Dibakar Jana: ‘কারোর বাপের টাকায় সম্পত্তি কিনিনি’, পান মান্ডিতে কাজ করা বহিষ্কৃত তৃণমূল নেতার সম্পত্তি কত?
Dibakar Jana: বাউন্ডারি ওয়াল দ্বারা ঘেরা পেল্লাই আকৃতির হোটেলটির ভিতর কী নেই! অভিজাত আসবাব পত্র, এসি আরও কতকিছু...।
পূর্ব মেদিনীপুর: বাবার পানের দোকান ছিল। শুরুটা হয়েছিল সেখান থেকেই। প্রথমে পানমান্ডিতে ভাঙার কর্মী হিসেবে কাজ, তারপর ধীরে-ধীরে রাজনীতিতে প্রবেশ। ২০০৭ সাল নাগাদ অর্থাৎ বাম জমানায় জঙ্গি আন্দোলন করে প্রচার পান। এরপর প্রাথমিক শিক্ষক আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকায় দেখা গিয়েছে তাঁকে। দু’বার বহিষ্কৃতও হয়েছেন শাসকদল থেকে। এখন যদিও, তৃণমূলে নেই। তবে পদ যায়নি তাঁর। পরিচয় একটি রয়েছে। তিনি বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর অনুগামী। কথা হচ্ছে, পূর্ব মেদিনীপুরের পূর্বে মাতাঙ্গিনী ব্লকের বহিষ্কৃত তৃণমূল নেতা দিবাকর জানার। একসময় ঘাসফুলের টিকিটে জয়ী হয়েছিলেন। আজ তাঁর বাড়ি ও সম্পত্তি সামাজিক মাধ্যমে আলোচনা কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে।
দিবাকর জানার সম্পত্তির ফিরিস্তি
পূর্ব মেদিনীপুরের নোনাকুঁড়ি বাজারে প্রত্যাশা গহনার একটি দোকান রয়েছে দিবাকর বাবুর। আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু কিন্তু সেই দোকানটি নয়। কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে তাঁর প্রত্যুষা গেস্ট-হাউসটি। স্থানীয় সূত্রে খবর, বাউন্ডারি ওয়াল দ্বারা ঘেরা পেল্লাই আকৃতির হোটেলটির ভিতর কী নেই! অভিজাত আসবাব পত্র, এসি আরও কতকিছু…। আর বাইরেটা যেন তাজমহলের জলাশয়ের অনুকরণে তৈরি। সন্ধেবেলা হলুদ রঙের তৈরি এই বাড়ির আলোকসজ্জা দেখে চোখ আটকে যাবে আপনারও। তবে অভিযোগ, এই সমস্ত কিছু নাকি অসৎ উপায়ে অর্জিত হয়েছে। হোটেলটির মালিক দিবাকর বাবুর স্ত্রী।
দিবাকরের পরিচিতি
বাম জমানার তখন শেষ পর্ব। কোলাঘাট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে তৃণমূল শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা হিসেবে দিবাকরের রাজনৈতিক উত্থান শুরু। ক্রমে শ্রমিক নেতার গণ্ডি ছাড়িয়ে শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লকে দলের নেতৃত্বের রাশ আসে তাঁর হাতে। রাজ্যে পালাবদলের পরে ২০১৩ সালে প্রথমে জেলাপরিষদ সদস্য ও পরে পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি হন তিনি। ঢুকে পড়েন প্রশাসনিক ক্ষমতায়। শাসকদলের নেতা বিতর্কে কখনও পিছু ছাড়েনি দাপুটে মাতাঙ্গিনী দিবাকরের। এলাকায় ‘লালু’ বলে এক নামে সকলে চেনেন তাঁকে। বিভিন্ন সময় নানা অপ্রীতিকর ঘটনায় তাঁর নাম জড়িয়েছে।
সালটা ২০১৫। তৎকালীন মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্রের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে সরব হওয়ায় দিবাকরকে সাসপেন্ড করে তৃণমূল জেলা নেতৃত্ব। তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হয় তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের শ্রমিক ইউনিয়নের কার্যকরী সভাপতি পদ থেকেও। তৎকালীন দিবাকরের বন্দুকের লাইসেন্স বাতিল করে থানায় জমার নির্দেশ দেয় প্রশাসন।
যদিও দিবাকরের ঘনিষ্ঠদের একাংশের মতে, তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের শ্রমিক নেতার পরিচয় ছাড়াও তিনি বিভিন্ন পদে ছিলেন। জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতা হিসেবে তাঁর নিজস্ব একটা ভাবমূর্তি রয়েছে। আর সেই পরিচয় ‘নষ্ট’ করতে নারাজ দিবাকর। তাই প্লান্ট আধিকারিক মারধরের ঘটনায় প্রথমে উচ্চ আদালতে আগাম জামিনের আবেদন করার পরিকল্পনা থাকলেও শেষমেশ আত্মসমর্পণ করার সিদ্ধান্ত নেন তিনি।
রাজনৈতিক জীবন জেলার প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ আন্দোলন ২০০৭ সালে। কোলাঘাট শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা, মাতাঙ্গিনী ব্লকের সভাপতি, পরে সহ সভাপতি। শিক্ষক আন্দোলন করার পর থেকেই নন্দীগ্রাম আন্দোলন চলছিল। সেই সময় তৎকালীন তৃণমূলের প্রভাবশালী নেতা শুভেন্দু অধিকারীর বিশেষ অনুগামী ছিলেন দিবাকর। শোনা যায়, কয়েকশো প্রাথমিক চাকরি দিয়েছেন। তবে, ছাই দুর্নীতি, পঞ্চায়েতে মোরাম দুর্নীতি, সহ একধিক দুর্নীতির অভিযোগও রয়েছে দিবাকরের বিরুদ্ধে।
দু’বার রাজনৈতিক ভাবে দল থেকে বহিষ্কৃত হন দিবাকর। একবার ২০১৫ সালে অন্যবার ২০২০-তে। আর ঘাসফুল শিবিরে ফেরা হয়নি। ২০১৯ সালের পর পদ্ম শিবিরে নাম লেখান দিবাকর। বর্তমানে শুভেন্দু অধিকারী ঘনিষ্ট হয়েই রয়েছেন বলে খবর। এখন তিনি সরাসরি প্রতুষা গেস্ট হাউস থেকেই তাঁর কর্ম জীবন নির্বাহ করেন। যদিও সেই ভাবে বিজেপির কোনও কর্মসূচিতে দেখা যায়নি তাঁকে।
দিবাকর জানার প্রতিক্রিয়া
বাড়ি নিয়ে দিবাকর জানা বললেন, “আমি একটাই কথা বলবো কারোর বাপের টাকা নিয়ে আমার ব্যবসা বা এই সম্পত্তি কিনিনি। আমার পৈতৃক সম্পত্তি ও মেহনতি করেই এ সব করেছি। কারোর যদি আপত্তি থাকে সিস্টেম মতো আসুন, সব তথ্য দেব। এর থেকে বেশি কিছু বলব না।”
তৃণমূল নেতা ও এক সময়ের সহ কর্মী জয়দেব বর্মণের অভিযোগ, ‘‘দলীয়ভাবে ওঁদের সঙ্গে সঙ্গতিবিহীন প্রভূত সম্পত্তির মালিক হয়েছেন, যা এলাকায় দলের ভাবমূর্তির ক্ষতি করছে। ওঁদের সঙ্গে দলের কাজে থাকার সুবাদে আমাদেরও জনসমক্ষে মানুষ ভাল চোখে দেখেন না।” জয়দেবের আরও অভিযোগ, “২০১২ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে প্রায় ৫-৬ কোটি টাকার জমি ক্রয় করেছেন দিবাকর। রিসর্ট, ফ্ল্যাট, সোনার দোকান-সহ অল্পদিনে যে বিপুল সম্পত্তি করেছেন, তা দেখে মানুষ অবাক।”
তমলুক সাংগঠনিক জেলার বিজেপি সভাপতি তপন ব্যানার্জি বলেন, গেরুয়া যোগাযোগ রয়েছে কি না সঠিকভাবে জানা নেই। লালু আমাদের সদস্য কোনও পদ নেই। কারণ ওনাকে কোনও কর্মসূচিতে কখনো দেখা যায়নি। বা মিটিং মিছিলে অংশগ্রহণ করেননি। শুভেন্দু বাবুর সঙ্গে দেখা গেছে কি না বলতে পারবো না।”
বস্তুত, এখনো শাসকদলের টিকিট জয়ী হয়ে ধলোরা অঞ্চল থেকে মাতাঙ্গিনী পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য রয়েছেন দিবাকর জানা। ওনার স্ত্রী জেলা পরিষদ সদস্যা তনুশ্রী জানা শান্তিপুর-১,২, ও খারুই অঞ্চল থেকে নির্বাচিত। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন দু’জনেই।
এই বিষয়ে ফোনে বিজেপি নেতা সৌমেন্দু অধিকারীকে TV9 বাংলার তরফে ফোন করা হলে তিনি কোনও প্রতিক্রিয়া দিতে রাজি হননি।
আরও পড়ুন: Bachchu Hansda: মন্ত্রী হয়েছিলেন একবার, বাচ্চু হাঁসদার বাড়ি দেখলে চমকে যাবেন আপনিও
আরও পড়ুন: Modasser Hossain: ‘কাটা তেলের’ ব্যবসায়ী থেকে পঞ্চায়েত প্রধান, তৃণমূল নেতার ‘লাভ হাউসের’ খরচ জানেন?