‘বিস্ফোরক ২১ পাতার চিঠি’ দিলেন সুদীপ্ত সেন, সারদাকাণ্ডে নয়া মোড়?

কুণালের দাবি, দীর্ঘদিন জেলবন্দি থেকে সুদীপ্ত সেন যে বিপর্যস্ত এই চিঠিতে সে কথাই ফুটে উঠেছে। একইসঙ্গে সুদীপ্ত সেন এটাও বুঝেছেন, এই ঘটনায় বহু ষড়যন্ত্রী প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। তাঁদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি।

'বিস্ফোরক ২১ পাতার চিঠি' দিলেন সুদীপ্ত সেন, সারদাকাণ্ডে নয়া মোড়?
ফাইল ছবি।
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Dec 26, 2020 | 5:15 PM

কলকাতা: একুশের বিধানসভা ভোটের আগে ফের জ্বলে উঠছে সারদা কাণ্ডের ছাই চাপা আগুন। প্রেসিডেন্সি জেল থেকে সারদা কর্তা সুদীপ্ত সেন নিজের বয়ান চিঠির আকারে পাঠিয়েছেন আদালতে। শনিবার ব্যাঙ্কশাল আদালত চত্বরে দাঁড়িয়ে এমনই বিস্ফোরক দাবি করলেন কুণাল ঘোষ। তৃণমূলের এই মুখপাত্র জানান, তাঁর কাছে সেই চিঠির সার্টিফায়েড কপিও রয়েছে।

সারদা কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত কুণাল ঘোষকে দীর্ঘদিন জেলে থাকতে হয়েছে। জেল থেকে বেরোনোর পর কুণাল বারবারই দাবি করেছেন, সারদা মামলার পিছনে গভীর ষড়যন্ত্র রয়েছে। বিভিন্ন রকম প্রভাব খাটিয়ে এই মামলা থেকে অনেকেই বাইরে রয়েছেন। এদিন কুণাল জানান, সুদীপ্ত সেনের লেখা ২১ পাতার চিঠির সংশায়িত নকল (‘সার্টিফায়েড কপি’) তিনি আদালতের কাছে আবেদন করে সংগ্রহ করেছেন। কুণালের বক্তব্য, এখানে সুদীপ্ত সেন নিজের হাতে সারদার সমস্ত ইতিহাস লিখেছেন। এর আগে ২০১৩ সালে সুদীপ্ত সেনের যে চিঠি সামনে আনা হয়েছিল সেটি কারা সারদা কর্তাকে দিয়ে লিখিয়েছিল, কারা বাইরে পাঠিয়েছিল, কারা প্লট সাজিয়েছিল সব কিছুরই উল্লেখ রয়েছে এই চিঠিতে।

ব্যাঙ্কশাল আদালত চত্বরে কুণাল ঘোষ।

আরও পড়ুন: সুনীল মণ্ডলের গাড়িতে হামলা, অমিত শাহকে রিপোর্ট রাজ্য বিজেপির

কুণাল বলেন, “এই সপ্তাহেই সারদা মামলার শুনানির দিন ছিল সিএমএম আদালতে। আইনজীবী অয়ন চক্রবর্তী দেখেন এই কেস রেকর্ডে একটি বিরাট চিঠি অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। প্রেসিডেন্সি জেলে বসে নিজের হাতে ২১ পাতার চিঠিটি লিখেছেন সারদার কর্ণধার সুদীপ্ত সেন। জেল কোড অনুযায়ী জেল সুপার চিঠিটি পাঠিয়ে দিয়েছেন আদালতে। সিএমএম কলকাতা সেটি গ্রহণ করে একটি নির্দেশনামা মারফৎ মামলার রেকর্ডে অন্তর্ভুক্তও করেছেন।”

কুণালের দাবি, দীর্ঘদিন জেলবন্দি থেকে সুদীপ্ত সেন যে বিপর্যস্ত এই চিঠিতে সে কথাই ফুটে উঠেছে। একইসঙ্গে সুদীপ্ত সেন এটাও বুঝেছেন, এই ঘটনায় বহু ষড়যন্ত্রী প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। তাঁদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি। সেই ক্ষোভ থেকেই সারদা বিপর্যয়ের কারণ সবিস্তারে এই চিঠিতে লিখেছেন সুদীপ্ত। চিঠিটির লেখা হয়েছে ভারতের রাষ্ট্রপতি, সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি, সিবিআই ডিরেক্টর, প্রধানমন্ত্রী, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী এবং সিএমএম কলকাতাকে। পূর্ণাঙ্গ তদন্তের দাবি জানিয়েছেন তিনি।

সারদা নিয়ে সুদীপ্ত সেনের বিস্ফোরক চিঠি সরাসরি আদালতে। পূর্ণাঙ্গ তদন্ত চাই।

এই সপ্তাহেই সারদা মামলার দিন ছিল সিএমএম…

Posted by Kunal Ghosh on Friday, December 25, 2020

কিন্তু এই চিঠিতে কোনও প্রভাবশালীর নাম রয়েছে কি না সে বিষয়ে এখনই স্পষ্ট করে কিছু বলতে চাইছেন না কুণাল। শুধু জল্পনা উস্কে জানিয়েছেন, “আমি এখনও পুরো কপি পড়িনি। এখনই নির্দিষ্ট কারও নাম বলব না।” প্রশ্ন, তা হলে কি এমন কোনও বা একাধিক নাম এ চিঠিতে উঠে আসতে পারে, যা সারদা মামলায় নতুন মোড় নিয়ে আসবে।

এদিন কুণাল ঘোষ তাঁর ফেসবুক প্রোফাইলে লিখেছেন, “আমার আইনজীবী অয়নের পর্যবেক্ষণ, সুদীপ্ত সেনের এই চিঠি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। তিনি এই মামলার মূল চরিত্র। বন্দি অবস্থা হলেও তিনি যখন নিজে হাতে চিঠি লিখে সরকারি পদ্ধতিতে আদালতকে কোনও বয়ান দিচ্ছেন, তার গুরুত্ব যথেষ্ট। তদন্তের পরবর্তী পর্যায়ে এই চিঠিকে গুরুত্ব দেওয়া দরকার। আরও বিশেষ তাৎপর্যের, ইতিমধ্যেই রাজ্য পুলিশ বা তদন্তকারী এজেন্সির খাতায় এমন অনেককে সাক্ষী দেখানো হচ্ছে বা দেখানোর চেষ্টা হচ্ছে, যাদের বিরুদ্ধেই মূল অভিযুক্ত সরাসরি অভিযোগ তুলছেন। ফলে এদের ভূমিকাও তদন্ত সাপেক্ষ। আমার কাছে এই মামলা জীবন মরণের লড়াই। মুখের হাসি অটুট রেখে বহু যন্ত্রণা চেপে আমি লড়াই করে যাচ্ছি। এই চিঠির প্রতিটি কথার যথাযথ তদন্ত ছাড়া যেন তদন্ত শেষ না হয়। সব ষড়যন্ত্রীকে গ্রেপ্তার করতে হবে।”

এই চিঠি ঘিরে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। সুদীপ্ত সেনের ২১ পাতার চিঠি একুশের বিধানসভা ভোটের আগে নতুন ‘বিস্ফোরণ’ ঘটায় কি না এখন সেটাই দেখার।