Medicine Crisis: সরকারি হাসপাতালে ওষুধে রাশ নাকি উৎসব করতে গিয়ে স্বাস্থ্যে আপোস! খোঁচা বিরোধীদের
Health News: একাধিক চিকিৎসক সংগঠনের তরফে প্রশ্ন তোলা হয়েছে, যে সরকার ক্লাবের পিছনে মোটা অঙ্কের টাকা অনুদান দিতে পারে।
কলকাতা: পুঁজি নেই। তাই টাকা বাঁচাতে কোপ পড়ল সরকারি হাসপাতালের বিনামূল্যে ওষুধ সরবরাহে। এই তালিকায় বেশ কিছু দামী ওষুধ এবং জীবনদায়ী ওষুধের নামও রয়েছে। সরকারের এই সিদ্ধান্ত ঘিরে ইতিমধ্যেই দানা বেঁধেছে বিতর্ক। একাধিক চিকিৎসক সংগঠনের তরফে প্রশ্ন তোলা হয়েছে, যে সরকার ক্লাবের পিছনে মোটা অঙ্কের টাকা অনুদান দিতে পারে। সে সরকার কী ভাবে মানুষের চিকিৎসার অধিকারে কোপ দিয়ে টাকা বাঁচাতে পারে? যদিও স্বাস্থ্য দফতরের তরফে বলা হচ্ছে, টাকার অপচয় রুখতে এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। অপ্রয়োজনীয় দামী ওষুধ দেওয়া বন্ধ করা হয়েছে। স্বাস্থ্য কর্তাদের বক্তব্য একই রোগের চিকিৎসায় একাধিক মলিকিউলের ওষুধ থাকে। দামী মলিউল কমিয়ে এ ক্ষেত্রে কম দামের ওষুধ রাখা হচ্ছে। তবে এর জন্য ওষুধের কার্যকারিতায় কোনও রকম বদল আসেনি।
চিকিৎসক সংগঠনের নেতা মানস গুমটা সরকারি হাসপাতালের এই সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা করে বলেন, “এর থেকে দুর্ভাগ্যজনক আর কী হতে পারে। ৩৫ হাজার ক্লাব অনুদান পাবে প্রতি বছর। সেখানে কোনও কাটছাঁট হবে না। দুর্গাপুজোর সময় অনুদান পাবে ক্লাবগুলো ফূর্তি করার জন্য। সেখানেও হাত পড়বে না। একমাত্র কাট হবে মানুষের স্বাস্থ্য সম্পর্কিত বিষয়ে। ওষুধপত্র সরবরাহ যেখানে। এ ক্ষেত্রে নানা যুক্তি দেখানো হচ্ছে।”
যদিও এ প্রসঙ্গে তৃণমূলের চিকিৎসক সাংসদ শান্তনু সেন বলেন, “অত্যন্ত দুর্ভাগ্যের সঙ্গে এবং দুঃখের সঙ্গে আমি জানাতে বাধ্য হচ্ছি কিছু মানুষ একটা অসাধু চক্রের সঙ্গে যুক্ত থেকে যা প্রয়োজন নেই সেইরকম অতিরিক্ত ওষুধ লেখেন। আমাদের মেডিসিনের একটা তালিকা আছে। তাঁরা ইচ্ছা করে সেই ওষুধ না লিখে সেই কমপোজিশনেরই আরেকটা দামী ব্র্যান্ড লেখা নিয়ে রোগীর পরিবারকে বিপাকে ফেলেন। রোগীর আত্মীয়রা হকচকিয়ে যান। আমরা এটাও দেখেছি প্রাইভেট চেম্বারে রোগী দেখার পরে সেই ডাক্তারবাবু তাঁর পেশেন্টকে ধরে রাখার জন্য সরকারি একটা জায়গা থেকে প্রেসক্রিপশন করিয়ে সেগুলো হাসপাতালে বিনামূল্যে আনতে পাঠিয়ে দিচ্ছে। অবশ্যই সেটা সবাই নয়। এক শ্রেণির মানুষ করছে। যার ফলে এরকম পরিস্থিতি।”
এ প্রসঙ্গে মানস গুমটার অবশ্য বক্তব্য, “শান্তনু সেন বলছেন, নানা সমস্যা আছে। তা প্রশাসনে যারা আছেন তারা তা দেখেন না কেন? আর তা না হলে হাসপাতালগুলোতে যে ‘বিনামূল্যে’ লেখা বড় বড় ফ্লেক্স হোর্ডিং আছে সেগুলো তুলে দেন না কেন।” বিনামূল্যে ওষুধ সরবরাহের জন্য বছরে সরকারের বরাদ্দ ৭০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে এমন পাঁচটি ওষুধ রয়েছে যার জন্য বছরে খরচ ৬০ কোটি টাকা। সে ক্ষেত্রে কম দামের ওষুধ দিয়ে রাজ্যের সাশ্রয় ১২ কোটি টাকা পর্যন্ত হতে পারে।
যে সমস্ত ওষুধের ক্ষেত্রে রাশ টানা হয়েছে তার তালিকায় রয়েছে ক্যানসার, ডায়াবেটিসের ওষুধ। অঙ্কোলজির ওষুধ সিসপ্লাটিন, এটোপোসাইড, সাইক্লোফসফামাইড, এনোক্সাপারিন, হাইড্রক্সিউরিয়ায় রাশ টানা হয়েছে। একই সঙ্গে ডায়াবেটিসের ওষুধের ক্ষেত্রে লিনাগ্লিপটিন ও ভিলডাগ্লিপটিনের বদলে টেনেলিগ্লিপটিনের মতো কম দামের ওষুধ দেওয়া হচ্ছে। এই নিয়েই উঠছে নানা প্রশ্ন।
চিকিৎসক বিজেপির অর্চনা মজুমদারের কথায়, “আমরা এখানকার মেডিকেল কলেজ থেকে পাশ করা। আমরা হাউজস্টাফশিপ করার সময় দেখেছি মানুষ বিনামূল্যে ওষুধ পেতেন। তখন কিন্তু কোনও কার্ড লাগত না। ন্যাশনাল হেলথ মিশনের কেন্দ্র সরকারের কাছ থেকে প্রতি বছর শতকরা ৭০০ কোটি টাকা আমাদের পশ্চিমবঙ্গের ভাগে আসে। এটা ৬০ শতাংশ ৪০ শতাংশের প্রকল্প। এই ৭০০ কোটি টাকার মধ্যে ওষুধ কেনা, রোগীর ন্যূনতম যে পরীক্ষানিরীক্ষা তার জন্য খরচ হওয়ার কথা। অথচ এখানে ওষুধ পাচ্ছেন না মানুষ। এদিকে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, দুয়ারে রেশন যে চলছে তার ফান্ড কোথা থেকে আসছে?”