কলকাতা: আজ বাংলা তো বটেই, গোটা বিশ্ব যাঁর দিকে তাকিয়ে ছিলেন, তিনি হলেন শিয়ালদহ আদালতের ফাস্ট জাজ অনির্বাণ দাস। সাম্প্রতিককালের এমন এক ঘটনা, যা গোটা বাংলাকে তো বটেই, ঘটনার ভয়াবহতা, নৃশংসতা নাড়িয়ে দিয়েছিল গোটা বিশ্বকে। নিজের কর্মস্থলে, হাসপাতালে নৃশংসভাবে খুন হতে হয়েছে এক চিকিৎসককে। তারপরও চলেছে যৌন নিগ্রহ! বিভৎস, নৃশংস, নক্কারজনক- কোনও বিশেষণেই যেন মাপা যায় না এই ঘটনাকে। সেই ঘটনার রায় যাঁর কলমের খোঁচায় বের হল তিনি বিচারক অনির্বাণ দাস। এই রায়ও তাঁর জীবনের একটা অন্যতম ‘মহার্ঘ’ রায় হয়ে থাকবে বলে মনে করছেন আইনজীবীদের একাংশ।
সিবিআই, তিলোত্তমার বাবা-মা থেকে শুরু করে সাধারণ নাগরিক সমাজ- সকলেই ভেবেছিলেন সঞ্জয় রাইয়ের ফাঁসির সাজাই হবে। সে পক্ষে সওয়ালও তুলেছিলেন। অন্তত শেষ কয়েক মাসে রাজ্যের তিনটি ধর্ষণ খুনের ঘটনায় পরপর ফাঁসির সাজা দিয়েছেন নিম্ন আদালতের বিচারক। বিচারক অনির্বাণ দাসের কলমের খোঁচাতেও এর আগে মৃত্য়ুদণ্ড পেয়েছে আসামী। তখন তিনি কর্মরত ছিলেন বারাসতে। মাদক কারবার সংক্রান্ত মামলায় এই রায় দেন। বিভিন্ন সময়ে বিচার করে তিনি অসংখ্য ফৌজদারি এবং দেওয়ানি মামলায় দোষীদের দণ্ড দিয়েছেন।
বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনে স্নাতক হওয়ার পর মুর্শিদাবাদে আইনজীবী হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন অনির্বাণ। বিচারক হন ১৯৯৯ সালে। এরপর তিনি কৃষ্ণনগরে দেওয়ানি বিচারক হিসাবে কর্মরত ছিলেন। বিধাননগরের অতিরিক্ত মুখ্য বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট (এসিজেএম) পদে দায়িত্ব সামলেছেন। ২০১১ সালে পদোন্নতি পেয়ে অতিরিক্ত জেলা এবং দায়রা বিচারক হন। ২০১৩ সালে জেলা বিচারক ক্যাডারের অন্তর্ভুক্ত হন তিনি। এরপর পুরুলিয়া জেলা থেকে শিয়ালদহে বদলি। কলকাতা হাই কোর্টের অন্যতম রেজিস্ট্রার হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। বছর দুয়েক ধরে শিয়ালদহ আদালতের অতিরিক্ত জেলা এবং দায়রা বিচারকের ভূমিকা পালন করছেন অনির্বাণ দাস।
আরজি কর মামলার মতো স্পর্শকাতর মামলা তাঁর এজলাসে আসে গত ১১ নভেম্বর। এই মামলার ‘চাপ’ এতটাই বেশি ছিল যে রায়দানের দিনও এক প্রস্থ সওয়াল জবাব চলে এজলাসে। টান টান উত্তেজনা। আইনজীবীদের একাংশ জানাচ্ছেন, সাধারণ সাজা ঘোষণার পর সাজাপ্রাপ্তের আবারও নিজের পক্ষে সওয়াল করার সুযোগের দৃষ্টান্ত নিতান্তই কম। কিন্তু এক্ষেত্রে রায় ঘোষণার দিনও সঞ্জয়কে আরও একবার বলার সুযোগ দিয়েছেন বিচারক। সওয়াল করেছেন সঞ্জয়ের আইনজীবী, সিবিআই-এর আইনজীবীও। বিচারকের সামনে সঞ্জয় বলার সুযোগ পেয়েছে, “স্যর, আপনি বিচারক। যে দোষটা আমি করিনি তার জন্য আমাকে জোর করে দোষী সাব্যস্ত করা হল।” সাধারণত, এ দৃষ্টান্ত এজলাসে কমই দেখা যায় বলে আইনজীবীদের একাংশ বলছেন। আর মানুষের এত আকাঙ্খার ‘চাপ’ সামলেও রায়দানের আগে বিচারক চেয়ে নেন চূড়ান্ত সময়। ‘বিরলতম’ নয় বলে সঞ্জয়কে ফাঁসি দেন না তিনি।