Modasser Hossain: ‘কাটা তেলের’ ব্যবসায়ী থেকে পঞ্চায়েত প্রধান, তৃণমূল নেতার ‘লাভ হাউসের’ খরচ জানেন?

Bhangar: সম্প্রতি মোদাচ্ছেরের এই বাড়ি নিয়ে তৈরি হয়েছে জলঘোলা। জল গড়িয়েছে আদালত পর্যন্ত। কলকাতা হাইকোর্টে সম্প্রতি এই নিয়ে পিটিশন দাখিল করেছেন আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য।

Modasser Hossain: 'কাটা তেলের' ব্যবসায়ী থেকে পঞ্চায়েত প্রধান, তৃণমূল নেতার 'লাভ হাউসের' খরচ জানেন?
তৃণমূল প্রধানের লাভ হাউস (নিজস্ব ছবি)
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Mar 31, 2022 | 6:30 PM

ভাঙড়: ভাঙড়ের কাঁঠালিয়া বাস-স্ট্যান্ড থেকে কলেজ মোড়। রাস্তার ঠিক উপরেই রয়েছে প্রাসাদপ্রম বাড়ি। নাম ‘লাভ হাউস’ । এই কাঁঠালিয়া বাস-স্ট্যান্ড থেকে কলেজ মোড় মাত্র এক কিলোমিটার রাস্তা। কিন্তু সেখানেই তৈরি হয়েছে পাঁচ-পাঁচটি বাড়ি। কোনটি একতলা, কোনটি দু’তলা, কোনটি আবার চারতলা। সমস্ত বাড়ির গুলির মধ্যে থেকে নজর কেড়েছে এই লাভ হাউস। তবে জানেন কি এই বাড়ির মালিক কে?  অট্টালিকা সম বাড়ির মালিক মোদাচ্ছের হোসেন। তিনি স্থানীয় তৃণমূল নেতা বর্তমানে গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান। আর ওই পাঁচটি বাড়ির প্রত্যেকটিই তাঁর।

সম্প্রতি মোদাচ্ছেরের এই বাড়ি নিয়ে তৈরি হয়েছে বিতর্ক। জল গড়িয়েছে আদালত পর্যন্ত। কলকাতা হাইকোর্টে সম্প্রতি এই নিয়ে পিটিশন দাখিল করেছেন আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য। রিট পিটিশনের উপর ভিত্তি করে হাইকোর্ট সরাসরি এফআইআরের নির্দেশও দিয়েছে।

কেমন দেখতে লাভ হাউস?

গোটা বাড়িটি গোলাপী, নীল ও কমলা রঙের। বাড়ির গায়ে ছড়িয়ে হৃদয়ের ডিজ়াইন অর্থাৎ লাভ সাইন। বাড়িটি তৈরি করতে লক্ষ্যাধিক টাকা খরচ হয়েছে।

লাভ হাউসের অন্য আর একটি ছবি
(নিজস্ব ছবি)

কে এই মোদাচ্ছের হোসেন?

বর্তমানে ভোগালি ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান। ২০০৫ সালে এলাকার তৃণমূল কংগ্রেস নেতা অহিদুল ইসলাম-আরাবুল ইসলামের হাত ধরে রাজনীতিতে হাতে খড়ি। ২০০৬ সালে আরাবুল ইসলাম ভাঙড় বিধানসভা থেকে জয় পেয়েছিলেন। সেই সময় ভোগালি ২ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন এই মোদাচ্ছের। ২০০৮ সালের পঞ্চায়েত ভোটে ভাঙড় ২ পঞ্চায়েত সমিতি বোর্ড গঠন করেন তৃণমূল। তখনও প্রধান হন তিনি।

তৃণমূল নেতার অন্য একটি বাড়ি
বাড়ি নং-১ (নিজস্ব ছবি)

কী কী সম্পত্তি রয়েছে তৃণমূল নেতার?

সূত্রের খবর, এলাকায় তাঁর মাছের ভেড়ি রয়েছে। পাশপাশি বাড়ি ভাড়া দিয়ে মাসিক ৮০ হাজার টাকা রোজগার হয় তাঁর। এখানেই শেষ নয়, সঙ্গে রয়েছে চাষের জমিও। তবে লাভ হাউস সহ অন্য বাড়িগুলি তৈরি হয়েছে ব্যাঙ্ক ঋণের টাকায়। পঞ্চায়েত প্রধান হওয়ার আগেও তিনি পাকা বাড়িতেই বাস করতেন। অন্তত তেমনটাই দাবি তৃণমূল নেতার।

নির্মীয়মান আরও একটি বাড়ি
বাড়ি নং-৩
(নিজস্ব ছবি)

কী কী অভিযোগ রয়েছে?

জানা গিয়েছে, রাজনীতিতে আসার আগে নাকি কাঠালিয়া বাসস্ট্যান্ডের পাশে একটি দোকান ভাড়া নিয়ে কাটা তেলের ব্যবসা করতেন। কেরোসিন, ডিজ়েল, পেট্রোল বিক্রি করতেন অবৈধ ভাবে। যদিও নিজের বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তৃণমূল এই নেতা।

vangar

তৃণমূল নেতার আরও একটি বাড়ি
বাড়ি নং-২ (নিজস্ব ছবি)

মোদাচ্ছের হোসেনের বক্তব্য কী?

‘আমার একটা বাড়ি। রাস্তার ধারে যে বাড়িগুলি রয়েছে সেই বাড়িগুলি আমি লোন নিয়ে করেছি। একাধিক জায়গা থেকে লোন নিয়েছি আমি। আমার পঞ্চাশ বিঘে ভেড়ি রয়েছে। দশ বিঘে চাষের জমি আছে। আমি বাড়ি ভাড় দিয়ে আশি হাজার টাকা পাই। পাশপাশি আমি গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান। প্রধানের আয়ের উৎসটাও তো দেখতে হবে।’

( পঞ্চায়েত প্রধানরা বর্তমানে ৫০০০ টাকা মাসিক ভাতা পান, উপপ্রধানরা মাসিক ৪০০০ টাকা পান, পঞ্চায়েত সদস্যরা ৩০০০ হাজার পান)।

এই বিষয়ে এক গ্রামবাসী ভয়ে-ভয়ে জানান, “কী আর বলব। বললেই গুণ্ডাবাহিনী পাঠাবে। কয়েকদিনের প্রধান হয়ে আজকে কোটি-কোটি টাকার মালিক। আগে তেল বিক্রি করে খেত। এখন দেখা যাচ্ছে তিনচারটে বাড়ি। সঙ্গে দুর্নীতি রয়েছে।”  অন্যদিকে, সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, “তৃণমূল হওয়ার মুল বিষয় হল সে কত বেশি বেআইনি সম্পদ তৈরি করতে পারেন। আমি বিধানসভায় একাধিকবার সরব হয়েছিলাম। কিন্তু কোনও উত্তর পাইনি। ২০১১ সালে তৃণমূল নেতাদের যার যা সম্পত্তি ছিল এখন তা বেড়ে বহুগুণ হয়েছে। শুধু পঞ্চায়েতের সদস্য হয়েছেন। একশো দিনের টাকা, ভাতাগুলি থেকে শুধু লুঠ করেছে। ”

আরও পড়ুন: Bachchu Hansda: মন্ত্রী হয়েছিলেন একবার, বাচ্চু হাঁসদার বাড়ি দেখলে চমকে যাবেন আপনিও