার বলেছেন, দরজা খুলে দিলে রাজ্য থেকে বিজেপিই উঠে যাবে। প্রশ্ন উঠছে, ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে কি ফের দলবদলের পালা শুরু হবে?
আজ পার্থ চট্টোপাধ্য়ায়ের গ্রেফতারি নিয়েও মুখ খুলেছেন মিঠুন চক্রবর্তী। তাঁর দাবি, কোনও প্রমাণ না থাকলে নিশ্চিন্তে ঘুমোতে পারেন অভিযুক্ত। কিন্তু প্রমাণ যদি পাওয়া যায়, তাহলে প্রধানমন্ত্রী কেন, খোদ প্রেসিডেন্টও বাঁচাতে পারবে না। তবে মন্ত্রীর কোনও ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে কথা বলতে চাননি তিনি।
একই সঙ্গে তিনি উল্লেখ করেছেন, বিজেপির সম্পর্কে যে ভাবমূর্তি তৈরি করা হয়েছে, তা আসলে ষড়যন্ত্র। সিবিআই বা ইডি যে আদতে বিজেপির সঙ্গে যুক্ত নয়, এ কথা সাফ জানিয়েছেন তিনি। এ দিন, রাজ্যে এসে বিজেপি বিধায়কদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন মিঠুন। শুভেন্দু অধিকারী সহ রাজ্য নেতৃত্বের অনুমতি পেয়েই এই বৈঠক করেছেন বলে জানান মিঠুন। কয়েকদিন আগেও কলকাতায় এসেছিলেন তিনি। গেরুয়া শিবিরের বিভিন্ন সূত্রের দাবি, আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনে মিঠুনকে প্রচারের ময়দানে নামানো হবে বলেই পরিকল্পনা করা হয়েছে।