মালবাজার: আফগান নাগরিকদের জন্ম-মৃত্যুর শংসাপত্র দিয়েছিল মাল পৌরসভাই। আফগান নাগরিকদের ভারতীয় নাগরিকত্ব পাইয়ে দিতেই তৃণমূল পরিচালিত মাল পুরসভার তরফে এই শংসাপত্র দেওয়া হয়। মূল উদ্দেশ্য ছিল তাদের পাসপোর্ট তৈরীতে সাহায্য করা। সেই লক্ষেই পুরসভার জন্মমৃত্যু দপ্তর বিভিন্ন জাল নথি সামনে রেখেই চুপিসারে আসল জন্ম-মৃত্যুর শংসাপত্র দিয়ে দেয়। এরপরেই সিবিআই রেডারে উঠে আসে মালবাজার। ওই পুরকর্মীর খোজে সিবিআই ও রাজ্য পুলিশ।
কীভাবে নজরে এল বিষয়টি? আসলে কয়েকদিন আগে দিল্লি বিমানবন্দর থেকে সন্দেহভাজন ছ’জনকে আটক করেছিল কেন্দ্রীয় সংস্থা সিবিআই। সিবিআই-এর সন্দেহ ছিল তাঁরা আফগান নাগরিক। ভুয়ো নথির মাধ্যমে তাঁরা ভারতীয় নাগরিকত্ব পেয়েছেন এবং পাসপোর্ট তৈরি করিয়েছেন বলে বুঝতে পেরেছিল সিবিআই।
ধৃতরা প্রত্যকেই তাঁদের জন্মের সরকারি নথি জমা দেন। আর সেগুলো মালবাজার পুরসভা এলাকার। এই বিষয়টা নজরে পড়তেই নড়েচড়ে বসে সিবিআই। ওই নথি ব্যবহার করেই তাঁরা পাসপোর্ট তৈরি করিয়েছিলেন। ঘটনার শিকড়ে পৌঁছতে আতস কাচের নীচে চলে আসে মালবাজার পুরসভা। গত নভেম্বর মাসে মালবাজার পুরসভাকে প্রথম নোটিস দেয় সিবিআই। উত্তর মেলেনি। গত ৫ ডিসেম্বর ফের মাল পুরসভাকে নোটিশ দেওয়া হয় সিবিআই-এর তরফে। এরপরই খোঁজ খবর শুরু হয়।
কে করল এমন কাজ? বিদেশি নাগরিকদের কীভাবে জন্ম শংসাপত্র দিয়ে দিল পুরসভা? এই নিয়ে বিস্তারিত তথ্য সিবিআই-কে জমা দিয়েছে পুরসভা। একইসঙ্গে ওই পুরকর্মী প্রসেনজিৎ দত্তের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ জানিয়েছে পুরসভা। এরপরই সপরিবারে বেপাত্তা ওই পুরকর্মী।
পুরসভা সূত্রে খবর, মোটা টাকার বিনিময়ে ওই ছয় আফগান নাগরিককে ভারতের জন্ম সার্টিফিকেট দিয়ে দেন ওই পুরকর্মী। তাঁদের পাসপোর্ট তৈরির জন্য ছয় আফগান নাগরিকের বাবা -মায়ের জন্ম-মৃত্যুর শংসাপত্রও দিয়েছিল মাল পুরসভা।
মাল পুরসভা সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, বার্থ সার্টিফিকেট সংক্রান্ত দফতরের দায়িত্বে ছিলেন যে কর্মী সেই প্রসেনজিৎ দত্ত কো-অর্ডিনেশন কমিটির সঙ্গে যুক্ত। ঘটনাটি সামনে আসায় এবং দেশের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় সিবিআই-কে নোটিসের উত্তর দেওয়ার পাশাপাশি পুলিশকেও সমস্ত বিষয় জানানো হয়েছে। এরপর থেকেই ওই কর্মীর খোঁজ মিলছে না।
এই বিষয়ে, চেয়ারম্যান স্বপন সাহা জানান, সিবিআই-কে সমস্ত তথ্য দেওয়ার পাশাপাশি পুলিশের কাছেও ওই কর্মীর বিরুদ্ধে অভিযোগ জানানো হয়েছে। ওই কর্মীর হাত থেকে দফতরের দায়িত্ব কেড়ে নেওয়া হয়েছে।
এই ঘটনার পিছনে বিপুল অঙ্কের লেনদেন ও প্রভাবশালীদের জড়িয়ে থাকার অভিযোগ তুলেছে বিজেপি। বিজেপির প্রশ্ন, একা একজন কর্মী দায়িত্ব নিয়ে ৬ আফগানি ও তাঁদের পরিবার মিলিয়ে মোট ১৫ জনকে ভারতীয় জন্ম-মৃত্যুর শংসাপত্র তৈরি করিয়ে দিলেন কীভাবে? কীসের বিনিময়ে? আর কারা এর মধ্যে আছেন তা জানতে চান বিরোধীরা। তাঁরা বলছেন, এই ভোটের রাজনীতি বন্ধ হোক। বিজেপির বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ বলেন, “ভয়ঙ্কর ঘটনা। তৃণমূলের পুরসভা আফগান নাগরিকদের এভাবে ভারতীয় শংসাপত্র ও পাসপোর্ট পেতে সাহায্য করছে। দেশের নিরাপত্তা প্রশ্নের মুখে। সীমান্ত পেরিয়ে অনুপ্রবেশকারীরা তৃণমূলের ছত্রছায়ায় এই সব করছে।”