Malda Murder: নমাজে অনীহা ছিল আসিফের, বাড়ি থেকে উদ্ধার ৫টি সেভেন এমএম পিস্তল ও ১০টি কার্তুজ!

পুলিশ সূত্রে খবর, সাবির আলি এবং মহফুজ শেখ আসিফের দীর্ঘদিনের বন্ধু।  আসিফের বন্ধু মহফুজ খান জানিয়েছে, ল্যাপটপ, কম্পিউটার অনেক যন্ত্রপাতি নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করত। নিজের দোতলার ঘরে বা গোডাউনে কোনওদিন ঢুকতে দেয়নি। কিছুদিন আগে আসিফ বাড়ি ছিল না। তখন আসিফের দাদা আরিফ আর তার মামা এসেছিলেন বাড়িতে।

Malda Murder: নমাজে অনীহা ছিল আসিফের, বাড়ি থেকে উদ্ধার ৫টি সেভেন এমএম পিস্তল ও ১০টি কার্তুজ!
ছবির বাঁদিক থেকে, আসিফ ,সাবির ও মহফুজ, নিজস্ব চিত্র
Follow Us:
| Updated on: Jun 20, 2021 | 12:11 PM

মালদা: নাটকীয় মোড় মালদা-কাণ্ডে! আসিফের বাড়ি থেকে উদ্ধার হল ৫টি সেভেন এমএম পিস্তল ও ৮৪ রাউন্ড গুলির ১০টি কার্তুজ। আটক করা হয়েছে আসিফের দুই বন্ধু সাবির আলি ও মহফুজ শেখকে। এছাড়াও, আরও সন্দেহভাজন ১৫ জনের খোঁজ চালাচ্ছে পুলিশ।

পুলিশ সূত্রে খবর, সাবির আলি এবং মহফুজ শেখ আসিফের দীর্ঘদিনের বন্ধু।  আসিফের বন্ধু মহফুজ খান জানিয়েছে, আসিফ ল্যাপটপ, কম্পিউটার অনেক যন্ত্রপাতি নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করত। নিজের দোতলার ঘরে বা গোডাউনে কোনওদিন ঢুকতে দেয়নি। কিছুদিন আগে আসিফ বাড়ি ছিল না। তখন আসিফের দাদা আরিফ আর তার মামা এসেছিলেন বাড়িতে। কিছুদিন ছিলেন সেই ‘মামা’। তবে পরে তিনি কোথায় গেলেন বা কে ই বা ছিলেন তা স্পষ্ট নয়।  আসিফের হাতে কোনওদিন টাকা পয়সা দেখা যায়নি। এমনকী নিজের ঘর থেকেও সে বিশেষ বেরত না বলেই জানিয়েছে মহফুজ। শুধু তাই নয়, মহফুজ আরও জানিয়েছে, বাড়িতে রাতের বেলা মিস্ত্রীর কাজ করত আসিফ। তদন্তকারীদের অনুমান, সেইসময়েই ওই সুড়ঙ্গ খোঁড়া হয়েছিল।

আসিফের অন্য বন্ধু সাবির আলি তার বয়ানে জানিয়েছে, ব্যাঙ্গালোরে নার্সিং নিয়ে পড়াশোনা করে সে। স্কুল থেকেই বন্ধু ছিল সাবির। সে জানিয়েছে, তিন চারটি মোবাইল ছিল আসিফের। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ফোনে ফোন আসত। তবে বন্ধুদের সামনে আসিফ ফোন ধরত না। পড়াশোনা ছেড়ে দেওয়ার পরও আর নতুন করে পড়াশোনা করতে চায়নি আর। সাবিরের কথায়, “নমাজ পড়ার কথা বললে বলত,  ‘নমাজ পড়ে কী হবে! আমি টাকা পাব!’ ওর কথা শুনে মনে হত, ওর খুব টাকার চাহিদা।” পুলিশ আরও জানিয়েছে, সাবিরের সঙ্গেই চামাগ্রাম হাইস্কুল থেকে পড়াশোনা শেষ করে আসিফ। মাধ্যমিকের পর থেকে সায়েন্স নিয়ে পড়ার পরিকল্পনা করে সে। এমনকী, মাধ্যমিকের পর থেকে ল্যাপটপ,  মোবাইল, কম্পিউটার কেনার জন্য  বাড়িতে চাপ দিয়েছিল আসিফ। মাঝেমধ্যেই বাড়িতে বন্ধুদের ডেকে পাঠাত আসিফ। তবে, নিজের ঘরে ঢুকতে দিত না। বন্ধুদের বারবার আসিফ জানিয়েছিল, তার বাবা অন্য জায়গায় চাকরি পেয়ে গিয়েছেন। সেখানেই চলে যাবে। তবে ঘন ঘন ইলেকট্রনিক ডিভাইস কিনে আনত আসিফ। প্রায় পঞ্চাশ হাজার টাকা দিয়ে সম্প্রতি ইনভার্টারও কিনেছিল সে। মাঝেমধ্যেই বন্ধুদের বাড়িতে ডেকে এনে পিকনিক করতও আসিফ। তবে, আসিফ ও তার দাদা আরিফকে কোনওদিনই একসঙ্গে দেখেনি কেউ। এমনকী, আসিফ বা আরিফকে জিজ্ঞেস করলে দুজনেই বলত, বাড়ির সকলে বাইরে আছেন, ভাল আছেন। সময় হলেই ফিরবেন। কিন্তু তাঁরা কোথায় গিয়েছিলেন তা কেউ জানত না। সাবিরের মা পলি বিবি বলেছেন, “আসিফ বারবার বলত তার মা-বাবা ঠিক আছেন। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি, আমি শেষ আসিফের মা-বাবার সঙ্গে দেখা করি। ওরা বলেছিল, এখানে থাকবে না। অন্য জায়গায় চলে যাবে। ওদের অনেক জমিজমা ছিল। সেইসব বিক্রি করে দিয়েছে।”

তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, মাস তিনেক আগে আসিফকে যখন আটক করা হয়, তখন ব্যাঙ্গালোরে ছিল সাবির এমনটাই সে জানিয়েছে তার জবানবন্দিতে। মুখে নার্সিং পড়ার কথা বললেও আদৌ সে নার্সিং পড়তেই ব্যাঙ্গালোরে গিয়েছিল  কি না তা নিয়ে ইতিমধ্যেই সংশয় প্রকাশ করেছেন গোয়েন্দারা। কালিয়াচকের পুলিশ জানিয়েছে, সাইবার জালিয়াতির কারণে কেবল নয়, পরে কিডন্যাপিংয়ের জন্যেও আসিফকে আটক করেছিল পুলিশ। জানা গিয়েছে, আসিফ ও তার বন্ধুরা নিজেরাই নিজেদের অপহরণ করে আসিফের বাবার থেকে আড়াই লক্ষ টাকা মুক্তিপণ আদায় করেছিল। পরে তারা ধরাও পড়ে। শুধু তাই নয়, হ্যাকারদের সঙ্গেও আসিফের নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশের অনুমান, এই ঘটনায় সাবিরও যুক্ত। ব্যাঙ্গালোরে হ্যাকারদের সঙ্গে আসিফের যুক্ত হওয়ার পেছনে সাবিরের হাত থাকতে পারে। কারণ, সাবির ব্যাঙ্গালোরে থাকার দাবি করলেও প্রায় একমাস যাবৎ তাকে পাওয়া যায়নি। একই সঙ্গে আসিফ কোনও বৃহত্তর সাইবার জালিয়াত চক্রের সঙ্গে যুক্ত বলেই মনে করছেন তদন্তকারীরা। তবে বন্দুক, কার্তুজ বাড়িতে কেন রেখেছিল আসিফ তা নিয়ে ধন্দে গোয়েন্দারা। শুধুমাত্র পরিবারকে খুনের জন্যই বাড়িতে আগ্নেয়াস্ত্র মজুত রাখা হয়েছিল নাকি অন্য কোনও কারণ আছে তা স্পষ্ট নয়। শুধু তাই নয়, এর পেছনে কোনও সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীর হাত থাকাও অস্বাভাবিক নয় বলেই মনে করছে পুলিশ।

আরও পড়ুন: Malda Murder: বিট কয়েন কেলেঙ্কারিতে যুক্ত ছিল আসিফ! মালদা কাণ্ডে ছিন্ন সূত্র যোগে তৎপর গোয়েন্দারা