Frontline Covid Workers : ওঁরা ডোম, নির্বান্ধবের শেষ বান্ধব

Frontline Covid Workers : ওঁরা ডোম, নির্বান্ধবের শেষ বান্ধব

সৌরভ পাল

|

Updated on: Jun 17, 2021 | 11:31 AM

ধাপায় না কি একসঙ্গে অনেক দেহ একসঙ্গে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়? কোভিডে মৃত ব্যক্তি মরণোত্তর সম্মানটুকুও পায় না, সত্যিই কি তাই?

শহর কলকাতার মধ্যে যেন এক চিলতে বনাঞ্চল। দু দিকে সবুজ আর সবুজ। রাস্তার দুদিকেই গাছ। আর মাথার উপর পাতায় পাতায় শঙ্খ লাগিয়ে সবুজের চাঁদোয়া। মা উড়াল পুল পেরিয়ে বাইপাস থেকে বাঁ দিকে টার্ন নিয়ে যত দূর এগোনো যায়, সবুজ, শুধুই সবুজ। চোখে পড়বে ভূট্টার ক্ষেত। লালা শাক আর অরণ্যের মালভূমি। প্রকৃতির এই সৌন্দ্যার্যয়নে হঠাৎ জার্ক! বিরাট বিরাট ডাম্পার। আর শববাহী গাড়িদের ভিড়। ধাপায় আপনাকে স্বাগত।

কোভিড কালে টেলিভিশনের পর্দা আর খবরের কাগজে একাধিকবার শিরোনামে এসেছে। ধাপার সঙ্গে শহর কলকাতার পরিচয় অনেক আগে থেকেই। তবে ধারনা বদলেছে মহামারী। ওয়েস্টবিন থেকে ধাপা এখন কোভিড ক্রিমেটোরিয়াম। তাল গাছের থেকেও লম্বা চিমনি। কালো ধোয়ায় ঢাকছে আকাশ। সঙ্গে মানুষ পোড়ার গন্ধ। পরিচয় করে নিন, শহর কলকাতার সব থেকে ব্যস্ততম শ্মশানের সঙ্গে। নীল রঙ করা বিশাল আকার লোহার দরজা। পাশেই ওয়েস্টবিন বোঝাই হাড়গোড় আর শবদেহের মালা।

দোতলা শ্মশান। নীচ থেকে ওপরে যাওয়ার জন্য কংক্রিটে বাঁধানো পথ। বোর্ডে চোখ পড়লেই দেখা যায়, সরাকারি নীল বোর্ডে সাদা হরফে লেখা ধাপা বৈদ্যুতিক চুল্লি। তার ঠিক নীচেই লেখা কলকাতা পৌরসংস্থা। এখানেই নাগরিক পরিষেবায় দিনরাত একে করে পরিশ্রম করে চলেছেন রতন, রাহুল, বিশ্বজিৎরা। ওঁরা প্রত্যেকেই ধাপার শ্মশান কর্মী। পেশায় ডোম।

ধাপায় প্রতিদিন কাজ হয় তিন শিফটে। প্রতিটি শিফট ৮ ঘণ্টা করে। ১ জানুয়ারি থেকে এভাবেই কোভিড বডি দাহের কাজ চলছে। চাপ অনেকটাই কমেছে, তবে একেবারে থেমে যায়নি।

বাড়িতে রয়েছেন বৃদ্ধ মা। সংসারে আছে স্ত্রী, সন্তানও। এমন একটা কাজ যা প্রতিনিয়ত করতে হচ্ছে, যেখানে প্রতি মুহূর্তে মৃত্যুফাঁদ। ভয় হয়? মনে হয় না, বাড়ি ফিরে সন্তানের মুখটা আর দেখতে পাবো কি না? ভয় হয় না, মারণ রোগে আক্রান্ত হওয়ার? রতনের উত্তর, ‘হ্যাঁ ভয় হয়। কিন্তু আমি যদি এই কাজটা না করি, তাহলে অন্য কেউ করবে।’

রাহুল যেমন বংশ পরম্পরায় ডোম। বাবা, ঠাকুর দা অতীতে এই কাজ করেছেন, এখন রাহুলও সেই একই পেশায়। রতন, রাহুলদের মতো এই নাগরিক পরিষেবায় সামনের সাড়িতে থেকে লড়ছেন বিশ্বজিতও। বাড়িতে স্ত্রী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তবুও লড়াই থামেনি। ‘শেষ দেখেই ছাড়ব’, বিশ্বজিতের মনের জোর এমনই।

Published on: Jun 16, 2021 09:20 PM