Weather Update: ‘ম্যানমেড’ গরম! দিনের চেয়ে ভয়ঙ্কর হতে চলেছে রাত, কেন জেনে নিন

Heat Wave: কলকাতার উদাহরণ দিয়েই শুরু করা যাক। আজ আলিপুরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২৯.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এপ্রিলের রাতে এত গরম শেষ বার ১৯৮৭ সালে সয়েছিল মহানগর। এতদিন সেটাই ছিল এপ্রিলে কলকাতার উষ্ণতম রাত। সেই রেকর্ড আজ ছুঁয়ে ফেলল আলিপুর।

Weather Update: 'ম্যানমেড' গরম! দিনের চেয়ে ভয়ঙ্কর হতে চলেছে রাত, কেন জেনে নিন
প্রতীকী ছবি।
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Apr 30, 2024 | 2:40 PM

দিনে তাপপ্রবাহ, রাতেও ছাড় নেই। গুমোট গরমে বরবাদ ঘুম! মৌসম ভবন আগেই সতর্ক করেছিল, এ বার সর্বনিম্ন তাপমাত্রাও বেলাগাম হবে। এপ্রিল-শেষে সেই পূর্বাভাসই একেবারে রূঢ় বাস্তব। বিশেষ করে কলকাতা ও উপকূলের জেলায়। রেকর্ডভাঙা গরম আলিপুর-দমদমে। ১০-২০ বছরের রেকর্ড নয়, ভেঙে চুরমার সর্বকালীন নজির।

কলকাতার উদাহরণ দিয়েই শুরু করা যাক। আজ আলিপুরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২৯.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এপ্রিলের রাতে এত গরম শেষ বার ১৯৮৭ সালে সয়েছিল মহানগর। এতদিন সেটাই ছিল এপ্রিলে কলকাতার উষ্ণতম রাত। সেই রেকর্ড আজ ছুঁয়ে ফেলল আলিপুর।

দমদমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা আরও বেশি, ৩০.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সর্বকালীন রেকর্ড। এপ্রিলের রাতে দমদমের পারদ এই প্রথম ৩০ ডিগ্রির ঘরে। ২০১৬ সালের ১১ এপ্রিল ২৯.৫ ডিগ্রিতে পৌঁছেছিল দমদমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। সেই নজির আজ থেকে দ্বিতীয় স্থানে চলে গেল!

ডায়মন্ড হারবারের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা দমদমের চেয়েও সামান্য বেশি, ৩০.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা চলতি সময়ের স্বাভাবিকের চেয়ে ৪ ডিগ্রি বেশি। হাওড়া, সল্টলেক, সব জায়গাতেই এক দশা। বলা ভালো, দুর্দশা!

রাতে এত গরম কেন?

কারণগুলিক দু’টো ভাগে ভাগ করা যায়। এক, প্রাকৃতিক। দুই, ম্যানমেড। প্রথমত, দিনের তাপমাত্রা অনেকটাই বেড়ে যাওয়ায় রাতে তাপমাত্রা খুব একটা কমতে পারছে না। দিনের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে ৬-৭ ডিগ্রি বেশি থাকছে। তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলছে সর্বনিম্ন তাপমাত্রাও। দ্বিতীয়ত, উপকূল ও উপকূল লাগোয়া জেলাগুলিতে সন্ধের পর থেকে জলীয় বাষ্প ঢুকছে। আকাশ একটু হলেও মেঘলা হয়ে থাকছে। ফলে দিনে যে তাপ ঢুকছে, সেটা পুরোপুরি বেরোতে পারছে না। তাছাড়া শুকনো বাতাসের চেয়ে জলীয় বাষ্পের তাপ ধরে রাখার ক্ষমতাও বেশি। এর পরও জুড়ছে ম্যানমেড কারণ।

শহর হিট আইল্যান্ডের চেহারা নিচ্ছে। অপরিকল্পিত নগরায়নের ঠেলায় সব বড় এবং ছোট শহর কংক্রিটের জঙ্গলে পরিণত। কংক্রিট তাপ শুষে রাখছে, ফলে দিন শেষ হলেও অনেকটা তাপ থেকে যাচ্ছে আমাদের আশপাশেই। গাছপালা কম, জলাশয় কম, তারও নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। সঙ্গে বিপদ বাড়াচ্ছে হাজারে হাজারে এয়ার কন্ডিশনড যন্ত্রের ব্যবহার। এসি ঘর ঠান্ডা করছে, কিন্তু গরম হাওয়া বাইরে বের করে দিচ্ছে। সবমিলিয়ে রাতে তাপমুক্তির তেমন সুযোগই পাচ্ছে না নগর, মহানগর।

বীরভূম, পুরুলিয়ার উদাহরণ টানলেই বিষয়টা আরও স্পষ্ট হয়ে যাবে। দুই জেলাতেই আজ সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২৫ ডিগ্রির ঘরে। অর্থাৎ, কলকাতা-দমদমের চেয়ে ৫ ডিগ্রি কম। একে পশ্চিমের জেলায় উপকূলের মতো মেঘের বালাই নেই। দ্বিতীয়ত, গ্রামীণ জেলায় হিট আইল্যান্ডের কুপ্রভাব এখনও তেমন নয়। তাই পুরুলিয়ার পারদ সর্বোচ্চ ৪২ ডিগ্রি থেকে সর্বনিম্ন ২৫ ডিগ্রিতে নেমে যেতে পারলেও, কলকাতা-দমদমে সেটা একেবারেই হচ্ছে না।

আবহবিদরা বলছেন, দিনে-দিনে নগরে রাত আরও গুমোট হবে। গত বছর জুন, জুলাই, অগাস্টে রেকর্ডভাঙা উষ্ণতম রাত পেয়েছিল কলকাতা। এ বার গ্রীষ্মের শুরুতেই বেনজির গরম। শুধু তাই নয়, এপ্রিলের উষ্ণতম তালিকার প্রথম দশে চলতি এপ্রিলের একাধিক দিন। একাধিক দিন গত বছরের এপ্রিলেরও। ইঙ্গিত স্পষ্ট, রাতে ক্রমশ না ফেরার দেশে চলে যাচ্ছে ‘অচ্ছে দিন’!