কলকাতা: পুজোর মধ্যেই বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস। মৌসম ভবন সর্বশেষ আপডেটে যা জানিয়েছে, তার নির্যাস, নবমী-নিশি পেরোনোর আগেই বঙ্গোপসাগরে জন্ম হয়ে যাবে ঘূর্ণিঝড়ের। নাম হবে হামুন। ইরানের দেওয়া নাম। ইতিমধ্যেই ঘনীভূত অতি গভীর নিম্নচাপ। আরও শক্তি বাড়ার সম্ভাবনা।
তবে কি পুজোর বাংলায় দুর্যোগ?
না, দুর্যোগের কোনও ভয় নেই। ভারী বৃষ্টির আশঙ্কাও নেই। ইতিমধ্যেই মেঘ ঢুকতে শুরু করেছে। নবমী থেকে একাদশী, বিক্ষিপ্ত বৃষ্টি হতে পারে। কোথাও হালকা, কোথাও মাঝারি। দশমীতে উপকূলে বইতে পারে দমকা বাতাসও। বাতাসের গতিবেগ হতে পারে ঘণ্টায় ২০-৩০ কিলোমিটার। তাতে আর যাই হোক, পুজো মাটি হওয়ার আশঙ্কা নেই।
কারণ, দেশের মূল ভূখণ্ডের উপর থাকা উচ্চচাপ অক্ষরেখা ঘূর্ণিঝড়কে বাংলায় ঢুকতে দেবে না। তাই হামুন যাবে বাংলাদেশে। ২৫ অক্টোবর, একাদশীর বিকেলে, চট্টগ্রাম লাগোয়া বাংলাদেশ উপকূলে ল্যান্ডফল হওয়ার পূর্বাভাস। তার আগেই ঘূর্ণিঝড় থেকে কিছু শক্তি হারিয়ে ফের অতি গভীর নিম্নচাপে পরিণত হবে। ফলে বাংলাদেশেও বড়সড় ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা কম।
ঠিক যেন গত বছরের পুনরাবৃত্তি। গত বছর এই সময় কালীপুজো পড়েছিল। ২৪ অক্টোবর রাতে বাংলাদেশ উপকূলে, বরিশালের কাছে আছড়ে পড়ে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং। সিত্রাংও শুরুতে অন্ধ্র-ওড়িশা উপকূলের দিকে এগোচ্ছিল, পরে বাংলা-বাংলাদেশ উপকূলের দিকে এগোয়। শেষমেশ বাংলাদেশে চলে যাওয়ায় দুর্যোগের মুখে পড়েনি কালীপুজোর বাংলা। আকাশ মেঘলা হয়ে যায় আর ইতিউতি বৃষ্টি! এর বেশি প্রভাব পড়েনি।
মৌসম ভবনের পূর্বাঞ্চলীয় প্রধান সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন ”ঘূর্ণিঝড় বাংলা থেকে কতটা দূর থেকে যাচ্ছে, দুর্যোগের তীব্রতা তার উপরই নির্ভর করে। এই ধরনের ক্ষেত্রে আর কোথাও না হোক, সুন্দরবন নিয়ে চিন্তা থেকে যায়। ২০১৯ সালের ৯ নভেম্বর জি প্লটে আছড়ে পড়েছিল ঘূর্ণিঝড় বুলবুল। সুন্দরবনে অনেক ক্ষতি হয়। কিন্তু কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গে বিশেষ প্রভাব পড়েনি। এ বার ঘূর্ণিঝড় বেশ খানিকটা ডান দিকে সরে বাংলাদেশে যাবে। তার উপর সমুদ্রেই দুর্বল হয়ে যেতে পারে। তাই বড় দুর্যোগের ভয় দেখা যাচ্ছে না।”
দুর্বল হওয়ার অন্যতম কারণ, স্থলভাগের শুকনো বাতাস। ঘূর্ণিঝড়ের শক্তি বাড়ানোর জন্য সমুদ্রের গরম জল দরকার হয়। সেই শর্ত অনুকূল। বঙ্গোপসাগরে জলের তাপমাত্রা ২৯-৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের আশপাশে রয়েছে। যা প্রয়োজনের তুলনায় অনেকটাই বেশি। ফলে শক্তি খানিকটা বাড়বে। কিন্তু উপকূলের কাছে এলে মূল ভূখণ্ডের শুকনো বাতাস হামুনের কাঠামো ভেঙে দেবে। তাই বুলবুল তো বটেই, সিত্রাংয়ের মতো শক্তিশালী হওয়ারও ভয় নেই এ বার।