বিষ্ণুপুর ছাড়াও বাংলায় রয়েছে আরও এক টেরাকোটার মন্দিরময় জনপদ

megha |

Jan 06, 2024 | 11:31 AM

Midnapore Terracotta Temples: এক মন্দিরময় প্রাচীন জনপদ রয়েছে কংসাবতী নদীর তীরে, মেদিনীপুরে। প্রায় আড়াইশো বছরেরও পুরনো স্থাপত্য এবং মন্দির জনপদ পাথরা। মেদিনীপুর শহর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে রয়েছে এই পাথরা গ্রাম। টেরাকোটার মন্দির রয়েছে এখানে।

বিষ্ণুপুর ছাড়াও বাংলায় রয়েছে আরও এক টেরাকোটার মন্দিরময় জনপদ

Follow Us

বাংলার বুকে অজস্র প্রাচীন মন্দির রয়েছে। কিছু কিছু মন্দির বাংলার পর্যটন মানচিত্রে জায়গা করে নিয়েছে। আর এমন কিছু মন্দির রয়েছে, যার কথা খুব কম মানুষই জানেন। কিন্তু বাংলার ইতিহাস সে সব স্থাপত্যের গুরুত্ব নেহাত কম নয়। এমনই এক মন্দিরময় প্রাচীন জনপদ রয়েছে কংসাবতী নদীর তীরে, মেদিনীপুরে। প্রায় আড়াইশো বছরেরও পুরনো স্থাপত্য এবং মন্দির জনপদ পাথরা। মেদিনীপুর শহর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে রয়েছে এই পাথরা গ্রাম।

১৯৩২ সাল। তখন নবাব আলিবর্দি খাঁ স্থানীয় রতনচক পরগণার কর আদায়ের দায়িত্ব দেন বিদ্যানন্দ ঘোষালকে। সেই কয় আদায়ের টাকা রাজকোষে জমা না করে বিদ্যানন্দ ঘোষাল পাথরায় একটি টেরাকোটার মন্দির তৈরি করেছিলেন। আলিবর্দি খাঁ মোটেই মেনে নেননি এই বিষয়টি। শাস্তিস্বরূপ বিদ্যানন্দ ঘোষালকে পাগলা হাতির পায়ের তলায় ফেলে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন নবাব। কিন্তু শোনা যায়, হাতি তাঁকে স্পর্শ অবধি করতে পারেনি। এরপর থেকেই বিদ্যানন্দ ঘোষালের বংশধরেরা পাথরায় একের পর এক মন্দির তৈরি শুরু করে। আর হাতির পা উৎরে বেঁচে গিয়েছিলেন বিদ্যানন্দ ঘোষাল, তাই জায়গার নাম হয়ে গিয়েছে পাথরা।

আঠারো শতকের শেষের দিক পর্যন্ত পাথরায় মন্দির নির্মাণ হতে থাকে। সেই সময় তীর্থযাত্রীদের ভিড়ও হত এই গ্রামে। এরপর বিদ্যানন্দ ঘোষালের বংশধরেরা একের পর এক গ্রাম ছাড়তে শুরু করে। তার সঙ্গে পাথরা গ্রামও গুরুত্ব হারাতে শুরু করে। মন্দিরগুলোও পরিত্যক্ত হয়ে যায়। শেষ অবধি টিকিয়ে রাখা গিয়েছে ৩৪টি মন্দির। ৩৪টি মন্দিরের মধ্যে ২৮টি মন্দির আর্কিওলজিকাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া (ASI)-এর তত্ত্বাবধানে রয়েছে। তার মধ্যে ১৮টি মন্দিরের সংস্কারও করা হয়েছে।

পাথরা এলে দেখতে পাবেন ৪৫ ফুট উঁচু নবরত্ন মন্দির, কালাচাঁদের দালান মন্দির, শীতলা মন্দির, ধর্ম মন্দির, বুড়িমান থান। এখান থেকে পাওয়া গিয়েছে অষ্টধাতুর রাধাকৃষ্ণের মূর্তি। পাথরায় দু-তিনটি কমপ্লেক্সে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। কয়েকটা টেরাকোটার মন্দির রয়েছে কংসাবতীর তীরে আর কয়েকটি রয়েছে রাস্তার ধারে। এছাড়াও গ্রাম থেকে কিছুটা দূরে রয়েছে রাসমঞ্চ ও অন্য মন্দিরগুলো। মন্দিরের গায়ে রয়েছে টেরাকোটার তৈরি সূক্ষ্ম নকশা। এছাড়াও রয়েছে রাম, বলরাম, রাধা-কৃষ্ণ, হনুমান, দুর্গা মূর্তি। এখানকার রাসমঞ্চে একসময় রাসলীলাও হত।

কলকাতা থেকে লোকাল বা এক্সপ্রেস ট্রেন ধরে নামুন মেদিনীপুর স্টেশন। সেখান থেকে ওড়িশা ট্রাঙ্ক রোড ধরে ৬ কিলোমিটার যাওয়ার পর প্রথম পড়বে হাতিহলকা গ্রাম। সেখান থেকে আরও ৪ কিলোমিটার যাওয়ার পর কংসাবতী নদীর তীরে রয়েছে পাথরা গ্রাম। পাথরা বেড়াতে গেলে আপনাকে রাত কাটাতে হবে মেদিনীপুর শহরে।

Next Article