Mamata Banerjee Speech Highlights: ভোট ঘোষণার সময় থেকে কতজনের মৃত্যু? জানালেন মমতা
Mamata Banerjee: মমতা বললেন, 'কো-অর্ডিনেশন কমিটির অনেক সরকারি কর্মচারী রয়েছেন। তাঁরা অনেক জায়গায় ব্যালট পেপারে সই করেননি। ফলে আমাদের অনেক ব্যালট বাতিল হয়েছে। দোষটা কার? তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে না কেন?'
কলকাতা: পঞ্চায়েত ভোটের গণনা এখনও পুরোপুরি শেষ হয়নি। তবে এখনও পর্যন্ত যা অবস্থা, তাতে তৃণমূলের জয়জয়াকার নিশ্চিত হয়ে গিয়েছে। আরও একবার গ্রাম বাংলার দখল থাকছে ঘাসফুল শিবিরের হাতেই। আর এরপরই বুধবার বিকেলে সাংবাদিক বৈঠকে বসলেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পঞ্চায়েতের প্রচারে বেরিয়ে পায়ে চোট পাওয়ার পর থেকে বাড়িতেই ছিলেন তিনি। পায়ে চোটের পর এই প্রথম সাংবাদিক বৈঠকে বসলেন তিনি। কী কী বললেন তৃণমূল সুপ্রিমো –
- অনেকে আমাদের বিরোধিতা করেও সাহায্য করেছেন, সমালোচনা করে আমাদের আত্মনির্ভরতা বাড়িয়ে দিয়েছেন। – মমতা
- যতদিন বিরোধী দলে ছিলাম শুধু মার খেয়েছি, আর লাঞ্ছনা সহ্য করেছি। সরকারে আসার পর, ওদিকে ২০১৪ সালে বিজেপি সরকারের আসার পর থেকে তাদের উগ্র বিদ্বেষমূলক মনোভাব। সৌজন্যতা মলিন করে দিয়েছে। কথায় ভদ্রতা নেই। শুধু মিথ্যা আর কুৎসা করে গিয়েছে। – মমতা
- আমি সর্ব ধর্ম, সর্ব বর্ণ, দরিদ্র সমাজের মানুষের ও শান্তি-সম্প্রীতির প্রতিনিধিত্ব করি। আজও জাগো বাংলায় আমার একটা কবিতা প্রকাশ হয়েছে ‘শান্তি’। কবিতা বিতান বইতেও দেখবেন বেশিরভাগ সময়ে আমি শান্তি-সংহতি নিয়ে কলম ধরেছি। -মমতা
- পঞ্চায়েত ভোট শেষ হয়ে গিয়েছে। আমার যদি সত্যিই কোনও অপরাধ থাকে, যে শাস্তি মানুষ আমাকে দেবে, মাথা পেতে নেব। দাম্ভিকতা কোনও রাজনৈতিক দলের উদ্ধত্য হতে পারে না। মানুষের আশীর্বাদ-শুভেচ্ছা-দোয়া পেলে আরও নম্র হতে হয়।
- আমরা মা দূর্গা, মা কালীর সাধক। আবার গান্ধীজি আমাদের জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের পথপ্রদর্শক। আবার নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর মতো অ্যাগ্রেসিভও কখনও কখনও। প্রয়োজন মতো। – মমতা
- ত্রিপুরায় দেখুন ৯৩ শতাংশ আসনে ভোট করতে দেওয়া হয়নি। যতবার আমাদের টিম গিয়েছে, হামলা করা হয়েছে। অসমে আমাদের টিম গিয়েছে, সেখানেও হামলা করা হয়েছে। – মমতা
- আমরা সরকারের থেকে আবেদন জানিয়েছিলাম। আমাদের ৩২ হাজার ছেলেমেয়ের চাকরি ফিরিয়ে দিয়েছে। যদি কোথাও কোনও ভুল-ভ্রান্তি হয়… মনে রাখবেন গণতন্ত্র সবাইকে নিয়ে। – মমতা
- এখানে অনেকে কাজ করেন। কো-অর্ডিনেশন কমিটির অনেক সরকারি কর্মচারী রয়েছেন। তাঁরা অনেক জায়গায় ব্যালট পেপারে সই করেননি। ফলে আমাদের অনেক ব্যালট বাতিল হয়েছে। দোষটা কার? তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে না কেন? – মমতা
- গতকাল আমরা কিন্তু ঘুমোইনি। আমি আর আমার তৃণমূল পরিবার ভোর ৬টা পর্যন্ত পাহারা দিয়েছে। আমার মুখ্যসচিব, পুলিশ, জেলাশাসকরাও পাহারা দিয়েছেন। অভিষেক রাত ৩টের সময় আমাকে বলছে, দিদি তুমি শুতে যাও এবার। – মমতা
- আমার মাথায় যখন মারা হয়েছিল, বিধানসভা মুলতুবি হয়ে গিয়েছিল। আর ওরা বলছে, মাথায় ফেট্টি বেঁধে নির্বাচনের সময় ঘোরে। ওরা জানে কতটা গুরুতর আঘাত ছিল? ব্যক্তিগত লড়াই থাকতে পারে, কিন্তু একজন মানুষ অসুস্থ হলে অন্যজন আরোগ্য কামনা করে। – মমতা
- ভাঙড়ে গণ্ডগোল হল কীভাবে কাল রাতে? কেন্দ্রীয় বাহিনী তো ছিল। কেন অ্যাডিশনাল পুলিশ সুপারকে গুলি করা হল? তৃণমূল জিতে গিয়েছিল। ওরা (বিরোধীরা) হঠাৎ রাতে বাইরে থেকে গুন্ডা নিয়ে আসে। একটা স্কুলের মধ্যে বোমা মজুত করে রেখেছিল। সেখানে তো কেন্দ্রীয় বাহিনী ছিল। তৃণমূলের কেউ অন্যায় করলে, তাঁকেও গ্রেফতার করলে আমি খুশি হতাম। – মমতা
- আরাবুল তো হেরে গিয়েছে। কিন্তু আরাবুলের সিট হারা নয়। কিন্তু তাও আমি কিছু বলিনি শান্তির স্বার্থে। কারণ, একটা-দুটো সিট আমার কাছে কোনও ব্যাপার নয়। – মমতা
- ৭০০-র বেশি এলাকার পুনর্নির্বাচন হয়েছে। এমনকী আমাদের এলাকাতেও আমরা পুনর্নির্বাচন করিয়ে দিয়েছি। কারণ, সেটা ভুল ছিল বলে। – মমতা
- একমাত্র ভাঙড়ের গণনার দিনের ঘটনা ছাড়া আর কোথাও কোনও ঘটনা ঘটেনি। – মমতা
- যাঁরা গণতন্ত্রকে হত্যা করে, তাঁদের রাজনীতি করার অধিকার নেই। আমরা করি না। আমি এতদিন পর মুখ খুলছি। এতদিন সহ্য করে গিয়েছি। কিন্তু সহ্যেরও তো লিমিট আছে। লেবু কচলাতে কচলাতে তেতো হয়ে যায়। – মমতা
- আমি তো গিনিপিগ নই। আপনারা আমাকে গিনিপিগ করে ফেলতে পারেন না। – মমতা
- আমি দুঃখিত কিছু বিক্ষিপ্ত ঘটনায় কয়েকজন মারা গিয়েছেন। যে জায়গাগুলিতে ঘটনা ঘটেছে, সেগুলি আজ থেকে নয়… গত ২৫-৩০ বছর ধরে ওই জায়গাগুলিতেই গন্ডগোল হয়। ডোমকলে গন্ডগোল হয়েছে, আমাদের কর্মীরা মারা গিয়েছে। জিতেছে কে? বিরোধীরা। ভাঙড়ে গন্ডগোল হয়েছে। বিরোধীরা করেছে। আমরা তো ওখানে জিতিনি। আমাদের সিটটা ছিনিয়ে নিয়েছে। – মমতা
- ৭১ হাজার বুথে ভোট হয়েছে। ঘটনা ঘটেছে বড়জোড় ৬০ টি বুথে। বিক্ষিপ্ত এই ঘটনাগুলি ঘটানো হয়েছে। যারা ব্যালটে জল ঢেলে দিয়েছে, তারা কেন গ্রেফতার হবে না? কেন জেলে যাবে না? – মমতা
- আমি দুঃখিত। রাম, বাম, শ্যাম – এরা তিনজন, প্লাস আরও একজন জোট বেঁধে মহাঘোঁট বেঁধেছিল। এদের এসব প্ল্যানিং ছিল গন্ডগোলের। আদালত আমাদের যা নির্দেশ দিয়েছে সব মেনেছি। – মমতা
- মনিপুর দুই মাস ধরে জ্বলছে। কত লোক মারা গিয়েছে জানা নেই। কোথায় যাচ্ছে ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি? উত্তর প্রদেশে এনআরসি নিয়ে এত অত্যাচার হল, কোথায় ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি? আমাদের এখানে ১৫৪ টা কমিটি এসেছে। ওটা বিজেপির প্রভোকেশন কমিটি। এটাকে আমি ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি বলি না। – মমতা
- যাঁরা মারা গিয়েছেন তাঁদের পরিবারের জন্য আমি সমবেদনা জানাই। আমি সমব্যথী। তাঁরা পরিস্থিতির শিকার হয়েছেন। পুলিশকে আমি ফ্রি হ্যান্ড দিচ্ছি। যারা এসবের মধ্যে যুক্ত, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন। আমাদের সরকার ঠিক করছে যাঁরা মারা গিয়েছেন, তাঁদের পরিবারকে দুই লক্ষ টাকা করে দেওয়া হবে। নির্বাচন ঘোষণার সময় থেকে ১৯ জন মারা গিয়েছেন। তাদের মধ্যে ১০-১২ জন আমাদেরই লোক। বেশিরভাগই আমাদের লোক মারা গিয়েছে। ভোটের দিনেও সাতজন মারা গিয়েছেন। সেখানেও চারজন আমাদের লোক। এদের প্রত্যেকের পরিবারকে স্পেশাল হোম গার্ডের চাকরি আমরা দেব। এখানে কোনও সিপিএম-কংগ্রেস-তৃণমূল-বিজেপি হবে না। প্রত্যেক পরিবারকেই আমরা সাহায্য করব। – মমতা
- পূর্ব বর্ধমান, পশ্চিম বর্ধমান, হাওড়া, হুগলি, বীরভূম, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার, দক্ষিণ দিনাজপুর ও উত্তর ২৪ পরগনায় কোনও ঘটনা ঘটেনি। কোচবিহারের শীতলকুচিতে একটি ঘটনা ঘটেছে। উত্তর দিনাজপুরে একটি ঘটনা ঘটেছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার রায়দিঘিতে আমাদের একজন নেতাকে খুন করে দিয়েছে। বাসন্তীতে একটি খুন হয়েছে। ভাঙড়ের ঘটনা আপনাদের সকলের জানা। ঘটনা আসলে ঘটেছে দুটি জেলায় – মুর্শিদাবাদ ও মালদায়। আর তার জন্য সব জেলাকে বদনাম করা হচ্ছে। – মমতা
- মুর্শিদাবাদের ঘটনা কে ঘটিয়েছে আপনারা জানেন। যিনি নিজেকে বলেন দেশের নেতা, বড় হিরো। আসলে তিনি বড় জিরো। জিরো না হলে, রাম-বাম-শ্যাম আর অত্যাচারের ধাম… ওনার আবার এক বন্ধু আছেন। তিনি আবার চশমা পরে, বিজ্ঞর মতো বুদ্ধবাবু হওয়ার চেষ্টা করেন। – মমতা
- আমি এখানকার সিপিএম ও কংগ্রেসকে দেখে আমার দয়া হয়। আমি ওদের নিয়ে কিছু বলতে চাই না। কারণ, জাতীয় স্তরে একটা জোটের কথা চলছে। তাঁদের ভেবে কথা বলা উচিত। নাহলে, আপনি এখানে আমায় গালাগালি দেবেন, আর ওখানে আমি আপনাকে পুজোর নৈবেদ্য সাজিয়ে দেব! এটা ভাবা উচিত। – মমতা
- আমাদের বাংলা এক। বঙ্গভঙ্গ হতে আমরা দেব না। বিজেপির কোনও প্ররোচনার কাছে দয়া করে মাথা নত করবেন না। – মমতা।
- নবজোয়ার কর্মসূচিতে যদি ঘরে ঘরে শান্তির বার্তা না দেওয়া হত, তাহলে এইসব ঘটনা আরও বেশি হত। আমি চেষ্টা করব, যেটুকু ঘটেছে, আগামী দিনে সেটুকুও যাতে না ঘটে। এখনও চেষ্টা চলছে। ওরা প্রথম থেকেই চাইছিল না ভোট হোক। এখনও ছুটছে মহাঘোঁটে। যখন হেরেছেন, হারটা মেনে নিন না। মানুষের কাছে বলুন, আপনারা কৃতজ্ঞ। – মমতা
- ২১ জুলাই আমরা সেলিব্রেশন করব না। ওই দিনটিকে আমরা শ্রদ্ধা দিবস হিসেব পালন করব। প্রশাসনিক দিক থেকে, ৯০ শতাংশ সফল হয়েছি আমরা। ১০ শতাংশ যদি কোথাও ভুল-ত্রুটি থেকে যায়, আইন আইনের পথে চলবে। যেই খুন করে থাকুক, কাউকেই ছাড়া হবে না। – মমতা