Bipadtarini Puja 2022: আজ বিপত্তারিণী পুজো! পরিবারের মঙ্গল কামনায় ভুলেও যে যে কাজ একেবারেই করবেন না, জানুন
Bipadtarini Vrat: বিশ্বাস করা হয় যে, এই তাগা হাতে পরলে তাঁকে কোনও বিপদ স্পর্শ করতে পরে না ৷ বিপত্তারিণী পুজোর শেষে সকলেই হাতে ওই তাগা বেঁধে দেওয়া হয়৷ মেয়েরা বাম হাতে ও ছেলেরা ডান হাতে এটি পরেন ৷
আজ বিপত্তারিণী পুজো (Bipadtarini Puja)। হিন্দু ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, আষাঢ় মাসের রথ থেকে উল্টোরথের মধ্যে মঙ্গলবার ও শনিবার-এ হিন্দু মহিলারা বিপত্তারিণী ব্রত (Bipadtarini Vrat) পালন করা হয়। দেবী দুর্গার (Godess Durga) অন্যতম রূপ হলেন দেবী বিপত্তারিণী। হিন্দু শাস্ত্র অনুযায়ী, যে কোনও বিপদ থেকে উদ্ধার পাওয়ার জন্য এই দেবীর পুজো করা হয়। যিঁনি সমগ্র বিপদ থেকে রক্ষা করেন বা যিঁনি বিপদ সমূহ নাশ করেন তিনিই বিপত্তারিণী। শাস্ত্র মতে, দুর্গার ১০৮টি অবতারের মধ্যে অন্যতম হলেন দেবী সঙ্কটনাশিনী। তাঁর একটি রূপ হলেন মা বিপত্তারিণী।চলতি বছরের ২ তারিখ শনিবার ও ৫ তারিখ মঙ্গলবার ধুমধাম করে পালিত হচ্ছে বিপত্তারিণী পুজো। গ্রামাঞ্চলে বিপত্তারিণী পূজা চারদিন ধরে চলে। প্রথম দিনে দেবীর “আরাধনা” (পূজা) করা হয়। বিপত্তারিণী পূজা উপলক্ষে মেয়েরা উপবাস করে। প্রথা অনুসারে হাতে “তাগা” (এক গুচ্ছ পবিত্র লাল সুতো ও দূর্বাঘাস) বাঁধা হয়।
বিশ্বাস করা হয় যে, এই তাগা হাতে পরলে তাঁকে কোনও বিপদ স্পর্শ করতে পরে না। বিপত্তারিণী পুজোর শেষে সকলেই হাতে ওই তাগা বেঁধে দেওয়া হয়৷ মেয়েরা বাম হাতে ও ছেলেরা ডান হাতে এটি পরেন। এটি শুধু ব্রত পালন যিনি করছেন তিনিই যে বাঁধেন তা নয় পরিবারের অন্য সদস্যরাও বাঁধেন বিপন্মুক্তির জন্য। বিশ্বাস করা হয় যে সংসার ও সন্তানদের জন্য এই ব্রত পালন করেন তারা৷ এই ব্রতর ফলে কেটে যায় সমস্ত বিপদ।
পৌরাণিক কাহিনি
পুরাণে কৌশিকীদেবী নামে খ্যাতা। আবার তিনিই জয়দুর্গা। দেবীর উৎপত্তি হয়েছিলো পরমেশ্বর ভগবান শিবের অর্ধাঙ্গিনী দেবী পার্বতীর কৃষ্ণ কোশ থেকে- তাই তিনি কৌশিকী। পুরাণ মতে শুম্ভ ও নিশুম্ভ নামক দুই অসুরের হাতে দেবতারা পরাজিত হয়ে হিমালয়ে গিয়ে মহামায়ার স্তব করতে লাগলেন। সেই সময় পরমেশ্বরী ভগবতী পার্বতী সেই স্থান দিয়ে যাচ্ছিলেন। দেবী তাদের স্তব শুনে বললেন –”আপনারা এখানে কার স্তব করিতেছেন?” সেই সময় ভগবতী পার্বতীর শরীর থেকে তার মতন দেখতে আর এক জন দেবী বের হয়ে আসলেন। সেই নব আবির্ভূতা দেবী জানালেন – “ইহারা আমারই স্তব করিতেছেন।” এই দেবী যুদ্ধে শুম্ভ ও নিশুম্ভ নামক অসুরের বধ করেছিলেন । এই দেবী মোহাচ্ছন্ন শুম্ভাসুরকে অদ্বৈত জ্ঞান দান করে বলেছিলেন, “এই জগতে এক আমিই আছি। আমি ছাড়া আমার সাহায্যকারিনী আর কে আছে? ওরে দুষ্ট ভাল করে দেখ , ব্রহ্মাণী প্রভৃতি শক্তি আমারই অভিন্না বিভুতি বা শক্তি। এই দেখ তারা আমার সঙ্গে মিশে যাচ্ছে।”
একটি পৌরাণিক গাঁথানুসারে একদা ভগবান মহাদেব রহস্যচ্ছলে দেবী পার্বতীকে ‘কালী’ বলে উপহাস করেন। এতে দেবী ক্রুদ্ধ হয়ে তপস্যার মাধ্যমে নিজের “কৃষ্ণবর্ণা” রূপ পরিত্যাগ করলেন। সেই কৃষ্ণবর্ণা স্বরূপ দেবীই হলেন , দেবীর পার্বতীর অঙ্গ থেকে সৃষ্টা জয়দুর্গা, কৌশিকীদেবী ও বিপদতারিনীদুর্গা। জ্যৈষ্ঠ ও আষাঢ় মাসে মঙ্গল ও শনিবারে মায়ের পূজা হয় । যেখানে ১৩ প্রকার ফল, পুস্প, মিষ্টি, পান, সুপারী, লবঙ্গ, এলাচ প্রভৃতি অর্পণ করা হয়। তবে, বাংলাদেশে দেবীর পূজার নিয়ম বিধি সম্পূর্ণ আলাদা।
বিপত্তারিণী পুজোর দিন যে যে ভুলগুলি একেবারেই করবেন না, সেগুলি একবার দেখে নিন…
– আপনি যদি বিপত্তারিণী পুজো করেন, তাহলে পুজোর আগে ও পরের দিন আমিষ খাওয়ার নিয়ম রয়েছে।
– পুজো চলাকালীন পরিবারের কোনও সদস্যের সঙ্গেই কথা বলা চলবে না। মুখ থেকে একটি টু শব্দ খসলেই ক্রুদ্ধ হোন দেবী বিপত্তারিণী।
– পুজোর দিন কোনও আঁশ-জাতীয় খাবার ঘরে প্রবেশ করবেন না
– চাল ও গমের কোনও খাদ্যবস্তু ভুলে মুখে তুলবেন না।
– এই দিন কোনও মহিলার সঙ্গে বাজে ভাবে ব্যবহার বা বাজে কথা বলবেন না। শুধু মহিলাই নয়, কারোর সঙ্গে বাজে কথা বলবেন না। অপমান বা আঘাত লাগে এমন বাক্য উচ্চারণ করবেন না।
– পুজোর আগে পুজোর ঘর পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করে রাখতে হয়। নিজেকেও পরিস্কার রাখতে স্নান সেরে নতুন পোশাক পরতে পারেন।
– ১৩ প্রকার ফল, পুস্প, মিষ্টি, পান, সুপারী, লবঙ্গ, এলাচ প্রভৃতি অর্পণ করতে হয়।
-দেবী ভগবতী বা দেবী কালী শুধু জবা ফুলেই তুষ্ট থাকেন, তাই মায়ের পুজোয় লাল জবা অতি আবশ্যক, লাল জবা ফুলের পুষ্পাঞ্জলি দ্বারাই মায়ের পুজো সম্পন্ন হয়
– দেবীর অনেক রূপ দেখা যায়। অষ্টাদশ রূপের ধ্যান ও পূজা হয়, কোথাও দশভুজা রূপে পূজা হয়, কোথাও আবার চতুর্ভুজা স্বর্ণ বর্ণা আবার কোথাও কৃষ্ণ বর্ণা রূপে পূজিতা হয় ।
– প্রসাদ হিসেবে ১৩টি লুচি ও ১৩ রকমের ফল খাওয়ার চল রয়েছে।
– বিপত্তারিণী পুজোয় ১৩ সংখ্যার বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। স্বামী ও সন্তানের রক্ষার্থে ১৩টি গিঁট দেওয়া লাল সুতো যা রক্ষা সুতো নামে পরিচিত, তা হাতে বেধে দিতে হয়। তাতে ১৩টি দুর্বাও দেওয়া থাকে।
– দেবীর রূপ কালাভ্র আভাং, কটাক্ষে শত্রুকূলত্রাসিণী, কপালে চন্দ্রকলা শোভিতা, চারি হস্তে শঙ্খ, চক্র, খড়্গ ও ত্রিশূল ধারিণী, ত্রিনয়না, সিংহোপরি সংস্থিতা, সমগ্র ত্রিভুবন স্বীয় তেজে পূর্ণকারিণী, দেবগণ-পরিবৃতা।