এ দেশের কোনও এক প্রান্তের পথকুকুর যখন নেদারল্যান্ডস চলে যায়, তখন কি মন খারাপ করার কথা? মন খারাপ না হলেও এটুকু জানার আগ্রহ জন্মাবে, কীভাবে তা সম্ভব? সম্ভব, সবই সম্ভব। এই ঘটনা হয়তো আগেও ঘটেছিল। কিন্তু ইন্টারনেটের এতটা রমরমা না থাকার ফলে সে ঘটনার বিন্দুবিসর্গ আমরা জানতে পারতাম না। এখন বারাণসীর সেই পথকুকুর ইন্টারনেটের দৌলতেই রাতারাতি নেটপাড়ার তারকা হয়ে উঠেছে। কীভাবে সে উত্তরপ্রদেশ থেকে নেদারল্যান্ডসে স্বপ্নের দিনযাপনের সুযোগটা করে নিল, সে কাহিনি যেন না জানলেই নয়!
নেদারল্যান্ডসের এক সহৃদয় মহিলা ভারতে এসেছিলেন বেড়াতে। এ দেশের এপ্রান্ত থেকে সেপ্রান্ত ঘুরে বেড়ানোর পরে তিনি পৌঁছে যান বারাণসীতে। আমস্টারডামের বাসিন্দা মেরাল বন্টেনবেল বারাণসীতে বেড়াতে গিয়েই একটি বিপথগামী কুকুরের সংস্পর্শে আসেন। অল্প সময়ের মধ্যেই প্রাণীটার প্রতি আকৃষ্ট হন তিনি। পথকুকুরের নাম জয়া। বেনারসে পথ হারিয়ে ফেলেছিল জয়া। আমস্টারডামের এই মহিলা না-থাকলে হয়তো বড়সড় কোনও বিপদ ঘটে যেতে পারত জয়ার জীবনে।
দুর্ভাগ্যজনক সংঘর্ষের কথা উল্লেখ করে বন্টেনবেল নামের ওই মহিলা জানিয়েছেন, কীভাবে কুকুরটি পথ হারিয়ে দিকভ্রষ্টের মতো চলাফেরা করছিল এবং তা তাকে কতটা বিপজ্জনক পরিস্থিতির মধ্যে ঠেলে দিয়েছিল। তবে জয়ার মাধুর্যে বিমোহিত হয়ে যান জয়া। তাকে এতটাই ভালবেসে ফেলেন যে, এক্কেবারে আমস্টারডাম নিয়ে যাবেন বলেই ঠিক করেন তিনি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে জয়া ওই আমস্টারডাম বাসিন্দার বেনারস যাত্রা ও তাঁর জীবনের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হয়ে ওঠে। সবসময় তাঁর চারপাশে ঘুরতে থাকে কুকুরটি, গভীর সংযোগ তৈরি হয় দুজনের মধ্যে।
জয়ার প্রতি ভালবাসা থেকে এবং তাকে আরও ভাল জীবন দেওয়ার ইচ্ছায় অনুপ্রাণিত হয়ে বন্টেনবেল রাস্তার কুকুরটিকে দত্তক নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। যেমন ভাবা, তেমন কাজ। সেই ইচ্ছে থেকেই শুরু হয় জয়ার জন্য পাসপোর্ট ও ভিসা তৈরির কাজ। বারাণসীর রাস্তা থেকে জয়া এবার পদার্পণ করতে চলেছে নেদারল্যান্ডসের নতুন বাড়িতে। সেখানেই শুরু হতে চলেছে এদেশের এক ভাগ্যবান পথকুকুরের নতুন জীবন।