যেন করোনা বলে কিছু নেই! দিঘা-দার্জিলিঙে গমগমে ভিড়, আশঙ্কায় বিশেষজ্ঞরা

Digha And Darjeeling: করোনা নিয়ে এক শ্রেণির মানুষের এই খামখেয়ালিপনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। দেশের অন্য়ান্য পাহাড়ি এলাকার মতো বাংলার দার্জিলিঙেও পর্যটকদের ভিড় চোখে পড়ার মতো। রাজ্যের সার্বিক করোনাচিত্র স্বস্তিদায়ক হলেও পাহাড়ে বাড়ছে করোনা সংক্রমণ, যা চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রশাসনের কাছে।

যেন করোনা বলে কিছু নেই! দিঘা-দার্জিলিঙে গমগমে ভিড়, আশঙ্কায় বিশেষজ্ঞরা
অলংকরণ: অভীক দেবনাথ
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Jul 14, 2021 | 7:04 PM

পশ্চিমবঙ্গ: গত কয়েক সপ্তাহ ধরে রাজ্যের করোনা চিত্র কিছুটা স্বস্তিদায়ক হয়েছে। দৈনিক সুস্থতার হারও বেড়েছে। কিন্তু এই আবহেই তৃতীয় ঢেউ নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন বিশেষজ্ঞরা। কার্যত লকডাউনের মধ্যে যানবাহনে একটু রাশ আলগা করতেই যেন ছুটির মেজাজে বাঙালি। যেন রাজ্যের কার্যত লকডাউন আসলে বর্ষার ছুটি! করোনা বলে যেন আর কিছু নেই!

দিঘায় সমুদ্রস্নানে মত্ত পর্যটকেরা:

কোভিড বিধি অমান্য করে গত কয়েক দিন ধরে দিঘা সৈকতে দেখা গিয়েছে পর্যটকদের ভিড়। সমুদ্রের পাশাপাশি পাহাড়েও বাড়ছে ভিড়। করোনাবিধি নিয়ে কলকাতায় কড়াকড়ির এই ছবি ধরা পড়লেও, রাজ্যের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র দিঘায় ধরা পড়েছে উইকএন্ডের পুরনো চেনা ছবি। হোটেলগুলোতে কয়েক দিন ধরে ভিড় চোখে পড়ার মতো। মাস্ক ছাড়াই ঘুরে বেড়াচ্ছেন বেশির ভাগ পর্যটক। গা ঘেঁষে চলছে সমুদ্র স্নান। কেউ কেউ আবার এমনও বলছেন, নোনাজলে করোনা ভ্যানিশ! মাস্ক ছাড়া ঘুরে বেড়ানো এবং এই ধরনের উদাসীনতায় চিন্তিত চিকিৎসকরা। কঠোরভাবে বিধি পালনের কথা বলছেন তাঁরা।

ছুটির মেজাজে দার্জিলিঙ:

করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের ভয়াবহ ছবির যাতে পুনরাবৃত্তি না ঘটে তার জন্য প্রশাসন সতর্ক হয়েছে। তবে করোনার বিধিনিষেধ কিছুটা শিথিল হতেই দেশবাসীর একাংশের বেপরোয়া মনোভাব সামনে এসেছে। করোনা বিধিকে শিকেয় তুলে পাহাড়ে ঢল নামছে পর্যটকদের। দার্জিলিঙে চোখে পড়ার মতো ভিড় শুরু হয়েছে। আর বিভিন্ন অংশে মানুষ কোভিড বিধি না মেনেই জমায়েত করছেন। পর্যটকদের আনন্দ, তীর্যযাত্রীদের ভ্রমণ, সবেরই প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু, কয়েক মাসের জন্য তো তার অপেক্ষা করা যেতে পারে! ভ্যাকসিন না নিয়েই কোভিড বিধি ভেঙে এভাবে জমায়েত করলে কোভিডের তৃতীয় ঢেউয়ের সুপার স্প্রেডার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকবে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

প্রশাসনিক পদক্ষেপ:

করোনা নিয়ে এক শ্রেণির মানুষের এই খামখেয়ালিপনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। দেশের অন্য়ান্য পাহাড়ি এলাকার মতো বাংলার দার্জিলিঙেও পর্যটকদের ভিড় চোখে পড়ার মতো। রাজ্যের সার্বিক করোনাচিত্র স্বস্তিদায়ক হলেও পাহাড়ে বাড়ছে করোনা সংক্রমণ, যা চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রশাসনের কাছে। পাহাড়ে পর্যটকদের অচসেতনভাবে ঘুরে বেড়ানো বড় বিপদ ডেকে আনতে পারে, মাত্র একদিন আগে এমনই আশঙ্কা প্রকাশ করছেন প্রধানমন্ত্রী।

এই পরিস্থিতিতে ভিড়ে লাগাম টানতে দিঘার মতো দার্জিলিঙ নিয়েও পদক্ষেপ করল রাজ্য সরকার। কোভিড নেগেটিভ রিপোর্ট সঙ্গে না থাকলে দার্জিলিংয়ে পাওয়া যাবে না হোটেল। করোনা সংক্রমণ রুখতেই এই পদক্ষেপ। এক্ষেত্রে কোভিডের দু’টি টিকা নেওয়া ব্যক্তিদের কোভিড নেগেটিভ রিপোর্ট থাকা বাধ্যতামূলক নয়। বুধবার এমনই নির্দেশিকা জারি করেছে প্রশাসন।

রাজ্যের সার্বিক করোনাচিত্র স্বস্তিদায়ক হলেও পাহাড়ে বাড়ছে করোনা সংক্রমণ, যা চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রশাসনের কাছে। পাহাড়ে পর্যটকদের অচসেতনভাবে ঘুরে বেড়ানো বড় বিপদ ডেকে আনতে পারে, মাত্র একদিন আগে এমনই আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন দেশের প্রধানমন্ত্রী। পর্যটকদের সচেতন থাকার বার্তাও দিয়েছিলেন তিনি।

শান্তিনিকেতন ও দীঘার ধাঁচেই নির্দেশিকা জারি দার্জিলিঙে:

দার্জিলিঙের জেলাশাসক এস পূণ্যমবালম জানান, পরিবহণ ব্যবস্থা চালু হওয়ায় বহু পর্যটক পাহাড়ে আসছেন। এক্ষেত্রে কোভিড রুখতে আমরা পদক্ষেপ নিচ্ছি। যে পর্যটকরা পাহাড়ে আসবেন তাঁদের দুটি ডোজ ভ্যাকসিন অথবা ৭২ ঘন্টা আগের আরটিপিসিআর রিপোর্ট থাকতে হবে। পর্যটকদের হোটেলে প্রবেশের সময় এই সংক্রান্ত নথিপত্র সঙ্গে রাখতে হবে।

পাশাপাশি, কোভিড মোকাবিলায় একটি নজরদারি দলও গঠন করা হচ্ছে জেলায়। এই দলটি হোটেল, হোমস্টে ঘুরে দেখবে কারা আসছেন। এবং তাঁদের কোভিড ভ্যাকসিনের এই নথিপত্র যথাযথ আছে কিনা। বুধবারই পরিবহণ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে এসব নিয়ে বৈঠকে স্থির হয় কেবলমাত্র ভীন রাজ্যের পর্যটকদের জন্যে এই নিয়ম কার্যকর হবে। কিন্তু এদিন সকালে রিভিউ মিটিং শেষে সমস্ত পর্যটকদের জন্যই একই নিয়ম বলবৎ করা হচ্ছে বলে জানানো হয়। প্রশাসন সতর্ক হলেও সাধারণ মানুষকেই নিজেদের কথা ভেবেই সচেতন হতে হবে। নইলে তৃতীয় ঢেউয়ের বড় প্রভাব অবশ্যম্ভাবী বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন বিশেষজ্ঞরা। আরও পড়ুন: সঙ্গে এই সার্টিফিকেট না থাকলে দিঘা-মন্দারমণিতে ‘নো এন্ট্রি’, নির্দেশিকা জেলা প্রশাসনের