FIFA World Cup: আত্মঘাতী গোল, ‘দ্য জেন্টলম্যান’কে খুন, কলঙ্কিত কলম্বিয়া

Andrés Escobar: এস্কোবারের শেষকৃত্যে ১ লক্ষ ২০ হাজারের বেশি মানুষ ছিলেন। এস্কোবারকে খুনের ঘটনায় ড্রাগ কার্টেলেরে এক বডিগার্ড হাম্বের্তো কাস্ত্রো মুনোজকে গ্রেফতার করা হয়। তিনি স্বীকার করেন এস্কোবারকে খুনের কথা। ৪৩ বছরের কারাদন্ড হয় মুনোজের। এস্কোবার খুন হওয়ায় বিশ্ব মঞ্চে কলম্বিয়ার ভাবমূর্তি আরও খারাপ হয়।

FIFA World Cup: আত্মঘাতী গোল, 'দ্য জেন্টলম্যান'কে খুন, কলঙ্কিত কলম্বিয়া
Image Credit source: OWN Photograph
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Sep 20, 2022 | 10:00 PM

দীপঙ্কর ঘোষাল

নতুন তারকা কে? এই প্রশ্ন চার বছর অন্তত ঠিক ঘোরাফেরা করে মাথায়। বিশ্বকাপ ফুটবলের আসরে এ বারও আমরা বসব মেসি-রোনাল্ডো-নেইমারের পরবর্তী প্রজন্মের খোঁজে। বিশ্বকাপ এমনই। তার পথচলার প্রথম দিন থেকেই জন্ম দিয়ে চলেছে একের পর নায়ক। অসংখ্য ঘটনা। আর একদল বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন। সেই সব নায়ক আর না-ভোলা ঘটনা তুলে আনল টিভি নাইন। পর্ব-৪

টেনিসে আনফোর্সড এররের জন্য অনেক বড় তারকা ম্যাচ হেরে যান। ওই আনফোর্সড এররের বাংলা কী? অনিচ্ছাকৃত ভুল। এমন ভুল কেউ করলে, তাঁর প্রাণ সংশয় হতে পারে? অন্তত একটা ম্যাচের নিরিখে হওয়ার কথা নয়। বিস্ময় সেখানেই। ফুটবল এমন ঘটনারও সাক্ষী থেকেছে। অনিচ্ছাকৃত ভুলের জন্য প্রাণ হারাতে হয়েছিল এক তারকাকে, তার কোনও প্রমাণ না থাকলেও, ঘটনার প্রেক্ষিত হিসেবে কিন্তু তাই বলা হয়। যার জন্য বিশ্ব ফুটবল হারিয়েছিল একজন সেরা ডিফেন্ডারকে। ফুটবলের মতো বডি কনট্যাক্ট গেমে ‘দ্য জেন্টলম্যান’ ডাক নাম পাওয়া, অবিশ্বাস্য শোনালেও সত্যি। আন্দ্রে এস্কোবার পেয়েছিলেন সেই বিরল ডাকনাম। কলম্বিয়ার এই ফুটবলার খুন হয়েছিলেন মাত্র ২৭ বছর বয়সে।

ফুটবল বডি কনট্যাক্ট গেম। সেন্টারব্যাক এস্কোবার তবুও পরিচ্ছন্ন ফুটবল খেলতেন। প্রতিপক্ষকে ইচ্ছাকৃত আঘাত একেবারেই নয়। ৬ ফুট উচ্চতা। রাজপুত্রের মতো দেখতে। বিশ্ব মঞ্চে কলম্বিয়া মানেই ড্রাগ, মাফিয়া রাজ— এ সবই আগে মাথায় আসে। ফুটবলের মাধ্যমে দেশের ভাবমূর্তি ফেরানোর চেষ্টা করে গিয়েছেন আন্দ্রেস। বিশ্বকাপে সেই তাঁকেই একটা ভুলের চরম খেসারত দিতে হবে, তা হয়তো কেউ কল্পনাও করেননি। ১৯৯৪ সালের বিশ্বকাপ। গ্রুপ পর্বে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ম্যাচ। কলম্বিয়ার বক্সের দিকে আক্রমণ ধেয়ে আসছে। বাঁ দিক থেকে হঠাৎই খেলা সুইচ করে দিয়েছিলেন এক মার্কিনি ফুটবলার। বক্সের ডানদিকে সতীর্থের জন্য পাস বাড়িয়েছিলেন তিনি। মাঝে ছিলেন এস্কোবার। স্লাইড করে বল ক্লিয়ারের চেষ্টা করেন তিনি। গোলকিপারও এগিয়ে যাচ্ছিলেন। ভুল বোঝাবুঝিতে কলম্বিয়ার জালেই জড়িয়ে যায় বল। আমেরিকার বিরুদ্ধে এস্কোবারের আত্মঘাতী গোল। ১-২ হেরে বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্যায় থেকে ছিটকে যায় কলম্বিয়া।

ওখানে শেষ নয়, ঘটনার শুরু ওখান থেকেই। বিশ্বকাপের পর লাস ভেগাসে আত্মীয়ের বাড়ি যাওয়ার কথা ছিল এস্কোবারের। তিনি সিদ্ধান্ত নেন, দেশে ফিরে যাবেন। তাঁর শহর মেডেলিন। সেখানেই বেড়ে ওঠা। বিশ্বকাপ থেকে বিদায়ের পাঁচ দিন পরের ঘটনা। রাতে মেডেলিনের এক পানশালায় যান বন্ধুদের সঙ্গে। সেখান থেকে নাইট ক্লাবে। সকলেই নিজেদের মতো উপভোগ করছিলেন সময়। ভোর তিনটে নাইট ক্লাব থেকে একাই বেরিয়ে আসেন এস্কোবার। পার্কিং লটে নিজের গাড়িতে গিয়ে বসেন। হয়তো ইচ্ছে ছিল, বাড়ি ফিরে যাবেন। অন্ধকার ফুঁড়ে হঠাৎই উদয় হয় তিনজনের। এস্কোবারের সঙ্গে শুরু হয় বাগবিতণ্ডা। বচসা চলতে চলতে হঠাৎই দু’জন হ্যান্ড গান বের করেন। আর একজনের কাছে ছিল ৩৮ ক্যালিবার পিস্তল। পর পর ছ’টা গুলি করা হয় এস্কোবারকে। ওই রাতে কেউ কেউ শুনেছিলেন সেই বচসা। বাগবিতণ্ডার সময় নাকি দুষ্কৃতিরা বারবার ‘গোল’ বলে চিৎকার করছিলেন। গুলি করেই দুষ্কৃতিরা পালিয়ে যায়। এস্কোবারকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় সঙ্গে সঙ্গে। কিছুক্ষণের মধ্যেই মৃত্যু হয় কলম্বিয়ার তারকা ফুটবলারের।

এস্কোবারকে খুনের পিছনে ছিল সেই আত্মঘাতী গোল, এমনই বিশ্বাস করেন তাঁর ভক্তরা। এমনকি, কলম্বিয়ার আমজনতাও। বিবিসির ধারাভাষ্যকার তথা ফুটবল বিশেষজ্ঞ অ্যালান হ্যানসেন ওই কারণই তুলে ধরেছিলেন। আত্মঘাতী গোলের জন্য এস্কোবারের খুন হয়েছেন, এ কথা উল্লেখ করে বিবিসির তরফে এক বিবৃতি জারি করে জনসমক্ষে ক্ষমা চাওয়া হয়। এস্কোবারের শেষকৃত্যে ১ লক্ষ ২০ হাজারের বেশি মানুষ ছিলেন। এস্কোবারকে খুনের ঘটনায় মাদকচক্রের বডিগার্ড হাম্বের্তো কাস্ত্রো মুনোজকে গ্রেফতার করা হয়। তিনি স্বীকার করেন এস্কোবারকে খুনের কথা। ৪৩ বছরের কারাদন্ড হয় মুনোজের। এস্কোবার খুন হওয়ায় বিশ্ব মঞ্চে কলম্বিয়ার মুখ যে পুড়েছিল, তাতে কোনও সন্দেহ নেই।

১৯৮৮ সালে কলম্বিয়া জাতীয় দলে অভিষেক হয় আন্দ্রেস এস্কোবারের। ১৯৯০ সালের বিশ্বকাপে সব ম্যাচে খেলেন। শেষ ষোলোয় ক্যামেরুনের কাছে ১-২ ব্যবধানে হেরে ছিটকে যায় কলম্বিয়া। এ ছাড়াও ১৯৮৯ ও ১৯৯১ সালের কোপা আমেরিকায় খেলেছেন। ১৯৯৪ ফিফা বিশ্বকাপের যোগ্য়তা অর্জন পর্বে একটি ম্যাচেও খেলেননি তিনি। অবশ্য ১৯৯৪ সালের বিশ্বকাপ খেলেন। আর তারপরই জীবন শেষ। মৃত্যুর কিছুদিন আগেই এনগেজমেন্ট হয়েছিল এস্কোবারের। দীর্ঘদিনের বান্ধবী দাঁতের চিকিৎসক পামেলা কাসকার্দোর সঙ্গে সে বছরই বিয়ে হওয়ার কথা ছিল। কথা ছিল আরও অনেক কিছুর। ছ’টা গুলি স্তব্ধ করে দিয়েছিল এস্কোবারের সব স্বপ্ন। এমনকি, তাঁকে ঘিরে থাকা মানুষগুলোর!

সব মৃত্যুই দুঃখের। এস্কোবারের ক্ষেত্রে আরও অনেক বেশি। বিশ্ব ফুটবল তার জেন্টলম্যানকে হারিয়েছিল। মাত্র ২৭ বছরেরই।