মানব পাচারে প্রথম বাংলা, গার্হস্থ্য হিংসাও বেশি মমতার রাজ্যেই, শাণিত আক্রমণ নাড্ডার
তারাপীঠের সভায় তাঁর নয়া সংযোজন 'হিউম্যান ট্রাফিকিং'। তাঁর কথায়, 'বাংলায় সবচেয়ে বেশি মানব পাচার হয়।'
বীরভূম: পরিবর্তন যাত্রার সূচনাই প্রধান লক্ষ্য। তবে তার আগে তারাপীঠের চিলার মাঠে সভায় তৃণমূল সরকারকে এক হাত নিলেন তিনি। ‘নমস্কার’ করে স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিমাতেই শুরু করেছিলেন বক্তৃতা, তবে তাল কাটে শুরুতেই। মাইক বিভ্রাট। তারপর ফের স্বমহিমায় দেখা গেল বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডাকে। আর পাঁচ দিনের মতো দুর্নীতি থেকে উন্নয়ন-সব ইস্যুতেই শাসক শিবিরকে বেঁধেন তিনি। কিন্তু তারাপীঠের সভায় তাঁর নয়া সংযোজন ‘হিউম্যান ট্রাফিকিং’। তাঁর কথায়, ‘বাংলায় সবচেয়ে বেশি মানব পাচার হয়।’ দিলেন পরিসংখ্যান।
প্রারম্ভিক ভাষণে পুরনো ইস্যুগুলি তুলে ধরলেও এ দিন আচমকাই মানব পাচার ইস্যুতে বাংলাকে বিঁধলেন জেপি নাড্ডা। তিনি বলেন, “বাংলায় সবচেয়ে বেশি মানব পাচার হয়।” এমনকি তাঁর দাবি, বাংলার মেয়েরাই সবচেয়ে বেশি গার্হস্থ্য হিংসার শিকার। দেশের মধ্যে ৩০ শতাংশ গার্হস্থ্য হিংসা বেড়েছে বাংলায়। অপরাধ এখন বাংলাতেই সবচেয়ে বেশি। এ প্রসঙ্গে পার্ক স্ট্রিট গণধর্ষণকাণ্ডের কথা তুলে ধরেন তিনি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, গার্হস্থ্য হিংসার প্রসঙ্গ তুলে মমতাকে কার্যত ‘ট্রাম্প কার্ড’ দেখালেন জেপি নাড্ডা। তাঁদের দাবি, এ প্রসঙ্গ তুলে নড্ডা যেমন একদিকে বাংলার মেয়েদের আবেগকে ছুঁয়ে যেতে চেয়েছেন তেমনই মনে করিয়ে দিতে চেয়েছেন এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মহিলা হওয়া সত্ত্বেও এমন ঘটনা ঘটছে।
‘পরিবর্তনের ডাক’
বাকি বক্তৃতার সিংহভাগ জুড়ে মমতা সরকারের দুর্নীতি ও তোলাবাজ প্রসঙ্গ। পরিবর্তনের ডাক দিয়ে নাড্ডা বলেন, “মমতার রাজত্বে সঙ্কটে বাংলার সংস্কৃতি। এই সরকারের পরিবর্তন চাই। বাংলায় উন্নয়ন থমকে রয়েছে। বাংলার মাটিতে পরিবর্তন যাত্রার দ্বিতীয় পর্যায়ের সূচনা হবে। প্রধানমন্ত্রীর হাত ধরেই পরিবর্তন আসবে বাংলায়।”
‘প্রধানমন্ত্রীর হৃদয়ে বাংলা’
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কটাক্ষ করে বলেন, “আজ বাংলায় বহিরাগত তকমা দেওয়া হচ্ছে। বাড়ি বাড়ি গিয়ে বাংলার মানুষকে জাগাবে বিজেপি। প্রধানমন্ত্রীর হৃদয়ে রয়েছে বাংলা। হলদিয়ায় ৪,৭০০ কোটির প্রকল্প ঘোষণা করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বেই বাংলায় বদল আসবে। কলকাতা মেট্রো প্রকল্পে ৮৫০০ কোটির বরাদ্দ হয়েছে। জাতীয় সড়ক বাবদ ৭৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছেদিদি আপনি এত ভয় পাচ্ছেন কেন?”
‘মমতা নিজে কিছু করেন না, সব নকল করেন’
নাড্ডা বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর বিভিন্ন প্রকল্পের নাম পরিবর্তন হয়ে গিয়েছে। মমতাদি নিজে কিছু করেন না। সব নকল করেন। প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা বাংলা আবাস যোজনা।” স্লোগান তোলেন, “অনেক হয়েছে মমতা, এবার পরিবর্তন চাইছেন জনতা।”
‘ভাইপো যা বলেছে, তা ভাষার প্রকাশ করা যায় না’ নাড্ডা বলেন, “পূর্ব মেদিনীপুরের সভায় ভাইপো যা বলেছেন, তা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। কেন আমাকে ডায়মন্ড হারবারে বাধা দেওয়া হয়েছিল? ডায়মন্ড হারবারে গিয়ে কী অপরাধ করেছিলাম? হাজার বার ডায়মন্ড হারবার যাব। বাংলায় মানুষের বাক স্বাধীনতা নেই।”
মমতা আমলে বাংলার সংস্কৃতি বিপন্ন নাড্ডা বলেন, “মমতার আমলে তোষণ ও তোলাবাজির রাজনীতি চলছে। বাংলার সংস্কৃতি বিপন্ন। ভাই ভাইয়ের মধ্যে ঝামেলা লাগানো হচ্ছে। আগে বাংলা গোটা দেশকে পথ দেখাত। বাংলার মানুষকে জাগাবে বিজেপি।”
আরও পড়ুন: মাকে বিপদে রেখে যারা বিট্রে করে পালিয়ে যায়, তারা কুসন্তান: ‘অভিমানী’ মমতা
নাড্ডা পরিবর্তনের ডাক দিয়েই পরিবর্তন যাত্রার সূচনা করলেন। বক্তব্যের শুরু থেকে শেষ শাসক শিবিরকে বিঁধেছেন আর বার্তা দিয়ে গিয়েছেন, বাংলার মানুষের মনে রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তাই পরিবর্তন আসবেই।