Maldah: ‘কবরটা দিতে পর্যন্তও আসেনি কেউ…’ সমাজচ্যুত তৃণমূল কর্মী, গ্রামছাড়া গোটা পরিবার

Subhotosh Bhattacharya | Edited By: শর্মিষ্ঠা চক্রবর্তী

Jun 24, 2024 | 4:41 PM

Maldah: সালিশিতে নিদান দেওয়া হয়, হবিবুলের পরিবারের সঙ্গে কেউ কথা বললে দিতে হবে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা। কোনও দোকান জিনিস দেবে না। বন্ধ মুদির দোকান। নিয়মিত বাজার হাট, নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস কেনায়  বারণ। এমনকি বাড়িতে অসুস্থ হলেও পাবেন না গ্রাম্য ঔষধের দোকানে ওষুধও!

Maldah: কবরটা দিতে পর্যন্তও আসেনি কেউ... সমাজচ্যুত তৃণমূল কর্মী, গ্রামছাড়া গোটা পরিবার
গোটা পরিবারকে বয়কট
Image Credit source: TV9 Bangla

Follow Us

মালদহ: জমি সংক্রান্ত একটি পারিবারিক বিবাদ। আর তা নিয়েই গ্রামে সালিশি সভা। সেই সভায় নিদান, তৃণমূল কর্মী সমর্থকের এক পরিবারকে সমাজচ্যুত করার। রাস্তায় ফেলে তাঁদের বেধড়ক মারধরের পর গ্রাম ছাড়া করার নিদান। এমনই ভয়ঙ্কর অভিযোগ উঠল। প্রাণ ভয়ে এক বসনেই গ্রাম ছেড়ে পাশের গ্রামে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন ওই কর্মী ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা।  কাঠগড়ায় অভিযুক্ত তৃণমূল প্রধানের স্বামী। ইতিমধ্যেই জেলাশাসক, পুলিশ সুপার, মন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রীকেও গোটা বিষয়টি জানানো হয়েছে। মোথাবাড়ির বিধায়ক সাবিনা ইয়াসমিনের তৎপরতায় ইতিমধ্যেই ৯ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তবে মূল অভিযুক্ত পঞ্চায়েত প্রধানের স্বামী সানাউল শেখ অধরা। অধরা গ্রামের মোড়লও।  ঘটনাকে ঘিরে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে মোথাবাড়ি বিধানসভা কেন্দ্রের রাজনগর গ্রাম পঞ্চায়েতের নয়াগ্রামে।

নিগৃহীত  তৃণমূল কর্মীর নাম হবিবুল রহমান। জানা গিয়েছে, তাঁরই খুড়তুতো ভাই কাসিম শেখের সঙ্গে একটি পারিবারিক জমি নিয়ে বিবাদ দীর্ঘদিনের। সেই সমস্যা সমাধানেই গ্রামে সালিশি সভার আয়োজন করা হয়। আর তার জন্য হবিবুলের কাছ থেকে ৫ হাজার টাকা নেওয়া হয় বলে অভিযোগ। হবিবুলের দাবি, প্রথম সালিশিতে তাঁকে বাড়ির সামনের কিছুটা অংশ ছেড়ে দিতে বলা হয়। কিন্তু তাতে রাজি হন না হবিবুল। ফলে জটিলতা থেকেই যায়। এরপর গ্রামে আবারও সালিশি ডাকা হয়। অভিযোগ, প্রত্যেক সালিশি সভা বসার জন্য হবিবুলের কাছ থেকে পাঁচ হাজার টাকা করে নেওয়া হয়।  কাঠগড়ায় গ্রামের প্রধানের স্বামী  সানাউল শেখ।

হবিবুলের দাবি, এসবের মাঝেই এক সালিশিতে গ্রামের মোড়ল নিদান দেন দেড় লক্ষ টাকা জরিমানা দিতে হবে তাঁকে। কিন্তু দেড় লক্ষ টাকা দিতে পারেননি তিনি। সেক্ষেত্রে তাঁর বোনের এক জোড়া কানের দুল বন্ধক রাখতে হয় প্রধানের স্বামী সানাউলের কাছে। এমনটাই দাবি তাঁর। জমির সমস্যা তখনও মেটেনি। এই ঘটনার দিন পেনরো বাদে আবারও সালিশি ডাকা হয় আর হবিবুলের কাছ থেকে পাঁচ হাজার টাকা চাওয়া হয়। কিন্তু এবার আর হবিবুল সালিশিতে যাননি। এরপর গ্রামেই মোড়ল ভাদু শেখ বৈঠক ডেকে হবিবুলের পরিবারকে বয়কট করার নিদান দেন।

হবিবুলের আরও অভিযোগ, গ্রামে তাঁদের একঘরে করতে সালিশিতে নিদান দেওয়া হয়, তাঁর পরিবারের সঙ্গে কেউ কথা বললে দিতে হবে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা। কোনও দোকান জিনিস দেবে না। বন্ধ মুদির দোকান। নিয়মিত বাজার হাট, নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস কেনায়  বারণ। এমনকি বাড়িতে অসুস্থ হলেও পাবেন না গ্রাম্য ঔষধের দোকানের ওষুধও! শুধু তাই নয়, যাওয়া বন্ধ মসজিদেও। ইদেও নামাজ পড়েনি ওই পরিবার। এমনকি পরিবারের এক সদস্যের মৃত্যুতে কবর দিতেই পাশে পাননি গ্রামের কাউকে।

এই নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে আর্তি জানিয়ে চিঠি করেছিলেন হবিবুল। অভিযোগ জানিয়েছেন ডিএম, এসপি থানা-সহ সব জায়গায়। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। ইতিমধ্যেই গ্রেফতার ৯ জন। তবে এখনও মূল অভিযুক্ত গ্রেফতার হয়নি বলে দাবি ওই পরিবারের। তৃণমূল কর্মী হয়েও তৃণমূল নেতার দাপটে এখনও গ্রামে ঢুকতে পারছেন না তাঁরা। এই নিয়ে এলাকার বিধায়ক তথা মন্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন পুলিশ, প্রশাসন তৎপর।

হবিবুলের বাবার বক্তব্য, “আমরা থানায় অভিযোগ জানানোর পর হামলা হয়। আমার বাড়িতে হামলা হয়, বাড়িতে ভাঙচুর হয়।তিন ঘণ্টা ধরে ভাঙচুর চলে। পরিবারের এক সদস্যের মৃত্যুতে কবরটা দিতেও আসেননি কেউ। আমরা ভয়ে গ্রাম ছাড়া। এখনও মূল অভিযুক্তরা অধরা। তাই ভয়ে গ্রামে ঢুকতে পারছি না। পরিবারের এক সদস্যের মৃত্যুতে কবরটা দিতেও আসেননি কেউ।” অভিযুক্ত গ্রামের মোড়ল ভাদু শেখের অবশ্য সাফ বক্তব্য, “ওরা সমাজের কথা শোনেনি। ওরা কেবল নিজেদের কথাই শোনে। পাঁচ বার সালিশি করেছি। সালিশির নিদান ওরা মানেনি। আট মাস ধরে এই ঘটনা ঘটছে। ওকে অনেক ফেসিলিটি দেওয়া হয়, কিন্তু ওরা ওদের ভুলটাও স্বীকার করল না।” মোথাবাড়ি এবং উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, “আইননত ঠিক কাজ হয়নি। প্রশাসন কড়াভাবে দেখছে। পদক্ষেপও করেছে।”

Next Article