Abhishek Banerjee in Keshpur : বাংলা জুড়ে তৃণমূলের মুখ হসিনউদ্দিন, পঞ্চায়েতের প্রাক্কালে পরিচয় করালেন অভিষেক
Abhishek Banerjee in Keshpur : “নেতাদের রেষারেষিতে যদি দলের মাথানত হয় তাহলে আমি কিন্তু ছেড়ে কথা বলব না।” কেশপুর থেকে সাফ বার্তা অভিষেকের।
কেশপুর : মঞ্চে উঠেই বললেন এটাই তাঁর জীবনের শ্রেষ্ঠ জনসভা। কারণ, কেশপুরের এই সভা ছাপিয়ে গিয়েছে তাঁর আগের সমস্ত সভার জমায়েতকে। সম্ভবত সে জন্যই এই সভাকেই দলের গোষ্ঠীকোন্দল প্রসঙ্গে কড়া বার্তা দিতে দেওয়ার জন্য শ্রেষ্ঠমঞ্চ হিসাবে বেছে নিলেন তৃণমূলের (Trinamool Congress) সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee)। দলের নির্বিকল্প দু’নম্বর সটান জানিয়ে দিলেন, মমতাই ঠিক করবেন পঞ্চায়েতের প্রার্থী। ফলে এ বিষয়ে অন্তর্দলীয় কোন্দল করে কোনও লাভ নেই।
শনিবারের সভা থেকে অভিষেক ‘অপশাসন’ নিয়ে লাগাতার তোপ দাগেন বিজেপির বিরুদ্ধে। এরপরই আচমকা শেখ হসিনউদ্দিন নামে এক ব্যক্তিকে স্টেজে ডেকে নেন তিনি। যা দেখে খানিক বিস্মিত হয়ে যায় সমবেত জনতা। তাঁদের অবাক চোখের দিকে তাকিয়ে অভিষেকের উত্তর, “ইনি সিপিএম, বিজেপি, তৃণমূল, নির্দল, কংগ্রেস কিছুই করেন না। এঁকে দেখে কী মনে হয়? চোর? যাঁরা বলছেন, তৃণমূলের প্রধানকে টাকা দিয়ে বাড়ি পেতে হয় তাঁদের বলব এই মানুষটির কথা।” তবে এখানেই শেষ নয়, বাকি ছিল আরও বড় চমক।
অতি সাধারণ হসিনউদ্দিনের কাঁধে হাত রেখে অভিষেক এরপর বলেন, “এই ভদ্রলোকের নামে বাড়ি এসেছে। তিনি কোনও দল করেন না। তালিকায় যখন এঁর নাম এসেছে, তখন প্রধানকে গিয়ে বলেছেন আমার টাকার দরকার নেই। ওঁকে প্রশাসনের তরফে ফোন করা হলেও উনি বলেন, আমি বাড়ির টাকা নেব না। কারণ, আমার এক ছেলে রয়েছে, এক মেয়ে রয়েছে। আমি অনেক কষ্টে মেয়েকে পড়াশোনা করিয়ে বড় করেছি। এখন ১ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা আমাকে দেবে বাড়ি করতে। আমি যদি ছোট্ট বাড়ি করি তাহলে আমার আরও বাড়তি ৩ লক্ষ টাকা খরচ হবে। এই টাকা খরচ হলে আমি মেয়ের বিয়ে দিতে পারব না।” অভিষেকের কথায়, এটাই বাংলার কৃষ্টি-সংস্কৃতি। এরপরই হসিনউদ্দিনের একচালা বাড়ির একটি বড় ছবিও স্টেজ থেকে সকলের উদ্দেশে তুলে ধরেন অভিষেক। তবে চমক বাকি তখনও।
এর অব্যবহিত পরেই সমবেত জনতার উদ্দেশে প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে অভিষেক বলেন, “আপনারা ভাবছেন আমি কেন হসিনউদ্দিনকে ডাকলাম তাই তো? উনি তো তৃণমূল করেন না। তাও কেন ডাকলাম?” নিজেই প্রশ্নের উত্তরে সকলকে চমকে দিয়ে বলেন, ডাকলাম কারণ, হসিনউদ্দিনবাবুর মতো লোকই আগামীতে পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূলের মুখ হতে চলেছে। এই লোকেদের আমরা স্বীকৃতি দেব। গোটা বাংলাতেই গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি আর জেলা পরিষদের মুখ হতে চলেছে হসিনউদ্দিনবাবুর মতো লোকেরা। আমি এটা আজ বলে যাচ্ছি। এনারা আমাদের গর্ব।” এরপরেই হসিনউদ্দিনের মেয়ের বিয়ের দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেন অভিষেক। বলেন, “আপনার মেয়ের বিয়ে নিয়ে চিন্তা অনেকদিনের। ওর বিয়ের যাবতীয় দায়িত্ব আমার।” হসিনউদ্দিনকে নিজের হাতে উত্তরীয়ও পরিয়ে দেন অভিষেক। পাল্টা হাসিমুখে অভিষেককে জড়িয়ে ধরেন তিনি।
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি কেশপুর থেকেই লাগাতার তৃণমূল নেতাদের বিরুদ্ধে গোষ্ঠী কোন্দলের অভিযোগ উঠেছে। পঞ্চায়েত ভোটের আগেও রাজ্যের নানা প্রান্তে দেখা গিয়েছে একই ছবি। ফলে অস্বস্তি বেড়েছে শাসকদলের। এই প্রেক্ষাপটে অভিষেকের এমন পদক্ষেপ দলের ‘ভাবমূর্তি’ পুনরুদ্ধারে নতুন করে অক্সিজেনের কাজ করবে কি না তা বলবে আগামী।