কলকাতা: নিয়োগ বেনিয়মে ফের ধাক্কা রাজ্যের। প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় সিবিআই তদন্ত বহাল রাখল হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ।
বিচারপতি সুব্রত তালুকদার ও বিচারপতি লপিতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চ প্রথমিক মামলায় বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের সিঙ্গল বেঞ্চের রায় বহাল রাখল। হাইকোর্ট এদিন স্পষ্ট করে দিয়েছে, সিবিআই তদন্তই চলবে। তবে এক্ষেত্রে উল্লেখ্য, এদিন ডিভিশন বেঞ্চ সিঙ্গল বেঞ্চের নির্দেশের সঙ্গে একটি বিষয় যোগ করেছে। ডিভিশন বেঞ্চ স্পষ্ট করেছে, সিঙ্গল বেঞ্চের নজরদারিতে চলবে সিবিআই তদন্ত। আর্থিক বেনিয়ম হয়েছে কি না, তা দেখা হবে। একক বেঞ্চের নজরদারিতে চলবে তদন্ত। বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় রিপোর্ট তলব করবেন। মানিক ভট্টাচার্যকে সরিয়ে দেওয়ার নির্দেশকে সমর্থন করছে ডিভিশন বেঞ্চ।
ডিভিশন বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ
এদিনের সওয়াল জবাবের সময় ডিভিশন বেঞ্চ স্পষ্ট করে দেয়, ২০১৪ সালে টেটের যাবতীয় সমস্যা সঠিকভাবে তুলে ধরেছিল বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের সিঙ্গল বেঞ্চ। অতিরিক্ত ১ নম্বর দেওয়া সংক্রান্ত যে অভিযোগটি মামলাকারীদের তরফে করা হয়েছিল, তার প্রেক্ষিতে যাবতীয় নথি, রেকর্ড, ডাটা দিতে ব্যর্থ হয়েছে বোর্ড। এদিন ডিভিশন বেঞ্চে সেই বিষয়টিও উল্লেখ করা হয়।
প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রার্থীদের এই অতিরিক্ত নম্বর দেওয়া হয় বলে সিঙ্গল বেঞ্চে ব্যখ্যা দিয়েছিল বোর্ড। কিন্তু ওয়েমার শিট দিতে ব্যর্থ হয়েছিন। সিঙ্গল বেঞ্চে সম্পূর্ণ মেধাতালিকা ও ওয়েমার শিট দিতে পারেনি বোর্ড। আর সে কারণে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিল সিঙ্গল বেঞ্চ। আর এক্ষেত্রে সিঙ্গল বেঞ্চের রায় যে একেবারে যথার্থ, তা স্পষ্ট করে জানিয়ে দেয়
ডিভিশন বেঞ্চ।
এদিনও সওয়াল জবাবের সময়ে ডিভিশন বেঞ্চ বলেন, ২৬৯ প্রার্থী যাঁরা চাকরি পেয়েছিলেন, তাঁদের চাকরির শুরুটাই যে ‘ফ্রড’ এটা অস্বীকার করা যায় না। অনেকে পরীক্ষা না দিয়েই চাকরি পেয়েছেন, অনেক মিডলম্যান টাকা দিয়ে চাকরি পেয়েছেন- এই সমস্ত বিষয়গুলো এদিন ডিভিশন বেঞ্চে আলোচিত হয়। যতক্ষণ না এই সংক্রান্ত তদন্তের রিপোর্ট আসছে, ততক্ষণ তাঁদের চাকরিতে পুনর্বহাল নয় বলেই আদালত স্পষ্ট জানিয়ে দেয়।
একনজরে ডিভিশন বেঞ্চের রায়
১. প্রাথমিকে দুর্নীতি মামলায় সিঙ্গল বেঞ্চের রায় বহাল হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের।
২. প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি পদ থেকে মানিক ভট্টাচার্যকে অপসারণের নির্দেশ বহাল।
৩. নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় সিবিআই তদন্তই বহাল।
৪. আদালতের নজরদারিতে সিবিআই তদন্ত চলবে। রিপোর্ট জমা দিতে হবে একক বেঞ্চেই।
৫. ২৬৯ এর চাকরি পুনর্বহাল নয়।
শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলার প্রেক্ষাপট…
শিক্ষক নিয়োগ মামলায় বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে গিয়েছিল রাজ্য, প্রাথমিক শিক্ষা পর্যদ। মামলা করেছিলেন পর্ষদের অপসারিত সভাপতি মানিক ভট্টাচার্যও। বিচারপতি সুব্রত তালুকদারের ডিভিশন বেঞ্চে শুনানি শেষ হলেও, এত দিন রায় ঘোষণা স্থগিত ছিল।
প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সিবিআই তদন্তের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে ডিভিশন বেঞ্চের দ্বারস্থ হয় প্রাথমিক বোর্ড, মানিক ভট্টাচার্য সহ একাধিক পক্ষ। সেই মামলাতেই সিঙ্গল বেঞ্চের রায়কে মান্যতা দিল ডিভিশন বেঞ্চ।
প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই লুকিয়ে নিয়োগ করা হয়েছিল বলে অভিযোগ ওঠে। এমনকি ভুল প্রশ্নে ১ নম্বরও বেছে বেছে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। তাপস ঘোষ নামে এক ব্যক্তি এই অভিযোগ তুলে মামলা দায়ের করেন। তাঁর অভিযোগ ছিল, শাসকদলের নেতামন্ত্রীরাই তাঁদের নিজেদের কোটা অনুযায়ী চাকরি দিয়েছেন।
মামলাটি ওঠে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের সিঙ্গল বেঞ্চে। বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় নিয়োগে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি মানিক ভট্টাচার্যকে অপসারণ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। সিঙ্গল বেঞ্চের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে ডিভিশন বেঞ্চের দ্বারস্থ হন প্রাথমিক বোর্ড, মানিক ভট্টাচার্য সহ একাধিক পক্ষ।