Dilip Ghosh: ‘রেডিমেড প্রার্থী নয়’, আদি সংগঠনে ‘আস্থা’ খুঁজছেন দিলীপ
BJP: দলের 'আত্মসমালোচনা' আগেও করেছেন দিলীপ। বিভিন্ন সময়ে তিনি খেদ প্রকাশ করে জানিয়েছিলেন বঙ্গ নির্বাচনের আগে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের হাতে পুরোপুরি সাংগঠনিক রাশ তুলে দেওয়ায় সমস্যা হয়েছিল।
পূর্ব মেদিনীপুর: একুশের বিধানসভা নির্বাচন হোক বা উপনির্বাচন, ফোটোফিনিশ জয় পেয়েছে তৃণমূল। কার্যত বিধ্বস্থ বিজেপি। রাজ্যে আসন্ন পুরনির্বাচনকে কেন্দ্র করে কার্যত নিজ নিজ ঘুঁটি সাজাতে প্রস্তুত রাজনৈতিক শিবিরগুলি। পথে নেমেছে বিজেপিও। দলের অন্দরের সাংগঠনিক নেতৃত্বে জোর দিতে এগরায় কর্মিসভায় যোগ দেন বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ (Dilip Ghosh)।
সভামঞ্চ থেকে দিলীপ স্পষ্টই বলেন, “একটা স্বপ্ন ছিল আমাদের, যে বাংলার বিধানসভা নির্বাচনে আমরা জয়লাভ করব। বাস্তবের সঙ্গে কল্পনার দূরত্বটা আমরা পূরণ করতে পারিনি বলেই আমাদের স্বপ্নপূরণ হয়নি। একটা সময় ছিল, যখন পশ্চিমবঙ্গে কোনও সংবাদমাধ্যমে বিজেপির খবর ছাপা হত না। কেউ জানত না। সেই জায়গা থেকে আজ প্রথম পাতায় বিজেপির খবর ছাপা হয়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বিজেপির গ্রহণযোগ্যতা বেড়েছে।”
বর্ষীয়ান বিজেপি নেতার আরও সংযোজন, “আমরা বিধানসভা নির্বাচন ও উপনির্বাচন দুটোতেই পরাজিত হয়েছি। রাজ্যের একটা পুরসভাও আমাদের হাতে নেই। নামমাত্র কয়েকজন কাউন্সিলর রয়েছে। শুধু তাই নয় রাজ্যের সাড়ে তিন হাজারের কাছাকাছি গ্রামপঞ্চায়েত থাকলেও মাত্র সাড়ে তিনশো পঞ্চায়েত বিজেপির দখলে রয়েছে। তাই এই পুরনির্বাচনে আর রেডিমেড প্রার্থী নয়, দলের পুরনো নেতাদের তাঁদের গুরুত্ব বুঝে টিকিট দেওয়া হবে। পঞ্চায়েত ও পুরনির্বাচন উভয়ক্ষেত্রেই দলের গুরুত্বে জোর দেওয়া হবে। ব্যক্তির গুরুত্বে নয়।”
প্রসঙ্গত, দলের ‘আত্মসমালোচনা’ আগেও করেছেন দিলীপ। বিভিন্ন সময়ে তিনি খেদ প্রকাশ করে জানিয়েছিলেন বঙ্গ নির্বাচনের আগে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের হাতে পুরোপুরি সাংগঠনিক রাশ তুলে দেওয়ায় সমস্যা হয়েছিল। পাশাপাশি, নির্বাচনের আগে একাধিক তৃণমূল নেতার যোগদান ও তাঁদের ক্ষমতায়ন ভাল চোখে দেখেনি আদি বিজেপি নেতৃত্ব। তাই এ বার ‘শূন্য থেকে শুরু’ করতে তত্পর দিলীপ। সেদিক থেকে পুরনির্বাচন ও পরবর্তী পঞ্চায়েত নির্বাচনে যে আদি নেতাদের গুরুত্ব বাড়বে তা অস্বীকার করতে পারছেন না রাজনৈতিক মহলের একাংশ।
তবে প্রশ্ন উঠছে, তাহলে নতুন নেতৃত্বে ভরসা নেই দিলীপ ঘোষের? সে প্রসঙ্গে যদিও, দিলীপের দাবি, ভরসা সকলের উপরেই রয়েছে। যে ভাল ফলাফল করবে, ভরসা তার উপরেই থাকবে। সে নতুন হোক বা পুরনো। এদিকে, রাজ্যের আসন্ন পৌরনির্বাচনকে মাথায় রেখে আগামী মাসেই অর্থাত্ ডিসেম্বরে বঙ্গ সফরে আসছেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এমনটাই জানিয়েছেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডা। কদিকে দলের কর্মীদের আস্থা জোগানো অন্যদিকে, পৌরপ্রচার দুই ক্ষেত্রেই বিশেষ নজর রয়েছে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের এমনটাই জানা গিয়েছে।
তবে, বঙ্গে পুরভোটের আগে বিজেপি সাংসদ ও সর্বভারতীয় সভাপতির এই বৈঠক বিশেষ তাত্পর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। রাজ্যে দ্রুত পুরনির্বাচনের বরাবরই দাবি জানিয়ে এসেছে বিজেপি। তবে, আগামী মাসের বঙ্গ সফরে কোন কোন কেন্দ্রীয় নেতারা আসবেন বা কবে থেকে সফর শুরু হবে তা এখনও নির্দিষ্ট নয়।
কিছুদিন আগেই, রাজ্য বিজেপির অন্তর্কলহ মেটাতে শৃঙ্খলারক্ষা কমিটিকে কড়া পদক্ষেপ করার নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। দলে থেকে কেউ দল বিরোধী মন্তব্য করলে দ্রুত তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে, এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এর জন্য আলাদাভাবে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের অনুমতি নেওয়ার দরকার নেই বলেও বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্বের তরফে জানানো হয়েছে। বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের কাছে এই মর্মে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
কিছুদিন আগেই, রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে মন্তব্য করায় হাওড়ার জেলা সভাপতি সুরজিৎ সাহার বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করে রাজ্য বিজেপি। দল থেকে বহিষ্কার করা হয় সুরজিতকে। এই পরিস্থিতিতে রাজ্যে পুরভোটকেই পাখির চোখ করছে পদ্ম শিবির এমনটাই মনে করছেন সংশ্লিষ্ট মহলের একাংশ। ফলে পুরনির্বাচনের ঠিক আগে আগে বঙ্গসফরে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের আগমনের নেপথ্যে দলের আভ্যন্তরীণ সাংগঠনিক পরিস্থিতিতেও বিশেষ নজরদারি দেওয়া হতে পারে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক মহলের একাংশ।