Weather Update: আজ জুনের ‘উষ্ণতম রাত’ কাটাল কলকাতাবাসী, ফেল বাঁকুড়াও

Kaamalesh Chowdhury | Edited By: সোমনাথ মিত্র

Jun 08, 2023 | 1:01 PM

Weather Update: বুধবার কলকাতার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৮.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সর্বনিম্ন নামল ৩১.২ ডিগ্রিতে। যা চলতি সময়ের স্বাভাবিকের চেয়ে ৪ ডিগ্রি বেশি। রাতে এত গরম কেন?

Weather Update: আজ জুনের উষ্ণতম রাত কাটাল কলকাতাবাসী, ফেল বাঁকুড়াও
প্রতীকী ছবি।

Follow Us

মান্না দে গেয়েছিলেন, গভীর হয়েছে রাত পৃথিবী ঘুমায়, হয়তো তুমিও গেছ ঘুমায়ে, শুধু আমার চোখে ঘুম আসে না, কেন ঘুম আসে না! কেন আসে না ঘুম? গীতিকার যে কারণই লিখুন না কেন, এখন জনতার সমোচ্চারিত জবাব একটাই, অসহ্য গরম। গুমোট রাত এমনিতেই বাঙালির ঘুম কেড়ে নিচ্ছিল, বৃহস্পতিবার ভোররাত আরও অসহনীয়! সাধারণ নিয়মে দিনে যতই তাপমাত্রা বাড়ুক, রাতে পারদ নামে। কিন্তু আজ কলকাতার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা আটকে গেল ৩১.২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে, আর নামল না। আবহাওয়া দফতরের নথি ঘেঁটে দেখা যাচ্ছে, আজই জুনের উষ্ণতম রাত কাটিয়ে ফেলল কলকাতা। গোটা বছরের নিরিখে ধরলে মহানগরের তৃতীয় উষ্ণতম রাত। গরমের যা মতিগতি, সেই রেকর্ডও না ভেঙে যায়!

চলতি মরসুমে দেশে, বিশেষ করে উত্তর-পশ্চিম ভারতে গরমের দাপট বেশ কম। দিল্লি, রাজস্থান, পঞ্জাব, হরিয়ানায় বেশ আরামের গ্রীষ্ম এ বার। অথচ উল্টো চিত্র বাংলায়। সেই এপ্রিল থেকে আরাম কাড়ছে খ্যাপা প্রকৃতি। তাপপ্রবাহ শুধু পশ্চিমাঞ্চলেই নয়, থাবা বসিয়েছিল কলকাতাতেও। ৫ দিন আলিপুরের তাপমাত্রা ছিল ৪০ ডিগ্রির উপরে। সর্বোচ্চ তাপমাত্রার নিরিখে চলতি শতাব্দীর পঞ্চম উষ্ণতম এপ্রিল কাটায় কলকাতা। অবশ্য শুধু দিনের তাপমাত্রা বললে ছবিটা স্পষ্ট হয় না। রাতেও রেকর্ড গরম। ১৫, ১৬, ২১ এপ্রিল, তিন দিন কলকাতার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২৯.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রেকর্ডের খাতায় আগে শুধু ১৯৮৭। আর ০.১ ডিগ্রি তাপমাত্রা বাড়লেই, কলকাতায় এপ্রিলের উষ্ণতম রাতও ২০২৩-এর খাতাতেই লেখা হয়ে যেত। 

মে মাসেও একাধিক দিন ৩০ ডিগ্রির চৌকাঠে দাঁড়িয়েছিল কলকাতার রাতের তাপমাত্রা। জুনের শুরুতে তিরিশ পার। বৃহস্পতিবার একত্রিশ পার করে একেবারে নজিরভাঙা গরম। শুধু তাই নয়, জুনের উষ্ণতম রাতের তালিকায় প্রথম ছয়ে তিন নজিরই চলতি মাসের। গোটা বছরের তথ্য দেখলে আগে মাত্র দুটো রাত। ২০০৮ সালের ১০ মার্চ আলিপুরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৩৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দ্বিতীয় স্থানে ১৯৮২ সালের ১২ মে। তাপমাত্রা ছিল ৩১.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। জুনের রেকর্ড ছিল ১৯৯৮ সালের দখলে। সেই রেকর্ড ভেঙে গেল। মানে ২৫ বছর পর জুনে এত গরম সইতে হল নগরবাসীকে। অবশ্য শুধু প্রকৃতি নয়, গরমে কষ্ট বাড়িয়েছে লোডশেডিংও। বিছানায় ঘেমেনেয়ে একশা মানুষ!

বুধবার কলকাতার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৮.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সর্বনিম্ন নামল ৩১.২ ডিগ্রিতে। যা চলতি সময়ের স্বাভাবিকের চেয়ে ৪ ডিগ্রি বেশি। রাতে এত গরম কেন?

আবহবিদরা একাধিক যুক্তি তুলে ধরছেন। মৌসম ভবনের পূর্বাঞ্চলীয় প্রধান সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, ”বুধবার দুপুরের পর থেকেই আকাশ মেঘলা হয়ে যায়। রাতভর মেঘলা ছিল কলকাতার আকাশ। ফলে দিনে রোদের যে তাপ ঢুকেছে, সেই তাপ রাতে বেরোতে পারেনি। তাছাড়া, শুকনো বাতাসের চেয়ে জলীয় বাষ্প বেশি তাপ ধরে রাখতে পারে। তাই তাপমাত্রাও নামতে পারেনি। এই সমস্যাটা উপকূলীয় এলাকায় বেশি।” সম্ভবত সেই কারণেই বাঁকুড়া, বীরভূম, এমনকী রাজস্থানের মরুশহরের চেয়েও রাতে বেশি গরম কলকাতায়। যেমন, আজ বাঁকুড়ার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ২৭.৯ ডিগ্রি, শ্রীনিকেতনে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ২৭.৬ ডিগ্রি। জয়সলমির, যোধপুর, বিকানির, তিন মরুশহরেই সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ২৯ ডিগ্রির নীচে।

অবশ্য এর পিছনে মানুষের কলকাঠিও কম নয়। দেখা যাচ্ছে, শহরাঞ্চলে শুধু রোদের তাপই নয়, কৃত্রিম ভাবে সৃষ্ট তাপও পরিমণ্ডলে থেকে যাচ্ছে, বেরোতে পারছে না। যেমন এসির গরম হাওয়া। শহরে চাষের জমি নেই, গাছপালা কম, জলাশয়ের অভাব। অথচ কংক্রিটের জঙ্গল আর বিভিন্ন ইমারতি পরিকাঠামো তাপ শুষে নিচ্ছে। এর ফলে শহর হয়ে উঠছে দহন দ্বীপ। বিজ্ঞানীদের পরিভাষায়, আর্বান হিট আইল্যান্ড। ২০২১ সালের ষষ্ঠ রিপোর্টে রাষ্ট্রপুঞ্জের আইপিসিসি স্পষ্ট বলেছিল, গরমে আরও সেদ্ধ হবে কলকাতা, আরও বাড়বে উষ্ণ রাতের সংখ্যা। সতর্কবার্তা যে কথার কথা ছিল না, ২০২৩ সেটাই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে যাচ্ছে। 

আবহাওয়া দফতর বুধবার বলেছে, রবিবার থেকে হাওয়া বদলাতে পারে। আপাতত দিন গোনা ছাড়া আর উপায় নেই।

Next Article