Sheikh Hasina: কোন ‘ছাড়পত্রে’ ভারতে রয়েছেন হাসিনা?

Aug 25, 2024 | 10:15 PM

Sheikh Hasina: শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রিত্ব থেকে পদত্যাগ করে ভারতে আসার পর বাংলাদেশে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন হয়েছে। আর সেই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শেখ হাসিনার কূটনৈতিক পাসপোর্ট বাতিল করেছে। বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী আর কতদিন ভারতে থাকতে পারবেন, সেই নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।

Sheikh Hasina: কোন ছাড়পত্রে ভারতে রয়েছেন হাসিনা?
শেখ হাসিনা (ফাইল ফোটো)

Follow Us

কলকাতা: কোটা সংস্কার আন্দোলন। জুলাই মাসের শুরু থেকে যে আন্দোলন ঘিরে উত্তপ্ত বাংলাদেশ। প্রাণ হারিয়েছেন ৫০০-র বেশি মানুষ। আর সেই আন্দোলনের জেরেই গত ৫ অগস্ট বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রিত্ব থেকে পদত্যাগ করেন শেখ হাসিনা। আর ক্ষমতা ছেড়ে চলে আসেন ভারতে। এই মুহূর্তে ভারতেই রয়েছেন বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী। কোন ছাড়পত্রে তিনি ভারতে রয়েছেন? কূটনেতিক পাসপোর্টই কি হাসিনার সেই ছাড়পত্র? কী এই কূটনৈতিক পাসপোর্ট?

কী হয়েছিল ৫ অগস্ট?

কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে বাংলাদেশ তপ্ত। গত ৫ অগস্ট গণভবনের দিকে এগিয়ে আসতে থাকেন আন্দোলনকারীরা। প্রধানমন্ত্রিত্ব থেকে পদত্যাগ করে জাতির উদ্দেশে বক্তব্য রাখতে চেয়েছিলেন হাসিনা। কিন্তু, সেই সময় তিনি পাননি। তারপরই শেখ হাসিনা ও তাঁর বোন শেখ রেহানাকে সেখান থেকে নিয়ে রওনা দেয় বাংলাদেশ সেনার একটি বিমান। বোনের সঙ্গে ভারতে আসেন বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী। এই মুহূর্তে দিল্লির উপকণ্ঠে রয়েছেন তিনি।

এই খবরটিও পড়ুন

দেশ ছেড়ে যাওয়ার সময় হাসিনার পাশে রেহানা

শেখ হাসিনার ভারতে আসা নিয়ে কী জানায় বিদেশমন্ত্রক-

হাসিনা ভারতে আসার পর বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর সংসদে জানান, ভারত সরকারের কাছে সাময়িকভাবে ভারতে আসার অনুমোদন চেয়েছিলেন শেখ হাসিনা। এবং কেন্দ্র সবুজ সংকেত দেওয়ার পরই তিনি ভারতে আসেন। পরে বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়ালে জানান, খুব স্বল্প সময়ের নোটিসে হাসিনার ভারতে আসার বিষয়টি অনুমোদন করা হয়েছিল। হাসিনার পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়েও ভারতের কিছু জানানোর নেই বলে মন্তব্য করেছিলেন বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্র। ভারতে হাসিনা কি কূটনৈতিক পাসপোর্টে রয়েছেন? এই নিয়ে নয়াদিল্লির তরফে স্পষ্ট করে কিছু বলা হয়নি।

কূটনৈতিক পাসপোর্ট কী?

যেকোনও দুই দেশের চুক্তি অনুযায়ী, কূটনৈতিক পাসপোর্টধারীদের আলাদা মর্যাদা দেওয়া হয়। কূটনৈতিক পাসপোর্টধারীরা একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক দিন বিনা ভিসায় অন্য দেশটিতে থাকতে পারেন। বাংলাদেশের সঙ্গেও ভারতের কূটনৈতিক পাসপোর্ট নিয়ে চুক্তি রয়েছে। নয়াদিল্লি-ঢাকা চুক্তি অনুযায়ী কূটনৈতিক বা সরকারি পাসপোর্ট থাকলে বাংলাদেশের কোনও নাগরিক ৪৫ দিন ভিসা ছাড়াই ভারতে অবস্থান করতে পারেন। ২০১৮ সালে শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদী সরকার এই বিষয়ে এক ‘সংশোধিত ভ্রমণ ব্যবস্থা’ চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল। শেখ হাসিনার কূটনৈতিক পাসপোর্ট রয়েছে। সেক্ষেত্রে এই পাসপোর্টের কারণেই ৪৫ দিন ভারতে থাকতে পারেন তিনি।

ভগ্নহৃদয়ে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা

বাংলাদেশ ছাড়াও একাধিক দেশের সঙ্গে কূটনৈতিক পাসপোর্ট নিয়ে চুক্তি রয়েছে ভারতের। কোনও দেশের কূটনৈতিক পাসপোর্ট নিয়ে কেউ ৬০ দিন ভারতে থাকতে পারেন। কোনও দেশের নাগরিক কূটনৈতিক পাসপোর্টে ভারতে ৩০ দিন থাকতে পারেন। শুধুমাত্র কূটনৈতিক পাসপোর্ট নিয়ে ভারতের সঙ্গে ৩৪টি দেশের চুক্তি রয়েছে। সুইৎজারল্যান্ড, সুইডেনের মতো দেশের নাগরিকদের কূটনৈতিক পাসপোর্ট থাকলে ভিসা ছাড়াই ভারতে ৯০ দিন থাকতে পারবেন। আবার উজবেকিস্তানের নাগরিকরা কূটনৈতিক পাসপোর্ট নিয়ে ভারতে ৬০ দিন থাকতে পারেন। ইরানের ক্ষেত্রে তা ৩০ দিন।

কোন কোন দেশের নাগরিকরা পাসপোর্ট ও ভিসা ছাড়াই আসতে পারেন ভারতে-

দুই দেশের নাগরিকরা পাসপোর্ট ও ভিসা ছাড়াই আসতে পারেন ভারত। দেশ দুটি হল ভুটান ও নেপাল। এই দুই দেশের নাগরিক যতদিন খুশি ভারতে থাকতে এবং কাজ করতে পারেন। তবে ওইসব দেশের নাগরিকরা চিন, হংকং, ম্যাকাও কিংবা পাকিস্তান হয়ে ভারতে ঢুকতে পারবেন না।

হাসিনার কূটনৈতিক পাসপোর্ট বাতিল বাংলাদেশের-

হাসিনা প্রধানমন্ত্রিত্ব থেকে পদত্যাগ করে ভারতে আসার পর বাংলাদেশে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন হয়েছে। আর সেই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শেখ হাসিনার কূটনৈতিক পাসপোর্ট বাতিল করেছে। শুধু হাসিনা নয়, তাঁর মন্ত্রিসভায় থাকা সমস্ত মন্ত্রী ও প্রাক্তন সাংসদদেরও কূটনৈতিক পাসপোর্ট বাতিল করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। ফলে কূটনৈতিক পাসপোর্ট বাতিল হওয়ায় হাসিনার ভারতে থাকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

আবার বাংলাদেশে হাসিনার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা দায়ের হয়েছে। হত্যার অভিযোগের পাশাপাশি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগেও হয়েছে মামলা। হাসিনার দল আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপি চাইছে, হাসিনাকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে এনে তাঁর বিচার হোক।

কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে উত্তপ্ত হয়েছিল বাংলাদেশ

কোন ইমিগ্রেশন স্ট্যাটাসে হাসিনা ভারতে রয়েছেন, তা নয়াদিল্লির তরফে যদিও জানানো হয়নি। তবে বিদেশমন্ত্রক সূত্রে খবর, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে হাসিনার যে কূটনৈতিক পাসপোর্ট ছিল, তা বৈধ। আর সেই পাসপোর্ট অনুসারেই ভিসা ছাড়াই ভারতে ৪৫ দিন থাকতে পারেন হাসিনা। ভারতের এক্ষেত্রে কোনও ব্যবস্থা নেওয়ার প্রয়োজন নেই। হাসিনার বোন শেখ রেহানার অবশ্য এমন কোনও সমস্যা নেই। তাঁর ব্রিটেনের পাসপোর্ট রয়েছে। ভিসা অন অ্যারাইভেলে তিনি যতদিন খুশি ভারতে থাকতে পারেন। বিবিসি বাংলা জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রিত্ব ছেড়ে হাসিনা যখন ভারতে পাড়ি দেন, তখন তাঁর কূটনৈতিক পাসপোর্ট বাতিল করা হয়নি। দিন তিনেক আগে মহম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার হাসিনার কূটনৈতিক পাসপোর্ট বাতিল করেছেন। এবার কী হবে? এই বিষয়ে ‘বিবিসি বাংলা’-র এক প্রতিবেদনে দিল্লির এক শীর্ষস্থানীয় কর্তাকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, সেটাও কোনও বড় সমস্যা হবে না। কারণ এই ধরনের পরিস্থিতিতে ভারতের ‘প্ল্যান বি’ বা ‘প্ল্যান সি’ প্রস্তুত থাকে।

১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান খুন হওয়ার পর ভারতে আশ্রয় নিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। সেই সময়ও তাঁর সঙ্গে ছিলেন বোন শেখ রেহানা। প্রায় ৬ বছর এ দেশে ছিলেন তাঁরা। ৪৯ বছর পর ফের ভারতই হয়েছে হাসিনার আশ্রয়স্থল। কিন্তু, নানা জটিলতা কাটিয়ে তিনি কতদিন ভারতে থাকেন, সেটাই এখন প্রশ্ন।

আরও খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Tv9 বাংলা অ্যাপ (Android/ iOs)

Next Article