নতুন বিপদের নাম ‘মিস-সি’, মা-বাবার করোনা সারতেই জ্বর-সর্দি-বমি নিয়ে শিশুদের লাইন মালদহ মেডিক্যালে
Maldah: এখনও অবধি ২০ জন শিশু মিস-সি নিয়ে মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি। এদের অধিকাংশের ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে বাড়িতে কেউ না কেউ করোনা আক্রান্ত হয়েছেন।
মালদহ: একে করোনার দাপাদাপি। তার উপর আবার নতুন বিপদ এসে হাজির বঙ্গে। নাম মিস-সি। পোশাকি নাম মাল্টি সিস্টেম ইনফ্ল্যামেটরি সিনড্রম (Multisystem Inflammatory Syndrome) বা মিস-সি (MIS-C)। মালদহে কমপক্ষে ২০ জন শিশুর শরীরে এই রোগের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গিয়েছে। সকলেই মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি। শিশু বিভাগে চিকিৎসা চলছে তাদের। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, করোনার উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে তারা। এই মিস-সি মূলত কোভিড পরবর্তী ক্লিনিক্যাল সিনড্রম বলেই জানাচ্ছেন চিকিৎসকরা।
করোনার তৃতীয় ঢেউয়ের সম্ভাবনা নিয়ে ইতিমধ্যেই রাজ্যজুড়ে আতঙ্কের আবহ। প্রথম দিকে চিকিৎসকদের একাংশ বলছিলেন, সংক্রমণের তৃতীয় ঢেউয়ে সর্বাপেক্ষা কাবু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বাচ্চাদের। যদিও পরবর্তী কালে বিভিন্ন সমীক্ষায় সে তত্ত্বে বদল এসেছে। শিশুদের মধ্যে করোনা প্রতিরোধ করার ক্ষমতা নিয়ে নানা স্বস্তিদায়ক গবেষণাও সামনে এসেছে। তবে এসবের মধ্যেই মালদহের এই নতুন বিপদ আতঙ্ক বাড়াচ্ছে।
এখনও অবধি ২০ জন শিশু মিস-সি নিয়ে মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি। এদের অধিকাংশের ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে বাড়িতে কেউ না কেউ করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। তার প্রভাব পড়েছে শিশুদের শরীরেও। জ্বর, সর্দি-কাশি, শ্বাসকষ্ট, এমনকী গায়ে-হাতে লাল দাগ, বমি, পাতলা পায়খানার উপসর্গও দেখা যাচ্ছে শিশুদের মধ্যে। চিকিৎসকরা বলছেন, এসব উপসর্গ মাল্টি সিস্টেম ইনফ্ল্যামেটরি সিনড্রমের।
যদিও মিস-সি’র সঙ্গে করোনার সরাসরি কোনও সম্পর্ক নেই। মালদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শিশু বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান সুষমা সাহু জানান, এই মুহূর্তে মালদহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২০টি শিশু মিস-সি আক্রান্ত হয়ে শিশু বিভাগে ভর্তি রয়েছে। তাদের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে মার্চ, এপ্রিল ও মে— এই তিন মাসে তাদের বাবা, মা কিংবা বাড়ির লোকজন কোভিড আক্রান্ত হয়েছিলেন। সেই সময় বাচ্চা তাদের সান্নিধ্যে এসেছিল। কিন্তু সেই সময় বাচ্চাদের মধ্যে করোনার কোনও উপসর্গ ধরা পড়েনি। উপসর্গ না থাকায় তাদের করোনা পরীক্ষা করাও হয়নি।
কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে সেই বাচ্চাদের মধ্যে জ্বর, চোখ লাল হওয়া, ঠোট লাল হওয়া, গায়ে চাক চাক বের হওয়ার মতো সমস্যা হচ্ছে। মালদহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগের চিকিৎসক সুষমা সাহুর পরামর্শ, এই উপসর্গগুলি বাচ্চাদের মধ্যে দেখা দিলেই তাদের যেন ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে এই উপসর্গের মানেই করোনা বা মিস-সি এমনটাও ধরে নেওয়া ঠিক হবে না বলেই মত চিকিৎসক সাহুর। একই সঙ্গে তিনি জানান, মিস-সি করোনা পরবর্তী ক্লিনিক্যাল সিনড্রম। এটা দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রভাবে হচ্ছে।
সুষমা সাহুর কথায়, “মনে করা হচ্ছিল করোনার তৃতীয় ঢেউ বাচ্চাদেরই বেশি কাবু করবে। সে কারণে আমরা সমস্ত রকম প্রস্তুতিও নিয়েছি। বাচ্চাদের এখনও যেহেতু ভ্যাকসিন দেওয়া হয়নি, তাই ওদের নিয়ে একটা আলাদা চিন্তা রয়েছেই। কিন্তু এখনও পর্যন্ত বাচ্চাদের মধ্যে করোনার ঢেউ আছড়ে পড়েছে বলে আমরা দেখতে পাচ্ছি না। বরং মাল্টি সিস্টেম ইনফ্ল্যামেটরি সিনড্রমে এখন বাচ্চারা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। গত এক মাস ধরে মালদহ মেডিকেল কলেজে আমরা এরকম উপসর্গযুক্ত বাচ্চা বেশি করে পাচ্ছি। তবে আমরা তার চিকিৎসাও ইতিমধ্যেই শুরু করেছি।” আরও পড়ুন: সংক্রমণের মাঝেও শিশুদের জন্য খানিক স্বস্তি, কোভিডের সঙ্গে লড়াইয়ের ক্ষমতা বাচ্চাদের অনেক বেশি বলছে গবেষণা