‘আমরাও জানি কীভাবে ভোট করাতে হয়…’, বিজেপিতে যোগ দিয়েই সুর চড়ালেন রাজীব
সদ্য প্রাক্তন তৃণমূল নেতা সুর চড়ালেন 'জয় শ্রী রাম, জয় জয় শ্রী রাম....' সভাস্থলে তখন গগণভেদী করতালি।
হাওড়া: রাত পেরিয়েছে। নতুন সূর্য! রাজনীতির ‘ভার্টিক্যালে ট্রেন্ডিং’এর হাওয়া আজ তাঁর গায়ে। গত রাতেই জার্সি বদল করেছেন তিনি। তাই হাওড়ার ডুমুরজলায় (Howrah Dumurjala Stadium) তাঁর বক্তব্যের রাজনৈতিক তাৎপর্য আজ অপরিসীম। আজ রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়কে (Rajib Banerjee) ঘিরে হাওড়াবাসী তো বটেই গোটা বাংলার মানুষ ছিলেন অত্যুৎসাহী। বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর কী বার্তা দিতে চান তিনি। বার্তা তো দিলেন রাজীব। এ-ও বললেন কীভাবে করাবেন একুশের নির্বাচন। রাজীব বললেন, “ধমকে চমকে নয়, রাজনৈতিক কর্মী হিসাবে আমরাও জানি কীভাবে ভোট করাতে হয়!”
বক্তব্যের মাত্রা টেনেই স্পষ্ট করে বললেন আসল বিষয়টি। রাজীব বললেন, “আমরাও জানি কীভাবে ভোট করাতে হয়। একুশের নির্বাচন হবে এক্বেবারে অবাধ ও শান্তিপূর্ণ। সঠিক পদ্ধতিতে ভোট হবে এবার।”
ডুমুরজলার এই সভা হাইভোল্টেজ, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। অমিত শাহর এই সভাতেই গত কয়েক মাস ধরে বঙ্গ রাজনীতিতে তাঁকে ঘিরে চলা জল্পনাকে বাস্তবায়িত করার কথা ছিল। কিন্তু দিল্লির বিস্ফোরণের জেরে সশরীরে এই সভায় উপস্থিত থাকতে পারেননি অমিত শাহ। তাই রাজীবের বিজেপিতে যোগদান হয়েছে শনিবার দিল্লিতেই। তবুও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এই সভার গ্ল্যামার এবং তাৎপর্য কোনও অংশেই ক্ষুন্ন হয়নি! কারণ বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর রাজীব কী বলবেন, সেটাই দেখার ছিল।
রাজীব বললেন, “আগামী ২০২১ এ পদ্ম ফুল ফুটবে সারা রাজ্যে। আমাকে যদি সুযোগ দেয় তাহলে শুধু ২৯৪টি আসনে নয় প্রতি বুথে বুথে প্রতিটি পাড়ায় পাড়ায় যাবো।” তিনিও এ দিন শুভেন্দুর মতোই বলেছেন, দলের একজন সাধারণ কর্মী হিসাবেই থাকতে চান তিনি। তবে তুলেছেন ‘পাল্টাই’এর স্লোগান।
রাজীব বলেছেন, অমিত শাহ যে লক্ষ্য বেঁধে দিয়েছেন, তাতে আমরা পৌঁছবই। বাংলার মানুষের আজ অনেক হতাশা। আগেও বাংলার মানুষের জন্য কাজ করেছি। প্রয়োজন হলে পাড়ায় পাড়ায়, বুথে বুথে যাব।” রাজীব বলেন, “আজ শিল্প সব শ্মশানে পরিণত হয়েছে। বিজেপি ক্ষমতায় এলে শিল্প আনব। আজ কাজ না পেয়ে রাজ্যের বাইরে যেতে হচ্ছে।”
সঙ্গে রাজীবের বলা একটি লাইন অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণভাবে উল্লেখ করতে চাইছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। রাজীসবকে এদিন বলতে শোনা গিয়েছে, “যতদিন বিজেপিতে থাকব, কর্মীদের অসম্মান করব না।” সম্পূর্ণ এমনটা না বললেও এরকমই আভাস দিতে শোনা গিয়েছিল শুভেন্দুকেও, তিনি যেদিন বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন। রাজনীতির কুশীলবরা বলছেন, আসলে রাজীব-শুভেন্দু প্রত্যেকেই দলের পুরনো কর্মীদের আস্থাভাজন হতে চাইছেন। সঙ্গে একেবারে রুটস্তরে তৈরি করতে চাইছেন সংগঠন। সেটা করতেই এই কথাগুলি বলছেন তাঁরা।
আরও পড়ুন: ‘আগামিকাল দুপুরে আমাকে একটু ঘরে ঢুকতে দিও প্লিজ’, ‘উইথ লাভ’ সুজাতা!
রাজীব বলেন, “যখন কেউ তৃণমূলে যোগ দেন তখন বলা হয় উন্নয়নের স্বার্থে। আর কেউ তৃণমূল ছাড়লে বলা হয় বিশ্বাসঘাতক। যত অপশব্দ ব্যবহার করবেন, তত মানুষের আশীর্বাদ পাব।” রাজীব বলেন, “কেন্দ্রে আর রাজ্যে একই দলের সরকার প্রয়োজন। এক ইঞ্জিন সরকার প্রয়োজন।” তিনি প্রশ্ন তোলেন, “আপনারা বলুন এই সরকার কী করেছে? ভোটের আগে স্বাস্থ্য সাথী কার্ড? সব ভাওতাবাজি। হাওড়ায় কোনও শিল্প নেই। সব শ্মশানে পরিণত হয়েছে।” এরপরই বক্তৃতা শেষে ‘চলুন পাল্টাই’ এর স্লোগান তুললেন তিনি। সদ্য প্রাক্তন তৃণমূল নেতা সুর চড়ালেন ‘জয় শ্রী রাম, জয় জয় শ্রী রাম….’ সভাস্থলে তখন গগণভেদী করতালি।