আরজি কর মামলার রায় ঘোষণা। সঞ্জয়ের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দিলেন বিচারক অনির্বাণ দাস। জানানো হয়েছে, ৬৪, ৬৬ ও ১০৩ নম্বর ধারায় দোষী সাব্যস্ত হলেও এগুলি বিরল ঘটনা নয়।
সঞ্জয় রায়ের সাজা ঘোষণা আর কিছুক্ষণের অপেক্ষা। রায় ঘোষণা করবেন বিচারক অনির্বাণ দাস। ঠিক ২ টো ৪৫ মিনিটে ২১০ নম্বর আদালত কক্ষে প্রবেশ করলেন বিচারক।
‘আমায় রায় দিতে একটু কাজ করতে হবে। ২.৪৫ এ আবার আসুন এখন ঘর ফাঁকা করে দিন।’ এ কথা বলে ২১০ নম্বর রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন বিচারক অনির্বাণ দাস।
সঞ্জয়ের আইনজীবী এদিন দাবি করেন, বিভিন্ন আদালতে মৃত্যুদণ্ড সমালোচিত হয়েছে। তাই অলটারনেটিভ শাস্তি দেওয়া হোক বলে দাবি করেন তিনি। তিলোত্তমার আইনজীবী বলেন, সিভিক ভলেন্টিয়ার ছিল। এটা নিয়ে কেউ প্রশ্ন তোলেনি। তাই সর্বোচ্চ সাজা চাই। একাধিক জায়গায় শীর্ষ আদালতে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
বিচারক অনির্বাণ দাস বলেন, ‘হ্যাঁ সেটা দেখেছি। বিভিন্ন কারণ হতে পারে। কিন্তু মৃত্যুদণ্ড হয়েছে।’
সঞ্জয়ের আর এক আইনজীবী কবিতা বলেন, “পুরোটা শেষ হল না। একাধিক প্রশ্ন আছে।
বিচারক বলেন, “আপনি তো আপনার আর এক আইনজীবীর বিরোধী বক্তব্য রাখছেন।”
বিচারক: সঞ্জয় রায় আপনাকে কাল বলেছিলাম যে চার্জ আনা হয়েছে, সেই ধর্ষণ ও মৃত্যুর অভিযোগ প্রমাণিত। ৬৪ ধারা অনুযায়ী আজীবন কারাবাস। মৃত্যুর জন্য ফাঁসি হতে পারে। এই শাস্তির বিষয়ে আপনার কী বক্তব্য?
সঞ্জয়: মাইক নিয়ে বলল, ‘আমি করিনি। রেপ আর মার্ডার পুলিশ সব দেখেছে। এত কিছু নষ্ট হয়েছে বলে শুনেছি। রুদ্রাক্ষের মালা কি নষ্ট হত না?’
সাইন করাচ্ছে, লেখাচ্ছে, যা বলছে করছি। বেহালায় নিয়ে না গিয়ে কমান্ডে মেডিক্যাল টেস্ট কেন? আমাকে ফাঁসানো হয়েছে।’
বিচারক: কিন্তু আপনাকে তিন ঘণ্টা সময় দিয়েছি। যা প্রমাণ এসেছে। কী হয়েছে, আপনার থেকে ভাল আর কেউ জানে না। যা এসেছে এরপর আমরা আর কিছু করতে পারি না। যেটা মনে হয়েছে, সেটা সঠিক।
সঞ্জয়: আজ শুধু শাস্তি কী জানতে চাই।
বিচারক: বাড়িতে কে কে আছে?
সঞ্জয়: মা।
বিচারক: বাড়ির কেউ যোগাযোগ করেছে আপনার সঙ্গে?
সঞ্জয়: না কেউ করেনি।
বিচারক: আর কিছু জানাতে চান?
সঞ্জয়: না, আমায় দোষী করা হয়েছে স্যার।
কাঠগড়ায় মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে আছেন সঞ্জয়। সিবিআই বলছে, ‘আমরা চাই সর্বোচ্চ সাজা। ডিউটিরত চিকিৎসকের উপর এভাবে নির্যাতন বিরল ধর্ষণের উদাহরণ।’
প্রবল ভিড় সরিয়ে কোনওক্রমে সঞ্জয় রাইকে কোর্টরুমে নিয়ে যাওয়া হল। পরণে সেই একই গ্রে-কমলা হুডি। এই পোশাক পরেই শনিবার আদালতে গিয়েছিলেন তিনি। সেদিন তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। আজ সেই একই পোশাক পরে হাজির হয়েছেন সঞ্জয়। রায় ঘোষণা আগে তাঁর কথা শোনা হবে।
গত শনিবার ২১০ নম্বর রুমে বসেই দোষী সাব্যস্ত করা হয় সঞ্জয় রাইকে। সোমবার সাজা ঘোষণা হবে। সকালেই আদালতে পৌঁছেছেন তিলোত্তমার বাবা মা। এদিন আদালত কক্ষে ঢুকেই বিচারক বলেন, ‘বাবা মা কোথায়?’ তাঁদের উদ্দেশে হাত জোড় করে তিনি বলেন, ‘বসুন’।
দুপুর ১২টা ৩৪ মিনিটে কোর্টরুমে ঢুকলেন বিচারক, ডাক পড়ল সঞ্জয়ের। কিন্তু এত ভিড়ের মধ্যে সঞ্জয় রাইকে ঢোকানোই কার্যত অসম্ভব হয়ে যাচ্ছে। ডাকা হচ্ছে আরও বেশি পুলিশ।
আর মাত্র কয়েক মিনিটের অপেক্ষা। ২১০ নম্বর রুমে বাড়ছে ভিড়। আদালত চত্বরেও প্রচুর মানুষের ভিড়। তাঁরা প্রশ্ন তুলছেন, সঞ্জয় যদি ‘কান’ হয়, তাহলে ‘মাথা’ কোথায়? তিলোত্তমার মৃত্যুর বিচার চেয়ে সকাল থেকে অপেক্ষায় মানুষ। কোর্টরুমের একটি অংশ লাল দড়ি দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে, যেখান দিয়ে সঞ্জয়ের প্রবেশ করার কথা।
গত শনিবার কোর্টের বাইরে প্রচুর মানুষের জমায়েত দেখা গিয়েছে। উপস্থিত ছিলেন জুনিয়র ডাক্তাররা। তবে সোমবার চিকিৎসকদের জমায়েতে না করেছে পুলিশ। কোর্ট চত্বর নিরাপত্তা বলয়ে মুড়ে ফেলা হয়েছে।
প্রিজন ভ্যানে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে আরজি কর মামলায় দোষী সঞ্জয় রাইকে। নিরাপত্তা ব্যবস্থা চোখে পড়ার মতো। আশপাশে কোনও গাড়িকে যেতে দেওয়া হচ্ছে না। কলকাতা পুলিশ কনভয় তৈরি করে নিয়ে যাচ্ছে সঞ্জয়ের গাড়ি। দু পাশে পুলিশের গাড়ি ও মাঝে রয়েছে প্রিজন ভ্যান। জেল থেকে শিয়ালদহ কোর্টে যাওয়ার রাস্তার সব সিগন্যাল খুলে দেওয়া হয়েছে।
শিয়ালদহ কোর্ট চত্বর এবং আশপাশের এলাকায় সোমবার সকাল থেকেই কড়া পুলিশি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। কোর্ট চত্বরের সামনে করা হয়ছে ত্রিস্তরীয় গার্ডরেলের ব্যবস্থা। নিরাপত্তার তত্ত্বাবধানে থাকছেন দু’জন ডিসি পদমর্যাদার অফিসার। এছাড়াও থাকছেন পাঁচজন এসি, ১৪ জন ইন্সপেক্টর, ৩১ জন এসআই, ৩৯ জন এএসআই, ২৯৯ জন কনস্টেবল ও ৮০ জন মহিলা পুলিশ।
প্রেসিডেন্সি জেলের বাইরে ত্রিস্তরীয় নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হয়েছে। পার্শ্ববর্তী এলাকা গার্ডরেল দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয়েছে। লোহার জাল দেওয়া গাড়িতে নিয়ে যাওয়া হবে সঞ্জয়কে। মোতায়েন করা হয়েছে র্যাফ।
বিএনএস ৬৪, ৬৬ ও ১০৩ (১) নম্বর ধারায় দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে সঞ্জয় রাইকে। এর মধ্যে একটি ধারায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, একটি ধারায় আমৃত্যু কারাদণ্ড ও একটি ধারায় মৃত্যুদণ্ড হতে পারে সর্বোচ্চ সাজা।
সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টায় সাজা ঘোষণা করবেন বিচারক। আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের খুন ও ধর্ষণের মামলায় অভিযুক্ত সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রাইকে দোষী সাব্যস্ত করেছে শিয়ালদহের অতিরিক্ত দায়রা আদালত। বিচারক বলেছেন, সোমবার সাজা ঘোষণার আগে সঞ্জয়ের বক্তব্য শুনবেন তিনি।