রাজীব খান, ঢাকা
এক অবিস্মরণীয় ইতিহাসে বাংলাদেশ। মেয়েদের সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে নেপালকে ৩-১ গোলে উড়িয়ে ইতিহাস তৈরি করলেন সাবিনা খাতুনরা। নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুর দশরথ স্টেডিয়ামে হয় হাইভোল্টেজ এই ফাইনাল ম্যাচটি। ম্যাচের শুরু থেকেই চমৎকার খেলছিলেন মারিয়ারা। নেপালকে কার্যত দমিয়েই রাখছিলেন। এগারো বাঙালি মেয়ের দুর্দান্ত ফুটবলের কারণে নেপালের বল পজেশন একেবারেই কম ছিল। কোচ গোলাম রাব্বানী ছোটনের ছাত্রীরা ম্যাচ শুরুর মাত্র ১৪ মিনিটেই এগিয়ে যায়। গোলটি আসে শামসুন্নাহারের পা থেকে। ১-০ হওয়ার পরই আত্মবিশ্বাস অনেকখানি বেড়ে গিয়েছিল টিমের। শেষ পর্যন্ত ৩-১ ফাইনাল জিতে নেয় বাংলাদেশ।
আবহাওয়ার কারণে গত কয়েক দিন বৃষ্টি হওয়ায় দশরথ স্টেডিয়াম মাঠে কাদা ছিল। এর ফলে দুই দলই স্বাভাবিক ফুটবল খেলতে পারেনি। যদিও বাংলাদেশ প্রথমেই এক গোল করে এগিয়ে যাওয়ায় কিছুটা চাপে পড়ে নেপাল। প্রথমার্ধের শেষ দিকে নেপাল কিছুটা ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছিল। সেই সময় কাউন্টার অ্যাটাকে কিছুটা চাপে ফেলার চেষ্টা করে নেপাল। কিন্তু তা কাজে লাগেনি। তারা মরিয়া হয়ে ওঠার আগেই জ্বলে উঠে বাংলাদেশের মেয়েরা। খেলার ৪১ মিনিটে বিপক্ষের বক্সের কাছাকাছি বল পেয়ে যান কৃষ্ণা রানি। সুযোগ নষ্ট না করেই তাঁর শটে ২-০ করে এগিয়ে যায় বাংলাদেশ।
০-২ এগিয়ে থাকা বাংলাদেশকে বিরতির পর কিছুটা চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছিল সাফ আয়োজক নেপাল। দ্বিতীয়ার্ধে ৬৯ মিনিটে প্রতিপক্ষের বল বাংলাদেশের জালে জড়ায়। ১-২ স্কোরলাইন করে ফেলা নেপাল তখন মরিয়া হয়ে উঠেছিল। ঘরের মাঠে সাফ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য মরিয়া তাগিদ দেখিয়েছিল তারা। বাংলাদেশ অবশ্য চাপে পড়েনি। নিজেদের স্কিলের উপরেই আস্থা রেখেছিলেন সাবিনা, মারিয়ারা। ২-১ মাত্র সাত মিনিট পরই ব্যবধান বাড়িয়ে নেয় বাংলাদেশ। এবারও গোলটি আসে কৃষ্ণা রানীর পায়ে থেকে। কৃষ্ণার এই গোলের পর কোচ ছোটনের চিন্তার ভাঁজ কিছুটা কমে। ম্যাচের বাকি সময় নেপাল গোলের জন্য চেষ্টা করলে কোনও কাজ হয়নি। ৩-১ জিতে যান সাবিনারা।
সাফ কাপে এর আগে অনেকবার অংশগ্রহণ করলেও কখনও চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি বাংলাদেশ। ছেলেদের ফুটবলেও সে ভাবে কোনও দিনই ছাপ রাখতে পারেনি তারা। কিন্তু বাংলাদেশের একঝাঁক মেয়ে অবিস্মরণীয় ইতিহাসে পৌছে দিল দেশকে। সে দিক থেকে দেখলে সোমবার বাংলাদেশের কাছে এক ঐতিহাসিক দিন। মেয়েদের ফুটবল যে দারুণ ছাপ রাখতে শুরু করল, তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। প্রথমবার বাংলাদেশ জিতল মেয়েদের সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ। অর্জন করল দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবল শ্রেষ্ঠত্ব।