কলকাতা : রাজ্যে চাকরির পরীক্ষা বা নিয়োগ পদ্ধতি নিয়ে চর্চা চলছে বিস্তর। নিয়োগের পদ্ধতি নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। এরই মধ্যে নিয়ম বদলের কথা বলছে স্কুল সার্ভিস কমিশন। কমিশন সুপারিশ করেছে, নিয়োগের পরীক্ষায় এবার ‘অ্যাকাডেমিক স্কোর’কে গুরুত্ব না দিয়ে জোর দিতে হবে ইন্টারভিউ বা অ্যাপটিটিউট টেস্টের ওপর। কিন্তু তাতে কি দুর্নীতির কলঙ্ক ঘুচবে এসএসসি-র? নাকি স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে আরও একবার?
আসলে ‘অ্যাকাডেমিক স্কোর’ নিয়ে বিতর্ক বহুদিনের। মূলত যে কোনও নিয়োগের পরীক্ষায় মাধ্যমিক বা উচ্চমাধ্যমিকের প্রাপ্ত নম্বরের ওপর ভিত্তি করে প্রত্যেক প্রার্থীর জন্য কিছু নম্বর বরাদ্দ করা হয়। তবে দেখা গিয়েছে, প্রশ্নের ধরন বদলানোয় আগের থেকে প্রাপ্ত নম্বরও বাড়ছে মাধ্যমিক বা উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের। তাই চাকরির পরীক্ষায় অপেক্ষাকৃত আগে পাশ করা প্রার্থীরা পিছিয়ে পড়ছে, এমন প্রশ্ন উঠেছে অনেক ক্ষেত্রে। এই পরিস্থিতিতে এসএসসি-র নয়া সুপারিশ নিয়ে কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা?
চাকরি প্রার্থী অর্ণব ঘোষকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘এটায় হয়ত ভাল হবে। তবে এই মুহূর্তে যে বিষয়গুলোয় দুর্নীতি হয়েছে, সেগুলো এড়িয়ে যাওয়ার জন্য আবার নতুন কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে না তো?’ তাঁর মতে, অ্যাপটিটিউট বা ইন্টারভিউর ক্ষেত্রে আগামিদিনে কত নম্বর কীভাবে ভাগ করতে চলেছে এসএসসি, সেটার ওপরেই নির্ভর করবে আদৌ ভাল হল কি না।
কমিশনের এই চিন্তাভাবনাকে সমর্থন করেছেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ নৃসিংহ প্রসাদ ভাদুড়ী। তাঁর স্পষ্ট বক্তব্য, স্কুল, কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে সিলেবাসের মান এতই খারাপ যে সেই পড়াশোনা দিয়ে চাকরি প্রার্থীর মূল্যায়ন করা ঠিক হবে না। তিনি বলেন, ‘আমি এটা সমর্থন করি। সিলেবাসের যা মান তাতে, যারা পাশ করে তারা আদতে কিছুই শেখে না। তাই এটা যদি হয় আমি খুব খুশি হব।’ শিক্ষাবিদ আরও উল্লেখ করেন, গ্রামাঞ্চলে শ্রমিক বা কৃষক শ্রেণির মানুষেরা অনেক সময় কাজের চাপে পড়াশোনা করে উঠতে পারেন না। তাই চাকরির জন্য ইন্টারভিউতে গুরুত্ব দেওয়া হলে তাঁদের জন্যও ভাল হবে।
তবে শিক্ষাবিদ দেবাশিস সরকারের মতে, ইন্টারভিউর ক্ষেত্রে ম্যানিপুলেশনের কাজটা আরও সহজ হয়। সাম্প্রতিক দুর্নীতির অভিযোগকে ‘দুর্ভাগ্যজনক অভিজ্ঞতা’ বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ইন্টারভিউতে জোর দিলে দুর্নীতির অভিযোগ আরও বেড়ে যাবে। ওএমআর আর ইন্টারভিউ যদি নিয়োগের মূল ভিত্তি হয়, তাহলে একটা ছেলে বা মেয়ে সারাজীবন ধরে যা পড়াশোনা করল, তার কোনও মূল্যই থাকবে না। অ্যাকাডেমিল স্কোরে একটা ওয়েটেজ অবশ্যই রাখা উচিত বলে মনে করেন তিনি।
আপাতত একগুচ্ছ সুপারিশ শিক্ষা দফতরে পাঠিয়েছে স্কুল সার্ভিস কমিশন। আগামিদিনে সব পরীক্ষার ক্ষেত্রে সেগুলো কার্যকর করার কথা বলা হয়েছে। আর সে ক্ষেত্রে আবার মানুষের এসএসসি-র ওপর আস্থা ফিরবে কি না, সেটা সময়ই বলবে।