সিদ্ধিলাভের আশায় ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন রামকৃষ্ণ! জানতেন?
শুধু ইসলাম ধর্মেই নয়, খ্রিস্ট ও বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ করেও তিনি সিদ্ধিলাভ করেন। রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব সর্বস্তরের মানুষের কাছে সে দিন ধর্মজীবনের নতুন বার্তা পৌঁছে দিয়েছিলেন।
‘যত মত তত পথ’। চরম অরাজকতা ও নৈরাজ্যের পরিবেশে ধর্মের সারকথাটি অত্যন্ত সহজভাবে বলে গিয়েছেন বহু আগেই। বর্তমানের অস্থির সময়ে দাঁড়িয়েও শ্রীরামকৃষ্ণচর্চায় মেলে মুক্তির পথ। ধর্মে ধর্মে বিভেদের মাঝে কুসংস্কার ও সামাজিক ভেদাভেদকে অগ্রাহ্য করে মানুষের ও সমাজের মধ্যে মূল বার্তা প্রেরণের ত্রাতা হিসেবে অবতীর্ণ হয়েছিলেন হুগলীর এই হদ্দ গ্রামের যুবকটি।
সেইসময় ডামাডোল পরিস্থিতিতে সব সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে উঠে তিনি প্রচলিত গড়পড়তাকে ভেঙে চুরমার করে দিয়েছিলেন। তাঁর অমৃতবাণী তুলে ধরার জন্য নিজের জীবন দিয়ে সেই সত্যের সন্ধান করেছিলেন যুগাবতার শ্রীরামকৃষ্ণ। জীবনে সত্য উপলব্ধি করতে গিয়ে তিনি বিভিন্ন ধর্মমতে সাধনা করে সিদ্ধিলাভের চেষ্টায় মগ্ন হয়েছিলেন । হিন্দু হয়েও ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন তিনি।
আরও পড়ুন: মহাভারতের শকুনি মামার ‘আসল’ রাজ্য কোথায় ছিল, জানেন?
শ্রীরামকৃষ্ণের বিপুল কর্মকাণ্ডের মধ্যে ইসলাম গ্রহণের দিকটি তুলনায় স্বল্পালোচিত। জানা যায়, ১৮৮৬-৮৭ সাল নাগাদ ইসলাম সাধনায় মনোনিবেশ করেছিলেন ঠাকুর। গুরু হিসেবে বেছে নেন গোবিন্দ রায়কে। ভাবছেন, গোবিন্দ রায় তো হিন্দু বঙালি। নাম শুনে হিন্দু মনে হলেও তিনি ছিলেন ইসলামে দীক্ষিত। হিন্দু থেকে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার পর তাঁর নাম হয় ওয়াজেদ আলি খান। এই গোবিন্দ রায়ের কাছেই ইসলাম মতে দীক্ষা নেন ঠাকুর। গোবিন্দ রায় ছিলেন সুফি মতের সাধক। সুফি মত অনেকটাই হিন্দু বেদান্তের আদর্শের কাছাকাছি। সেই সময় মন্দিরে পুজার্চনা বন্ধ করে দিয়েছিলেন। এমনকী হিন্দু দেবদেবীর মূর্তি বা ছবির দিকেও তাকাতেন না রামকৃষ্ণ। সাধারণ অহিন্দু দর্শনার্থীর মতো মন্দিরের বাইরেই বসবাস করতেন। প্রসঙ্গত, দক্ষিণেশ্বর কালীমন্দিরের বাইরেই আছে গাজীপীরের স্থান। কথিত আছে এই গাজিপীর স্বপ্নে দর্শন দিয়েছিলেন স্বয়ং রাসমণিকে। পরে রানিমা তাঁর স্থানে বাতি দেওয়ার ব্যবস্থা করেন।
নিয়মিত নমাজ পড়তেন। মসজিদে যেতেন। কথামৃতকার ঠাকুরের মুখের কথা তুলে ধরেছেন এইভাবে, ‘গোবিন্দ রায়ের কাছে আল্লা মন্ত্র নিলাম। কুঠিতে প্যাঁজ দিয়ে রান্না ভাত হলো। খানিক খেলুম।’ গোভক্ষণের ইচ্ছা জাগলেও মাথুর বাবুর অনুরোধে তা তিনি খান। তিনদিন ইসলাম ধর্মে গভীর সাধনা করেন ঠাকুর। সে সময় ইসলাম ব্যতীত অন্য কোনও চিন্তা তিনি মাথায় রাখেননি। এবং অচিরেই এ পথে সিদ্ধিলাভ করেন। শুধু ইসলাম ধর্মেই নয়, খ্রিস্ট ও বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ করেও তিনি সিদ্ধিলাভ করেন। রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব সর্বস্তরের মানুষের কাছে সে দিন ধর্মজীবনের নতুন বার্তা পৌঁছে দিয়েছিলেন।