Afternoon Tea: ব্রিটিশ রাজ-পরিবারে কেমনভাবে খাওয়া হয় দুপুরের চা, জেনে নিন তার সাত-সতেরো

Snacks Time: বিকেলের চা পান করার স্টাইল এক প্রকার, আবার স্ন্যাকস হিসেবে যেগুলি পরিবেশন করা হয়েছে, তার প্রত্যেকটি চেখে দেখারও আলাদা স্টাইল রয়েছে।

Afternoon Tea: ব্রিটিশ রাজ-পরিবারে কেমনভাবে খাওয়া হয় দুপুরের চা, জেনে নিন তার সাত-সতেরো
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Jun 09, 2022 | 10:38 PM

ব্রিটিশরা (British) এদেশ শাসন করে যেটিকু শুষে নিয়ে গিয়েছে, তার অর্ধেকের কম হলেও বেশ কিছু জিনিস কিন্তু ভারতবাসীদের শিখিয়ে দিয়ে গিয়েছে। সকালে উঠে চা খাওয়ার চল থাকলেও বিকেলেও স্ন্যাকসের (Snacks Time) সঙ্গে চা-কফি খাওয়া যায়, তা কোন ভারতীয় জানতেন! বিকেলের চা ব্রিটিশদের কাছে পরম ঐতিহ্যের একটি পানীয় বলা যেতে পারে। শুধু ব্রিটিশ বললে ভুল হবে, ব্রিটিশ রাজা-রাণীদের (British Royals Family) থেকেই এই চা পান করার চল শুরু হয়। সেই চলই এখন ভারতীয়রা আয়ত্তে এনে ক্যাফে বা নামী-দামী রেস্তোরাঁয় বসে, সামনে কফি বা চায়ের কাপ রেখে আড্ডা দেন। ব্রিটিশরা তল্পিতল্পা গুটিয়ে দেশ ছাড়ার পর ভারতীয়দের মধ্যে পশ্চিমী কিছু অভ্যাস ধীরে ধীরে সাবালক হতে থাকে। অন্যদিকে এই সন্ধ্যাকালীন চায়ে চুমুক দেওয়ার রেওয়াজটা প্রাচীন ঐতিহ্য মেনে এখনও বিদ্যমান বাকিংহাম প্যালেসে।

১৬৬০ সালে, রাজা দ্বিতীয় চার্লস ও তাঁর স্ত্রী পর্তুগিজ ইনফ্যান্টা ক্যাথরিন ডি ব্রাগানজা প্রথম ইংল্যান্ডে চা পানের প্রথা শুরু করেন। তবে ১৮৪০ সালে এই বিকেলের চায়ের ধারণাটি বেডফোর্ডের সপ্তম ডাচেস আনা মারিয়া রাসেল প্রবর্তন করেছিলেন। তিনি আবার রাণী ভিক্টোরিয়ার রেডচেম্বারের মহিলাদের মধ্যে একজন সদস্যা ছিলেন।

কীভাবে শুরু হয়েছিল? একদিন বিকেল চারটে নাগাদ ডাচেস অত্যন্ত ক্ষুধার্ত হয়ে পড়েছিলেন। রাজাদের ব্যাপার। তাই খাবার পরিবেশন করার নিয়ম যেমন কড়া, তেমন খাবার পরিবেশন করার সময়জ্ঞানও ছিল বিশাল। ঘড়ির একটা কাঁটার এদিক ওদিক হলে চলবে না। কিন্তু সেদিন ডাচেসের এত জোড় খিদে পেয়ে গিয়েছিল যে তা চেপে রাখা অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছিল। দুপুরের খাবার পর সেই রাত ৮টায় রাতের খাবার পরিবেশন করা হত। কিন্ত রাত ৮টা পর্যন্ত পেটের খিদে চেপে রাখা যায় না। তাই সন্ধ্যের সময় চা, ব্রেড, মাখন, কেকের ট্রে সাজিয়ে আনার হুকুম দিয়েছিলেন। আর এটাই প্রতিদিনের নিয়ম হয়ে দাঁড়ায়। শুধু নিজেই নয়, বন্ধুবান্ধবদের আমন্ত্রণ জানিয়ে সন্ধ্যেবেলায় চলত টি-ব্রেক। এইভাবেই এই টি-টাইম একপ্রকার সামাজিক স্বীকৃতি পায়। বিকেল চারটে থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত চা পরিবেশন করার নিয়ম।

রয়্যাল বিশেষজ্ঞদের মতে, বিকেলের চায়ের সঙ্গে আবার তিন স্তরের কেক স্ট্যান্ড করে পরিবেশন করা হয়। সঙ্গে স্যান্ডউইচ, কুকিজও থাকত। এছাড়া চায়ের সঙ্গে টা হিসেবে বিভিন্ন ধরনের কেকও পরিবেশন করা হত। ঐতিহ্যবাহী বিকেলের চায়ে স্যান্ডউইচ, ক্রিম, জ্যাম ও কেকের সঙ্গে মিষ্টি পেস্ট্রি পরিবেশন করা হত বলে জানিয়েছেন। রয়্যাল বাটলার গ্রান্ট হ্যারল্ড একটি সাক্ষাতকারে জানিয়েছিলেন, রাণী এলিজাবেথ প্রতিদিন বিকেলের চা পান করেন। আর চা অত্যন্ত সুস্বাদু ও স্বাস্থ্যকরও বটে। রাণীর পছন্দের চা হল অসম ও আর্ল গ্রে চা। রাজপ্রাসাদের প্রাক্তন শেফ ড্যারেন ম্যাকগ্র্যাডি আরও জানিয়েছিলেন, রাণী চায়ের সঙ্গে টা হিসেবে শসা, ডিম ও স্মোকড স্যামন দিয়ে তৈরি ফিঙ্গার স্যান্ডউইচ খেতে পছন্দ করেন।

বাকিংহামের রাজপ্রাসাদের অন্দরমহলের খবর জানার কৌতূহলীর সংখ্যা নেহাত কম হবে না। রাজা-রাণীদের দৈনন্দির জীবন কেমন কাটে, তারা কী কী খেতে পছন্দ করে, তাদের প্রিয় জিনিস কোনগুলি, পোশাকের ডিজাইনার কেমন, সকাল থেকে প্রাসাদে তারা কী কী করেন, তা নিয়ে আগ্রহের শেষ নেই। রাজারাণীদের ব্যাপার সাধারণের থেকে চারগুণ আলাদা তো হবেই। বিকেলের চা ভারতীয়দের কাছে নতুন হতে পারে, তবে টি টাইম নিয়ে রয়্যাল পরিবারের নানান অভিজ্ঞতা রয়েছে। যেগুলি একসময় একটি জনপ্রিয় সমবাদমাধ্যমের সাক্ষাতকারে দ্য কেয়ার্ন কালেকশনের স্টোক প্লেস হোটেলের চা বিশেষজ্ঞ মার্ক হেপটন বেশ কিছু ঘটনা শেয়ার করেছিলেন।

সাক্ষাত্‍কারে তিনি বলেছিলেন, বিকেলের চায়ের সঙ্গে টা হিসেবে প্রচুর সুস্বাদু ও মিষ্টি জাতীয় খাবার পরিবেশন করা হত। প্রত্যেকটির স্বাদ নেওয়ার জন্য প্রথমে স্যান্ডউইচ, তারপর অন্যান্য বাকিগুলি ট্রাই করতেন। শুধু সুরুত্‍ সুরুত্‍ করে চা পান করলেই তো চলবে না। সবকিছুতেই রয়েছে রাজকীয়ের ছোঁয়া। বিকেলের চা পান করার স্টাইল এক প্রকার, আবার স্ন্যাকস হিসেবে যেগুলি পরিবেশন করা হয়েছে, তার প্রত্যেকটি চেখে দেখারও আলাদা স্টাইল রয়েছে। যেমন একটি স্কোন খেতে হলেও তার জন্য রয়েছে আলাদা নিয়ম। রয়্যাল এক্সপার্টদের মতে, বিকেলের চায়ের সঙ্গে পরিবেশন করা স্কোন সবসম. প্রথমে সেটি দুভাগে ভাগ করে নেওয়া হত, তারপর তাতে জ্য়াম দিয়ে খাওয়া হত। ছোট ছোট টুকরো মুখে নিয়ে ধীরে ধীরে চিবানো নিয়ম। মনে করুন. আপনার চা খাওয়া হয়ে গিয়েছে, এবার আপনি টেবিল থেকে উঠবেন। তাহলে সটান চেয়ার টেনে সরিয়ে উঠে চলে গেলে হবে না। চেয়ার ছেড়ে যাওয়ার প্রয়োজন হলে সবসময় ন্যাপকিনটি টেবিলের উপর রেখে উঠতে হয়। চা পরিবেশন ও চা পান করা শেষ না হওয়া পর্যন্ত কখনওই টেবিলে ন্যাপকিন রাখা চলবে না।

তবে রাণীর কিছু নিজস্ব নিয়ম রয়েছে। এমন ঘটনা খুবই বিরল। সাধারণ তো দূর, কোনও রাজারাও এই কাজ করেননি কখনও। ওই রয়্যাল এক্সপার্ট জানিয়েছেন, রাণী চা খাওয়ার সময় নিজের আঙুল দিয়ে কেক বা স্যান্ডউইচ খেতে পছন্দ করেন। রাজকীয় ব্যাপারগুলি সাধারণের মাথায় অনেকসময় ঢোকে না। কিন্ত এখানে এই বিষয়টি একদম আমজনতা স্টাইলের মত। সাধারণত, সুন্দর সুন্দর ছুরি,কাঁটা চামচ নেওার পরিবর্তে রাণী রাজকীয় প্রথাকে ভেঙে নিজের হাতে ওই পরিবেশিত খাবারগুলি খেতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। তবে যে টেবিলে চা পরিবেশন করা হয়, সেই টেবিলটি অত্যন্ত পরিস্কার করে রাখা হয়। তা সেখানে ফোন, চাবি না সানগ্লাস থাকুক না কেন। রয়্যাল এক্সপার্টদের মতে, টেবিল থেকে চায়ের কাপ তুলে নেওয়া রয়্যাল ফ্যামিলিতে শিষ্টাচার বলে মনে করা হয়। বাম হাতে চায়ের প্লেট ধরে, কাপে চুমুক দেওয়া নিয়ম। এই টি টাইমে ভদ্র ও ভাল আচরণই কাম্য। চায়ের কাপ সবসময় মুখের সামনেই ধরা থাকা উচিত।