Mary Kom : তিলোত্তমায় মেরির দ্যুতি, দেশের নয়া ‘বক্সিং কুইন’ নিখাতকে নিয়ে কী বললেন?

Mary Kom received PC Chandra Award : মেরি এখনও পুরো মাত্রায় রিহ্যাব শুরু না করলেও তিনি আশাবাদী, এ বছরই বক্সিং রিংয়ে ফিরতে পারবেন। চোট পাওয়ার মুহূর্তে কী ভেবেছিলেন মেরি? উত্তরে তিনি জানান, সেই মুহূর্তে তাঁর মনে হয়েছিল এই অসহ্য যন্ত্রণা সহ্য করার থেকে মরে গেলেই হয়তো ভালো হত। তবুও হার মানেননি। রিং হোক বা রিংয়ের বাইরে মেরির এই লড়াকু মানসিকতাই তাঁকে সাফল্যের শিখরে পৌঁছে দিয়েছে।

Mary Kom : তিলোত্তমায় মেরির দ্যুতি, দেশের নয়া 'বক্সিং কুইন' নিখাতকে নিয়ে কী বললেন?
তিলোত্তমায় মেরির দ্যুতি, দেশের নয়া 'বক্সিং কুইন' নিখাতকে নিয়ে কী বললেন?Image Credit source: নিজস্ব চিত্র
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Apr 30, 2023 | 10:00 PM

নন্দন পাল : রবি-সন্ধ্যায় তিলোত্তমায় পিসি চন্দ্র জুয়েলার্সের পক্ষ থেকে বিশেষ সম্মান জানানো হল কিংবদন্তি ভারতীয় বক্সার (Indian Boxer) মেরি কমকে (Mary Kom)। পিসি চন্দ্র জুয়েলার্সের পক্ষ থেকে গত ৩০ বছর ধরে এই পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে। অতীতে মান্না দে থেকে সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়, আশা ভোঁসলে, গুলজার, মহাশ্বেতা দেবী, সুনীল গাভাসকর, কপিল দেবের মতো কিংবদন্তিরা পিসি চন্দ্র পুরস্কার পেয়েছেন। মেরি কমকে পিসি চন্দ্র জুয়েলার্সের পক্ষ থেকে কুড়ি লক্ষ টাকার আর্থিক পুরস্কার দেওয়া হয়। একইসঙ্গে একটি সুদৃশ্য বক্সিং গ্লাভসের আদলে ট্রফিও দেওয়া হয়েছে ২০১২ সালে লন্ডন অলিম্পিকে ব্রোঞ্জ পদক পাওয়া মেরি কমকে। ভারতের বক্সিং কিংবদন্তিকে এই সকল পুরস্কার দেওয়ার পর তাঁর জীবনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা নিয়ে একটি দৃশ্য শ্রাব্য উপস্থাপনা দেখানো হয়। যা দেখে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন। চোখের জল আটকে রাখতে পারেননি মেরি। পাঁচ বারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন মেরির পাশাপাশি ইংলিশ বিলিয়ার্ডসের ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়ন গীত শেঠিও উপস্থিত ছিলেন এই অনুষ্ঠানে। সাংবাদিক সম্মেলনে কী কী বললেন মেরি কম, বিস্তারিত জেনে নিন TV9Bangla Sports এর এই প্রতিবেদনে।

স্মৃতির পাতা উল্টে সাংবাদিক সম্মেলনে মেরি কম নিজের কেরিয়ারের কঠিন সময়ের কথা তুলে ধরেন। জানান, একটা সময় তাঁর কাছে ১টি মাত্র টি-শার্ট ছিল। প্রয়োজন মতো পাঞ্চিং গ্লাভস ও পাঞ্চিং ব্যাগও পেতেন না। সাফল্যের পথটা সকলের সহজ হয় না। নানা প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে বিশ্বমঞ্চে মেরি নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। অতীতের কঠিন দিনের কথা ভেবে মেরি চোখের কোণায় জল চিকচিক করছিল অনেক মুহূর্তেই।

India's Legendary Boxer Mary Kom received PC Chandra Award

পিসি চন্দ্র জুয়েলার্সের অনুষ্ঠানে মেরি কম। (নিজস্ব চিত্র)

চার সন্তানের মা মেরি বর্তমানে নিজের একটি অ্যাকাডেমি চালান। অ্যাকাডেমিতে বাংলার দুই নবীন প্রতিভা গিয়েছে। মেরির মতে, তারা যদি সফল হয়, তা হলে তিনি মনে করবেন দেশের জন্য আরও কিছু করতে পারলেন। দীর্ঘদিন বক্সিং রিংয়ের বাইরে মেরি। গ্লাভস, পাঞ্চিং ব্যাগ সবকিছু প্রতিমুহূর্তে মিস করেন। সকল অ্যাথলিটই জীবনের কোনও না কোনও সময় কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যান। মেরি তেমনই একটা সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন। দীর্ঘদিন চোটের কারণে বক্সিং রিংয়ে প্রবেশ করেননি মেরি। তবে তাঁর গলায় শোনা গেল আশার কথা।

মেরি জানিয়েছেন, এখনও পুরো মাত্রায় রিহ্যাব শুরু না করলেও তিনি আশাবাদী, এ বছরই বক্সিং রিংয়ে ফিরতে পারবেন। চোট পাওয়ার মুহূর্তে কী ভেবেছিলেন মেরি? উত্তরে তিনি জানান, সেই মুহূর্তে তাঁর মনে হয়েছিল এই অসহ্য যন্ত্রণা সহ্য করার থেকে মরে গেলেই হয়তো ভালো হত। তবুও হার মানেননি। রিং হোক বা রিংয়ের বাইরে মেরির এই লড়াকু মানসিকতাই তাঁকে সাফল্যের শিখরে পৌঁছে দিয়েছে।

প্রসঙ্গত, সাংবাদিক সম্মেলনের শুরুতেই উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়, কোনওরকম বিতর্কিত প্রশ্ন করা চলবে না। তাঁর কাছে নানা বিষয়েই জানতে চাওয়া হয়। সব প্রশ্নের উত্তর দেননি মেরি। তবে ভারতীয় তারকা বক্সার নিখাত জারিনকে নিয়ে প্রশ্ন করা হলে চুপ থাকেননি। ভারতের নয়া বক্সিং কুইন বলা হয় নিখাত জারিনকে। আর একাধিক সময় শোনা গিয়েছে, তাঁর সঙ্গে নাকি মেরি কমের সম্পর্ক ভালো নয়! যদিও নিখাত অতীতে জানিয়েছেন মেরি তাঁর আদর্শ। বক্সিংয়ে আসার অনুপ্রেরণা পেয়েছেন মেরিকে দেখেই। তাঁর পরও মেরির সঙ্গে নিখাতের তুলনা কেন? নিখাতকে নিয়ে কোনও সমস্যা নেই মেরির। তবে তিনি বলেন, ‘সাফল্য তো আসবেই। কিন্তু সাফল্যে সঙ্গে সঙ্গে কারও মাথা যেন ঘুরে না যায়, সে দিকে নজর রাখতে হবে। শ্রদ্ধা ভেতর থেকে আসে। আমার থেকে সিনিয়র কাউকে প্রণাম করতে হলে আমি দু’বার ভাবি না। তাই যাদের সম্মান করো তাঁদের সম্মান দেখানোটাও দরকার।’ মেরি যে নিপাট মাটির মানুষ, তার প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে পিসি চন্দ্র জুয়েলার্সের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানেও। মঞ্চে যখন মেরিকে পিসি চন্দ্র জুয়েলার্সের কর্ণধার এ.কে চন্দ্র তাঁকে পুরস্কার দেন, মেরি তাঁর পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করেন।

মেরি জানান, জীবনে কঠিন সময় আসলেই তিনি মাঝে মাঝেই বিচলিত হয়ে পড়েন। আবার সেখান থেকে ঘুরেও দাঁড়ান। একসময় আত্মহত্যা করার কথাও নাকি ভেবেছিলেন মেরি। জানান, তাঁর বাবা-মা খুব কষ্ট করে তাঁর পাসপোর্ট বানিয়ে দিয়েছিলেন। ট্রেনে সফরের সময় তা হারিয়ে যায়। ওই সময় তিনি এতটাই বিচলিত হয়ে পড়েন যে আত্মহত্যার চেষ্টাও করেন। দীর্ঘদিন রিংয়ের বাইরে থাকাটা মেরিকে কষ্ট দিচ্ছে ঠিকই, কিন্তু এ বার তাঁর মাথায় নেতিবাচক কোনও চিন্তা আসেনি। বরং তিনি দ্রুত বক্সিং রিংয়ের রেড কর্নার বা ব্লু কর্নারে ফিরে যেতে চান।