হুগলি: ভরসন্ধ্যায় ভয়াবহ ঘটনা হুগলিতে। চোখের সামনে দৃশ্য দেখে শিউরে উঠলেন সঙ্গীরাও। বেশ কিছুক্ষণ ধরে বচসা চলছিল, তবে অলোক যে এই কাজ করে বসবেন, তা ভেবে উঠতে পারেননি কেউই। হুগলির পাণ্ডুয়ার খিরকুন্ডি নামাজ গ্রাম পঞ্চায়েতের কলিষন্ডা গ্রামের ঘটনা। ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে পুলিশ।
পাণ্ডুয়ার ওই এলাকার বাসিন্দা আসিফ হোসেন মোল্লার সঙ্গে একটি হার্বাল প্রোডাক্টের নেটওয়ার্ক ব্যবসা করতেন অলোক হাজরা নামে এক ব্যক্তি। তিনিও খিরকুন্ডির বাসিন্দা। কিছুদিন ধরে এই আসিফের সঙ্গে অলোকের সম্পর্কের অবনতি হতে শুরু করে। বুধবারও আসিফের সঙ্গে অলোকের বচসা শুরু হয়। সামনে ছিলেন আরও অনেকে। বারবার সম্মানহানি করা হচ্ছিল বলে অভিযোগ ছিল অলোক ও তাঁর স্ত্রী মৌসুমীর। সেই ইস্যুতে বচসা চলাকালীনই গায়ে আগুন লাগিয়ে দেন অলোক। জ্বলে যান স্ত্রী মৌসুমীও।
জানা গিয়েছে, দীর্ঘদিন একসঙ্গে হার্বাল নেটওয়ার্কের ব্যবসা করলেও সম্প্রতি তাদের সম্পর্কে ভাটা পড়ে। ব্যবসায়িক কারণে অলোকের কাছে অনেক টাকা পাওনা হয় আসিফের। সেই টাকা না পেয়ে আসিফ হোসেন মোল্লা অলোকের বিরুদ্ধে ফেসবুক লাইভে নানা মন্তব্য করতে থাকেন বলে অভিযোগ। তাতেই সম্মানহানি করার অভিযোগ উঠেছে অলোকের বিরুদ্ধে। জানা গিয়েছে, ‘চোর’, ‘চিটিংবাজ’ বলে সামাজিক মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছিল। আর তাতেই সামাজিক সম্মান নষ্ট হতে থাকে অলোকের! পোস্ট ডিলিট করতে বলা হলেও, আসিফ তা করেননি বলে দাবি অলোকের সহকর্মীদের।
বুধবার সন্ধ্যায় আসিফের বাড়ির সামনে অলোক ও তাঁর স্ত্রী মৌসুমী কয়েকজন লোক নিয়ে হাজির হন। সেই সময় আসিফ তাঁর মোবাইলের দোকানে ছিলেন। সেখান থেকেই ফেসবুক লাইভ করতে শুরু করে দেন তিনি। পরে সবাই আসিফের বাড়িতে যান। আবারও তাঁদের মধ্যে বচসা শুরু হয়। বচসা চলতে চলতে গায়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন দিয়ে দেন অলোক। স্বামীকে বাঁচাতে গিয়ে অগ্নিদগ্ধ হন তাঁর স্ত্রীও। আত্মহত্যা করা ছাড়া উপায় থাকবে না বলেই গায়ে আগুন দেন অলোক। বলার পর পেট্রোল গায়ে ঢেলে দেন, হঠাৎ করে আগুন ধরে যায়। অলোকের পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন মৌসুমী। দু’জনেই অগ্নিদগ্ধ হন।
এই পরিস্থিতিতে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান আসিফ। তাঁদের প্রথমে পান্ডুয়া গ্রামীন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতালে পাঠানো হয়। তাঁদের এক সহকর্মী পাপিয়া নন্দী বলেন, “একজন সৎ মানুষকে দিনের পর দিন ফেসবুক লাইভ করে মানসিক নির্যাতন করছিলেন আসিফ। তার বিচার চাইতে গিয়েছিলাম আমরা”।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, আসিফ ফেসবুক লাইভে বলেছিলেন, তাঁর বাড়িতে চড়াও হয়ে অসুস্থ মা-বাবাকে হুমকি দেওয়া হয়। তিনি অলোকের থেকে ৬ লক্ষ টাকা পেতেন বলে দাবি। সেটা চাইতেই মহিলা দিয়ে শ্লীলতাহানির মামলা করার ভয় দেখানো হয় বলে দাবি করেন আসিফ।
হুগলি গ্রামীন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কল্যাণ সরকার জানান, কোনও ব্যবসায়ীক সম্পর্ক থেকে এই ঘটনা। লোকজনের সামনেই আগুন লাগিয়ে দেয় ওই দম্পতি। অভিযোগ খতিয়ে দেখা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।