Post Poll Violence: সিবিআইয়ের তালিকা থেকে বাদ সুফিয়ান, গ্রেফতার তাঁর জামাই-সহ ১১ তৃণমূল কর্মী
Seikh Sufiyan: জানা গিয়েছে, তৃণমূল নেতা সুফিয়ানের জামাই শেখ বায়তুল ইসলাম নন্দীগ্রামের দুই নম্বর অঞ্চলের প্রধান। বিজেপি কর্মী দেবব্রত মাইতি খুনে বায়তুল ইসলামের হাত রয়েছে বলে জানিয়েছেন তদন্তকারীরা।
পূর্ব মেদিনীপুর: হিংসা তদন্তে (Post Poll Violence) নয়া মোড়। নন্দীগ্রামে বিজেপি কর্মী দেবব্রত মাইতি হত্যাকাণ্ডে তৃণমূল নেতা শেখ সুফিয়ানের জামাই-সহ ১১ জন তৃণমূল কর্মীকে গ্রেফতার করল কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা। গতকালই ওই মামলায় চার্জশিট পেশ করেছিল সিবিআই। সেই চার্জশিটে নাম ছিল শেখ ফতেনুর, শেখ মিজানুর ও শেখ ইমদুলাল ইসলাম। এরপর শনিবার, আরও ১১ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে পাঠায় কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা। এরপর তৃণমূল নেতার জামাই বায়তুল ইসলামকে গ্রেফতার করে সিবিআই।
জানা গিয়েছে, তৃণমূল নেতা সুফিয়ানের জামাই শেখ বায়তুল ইসলাম নন্দীগ্রামের দুই নম্বর অঞ্চলের প্রধান। বিজেপি কর্মী দেবব্রত মাইতি খুনে বায়তুল ইসলামের হাত রয়েছে বলে জানিয়েছেন তদন্তকারীরা। তিনি ছাড়াও আরও ৯জন তৃণমূল কর্মীকে গ্রেফতার করা হলে এলাকায় উত্তেজনার সৃষ্টি হয়।
সিবিআইয়ের হলদিয়ার ক্যাম্পের সামনেই তৃণমূল কর্মী সমর্থকেরা জড়ো হয়ে কালো পতাকা দেখিয়ে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। জেলা তৃণমূল সভাপতি দেবপ্রসাদ মণ্ডল সিবিআইয়ের ক্যাম্পে ঢোকার চেষ্টা করলে তাঁকে বাধা দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। পরে হলদিয়া থানার পুলিশ এসে ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। ধৃত ১১ জনকেই এইদিন হলদিয়া আদালতে তোলা হয়। মোতায়েন করা হয় কেন্দ্রীয় বাহিনী।
ভোট পরবরর্তী হিংসা (Post Poll Violence) তদন্তে শুক্রবারই আরও একটি চার্জশিট পেশ করেছে সিবিআই। নন্দীগ্রামে বিজেপি কর্মী দেবব্রত মাইতি হত্যা মামলায় তিন জনের বিরুদ্ধে সেই চার্জশিটে নাম রয়েছে। লক্ষ্যণীয়ভাবে, এই মামলা থেকে কার্যত একরকম মুছে গিয়েছে তৃণমূল নেতা তথা নির্বাচনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখ্য় এজেন্ট শেখ সুফিয়ানের (Seikh Sufiyan) নাম। এই ‘বাদটুকু’ নজর এড়ায়নি রাজনৈতিক মহলের। উঠেছে নানা প্রশ্নও।
নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর নন্দীগ্রামের চিল্লোগ্রামের বাসিন্দা তথা বিজেপি সমর্থক দেবব্রত মাইতিকে খুনের অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। সেই খুনের কাণ্ডে নাম জড়ায় সুফিয়ানেরও। নিহত দেবব্রতের পরিবার মানবাধিকার কমিশনের কাছে তৃণমূল নেতার নামে অভিযোগও দায়ের করেন।
খোদ নন্দীগ্রামের বিজেপি বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী প্রকাশ্য জনসভায় স্পষ্টতই হুমকি দিয়ে বলেছিলেন, ‘অপরাধীদের প্রত্যককে খুঁজে বের করা হবে।’ এমনকী, বিজেপির তরফে অভিযোগ করে বলা হয়েছিল, দেবব্রত মাইতি খুনের ঘটনায় তৃণমূলেরই প্রভাবশালী নেতার হাত রয়েছে। এরপর সিবিআইয়ের হাতে তদন্তভার যাওয়ার পর তৃণমূল নেতা শেখ সুফিয়ানকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করে সিবিআই। এমনকী সুফিয়ান-সহ আরও দুই তৃণমূল নেতাকে তলব করা হয়।
টানা সাড়ে চারঘণ্টার ম্যারাথন জিজ্ঞাসাবাদের পর সুফিয়ান নিজেই জানান, তিনি সবরকমভাবে তদন্তকারীদের সাহায্য করবেন। একইসঙ্গে এও অভিযোগ তোলেন যে বিজেপি বিধায়কের অঙ্গুলিহেলনেই সুফিয়ানকে তলব করা হয়েছে। এমনকী, নিহত দেবব্রত মাইতি তৃণমূলের সমর্থক বলেও দাবি করেন এই দুঁদে তৃণমূল নেতা।
এরপর, তদন্ত এগোলেও শুক্রবার যখন কার্যত চার্জশিট পেশ হয় তখন দেখা যায় সেখানে অভিযুক্তের তালিকায় তো বটেই এমনকী সন্দেহভাজনের তালিকা থেকেও বাদ গিয়েছেন সুফিয়ান। শুধু সুফিয়ান নন, বাদ গিয়েছেন অন্য দুই তৃণমূল নেতাও যাঁদের সুফিয়ানের সঙ্গে একই দিনে তলব করা হয়েছিল। বদলে প্রকাশ্যে এসেছে তিনটি নতুন নাম। শেখ ফতেনুর, শেখ মিজানুর ও শেখ ইমদুলাল ইসলাম। যদিও এখনও এদের রাজনৈতিক কোনও পরিচয় সামনে আসেনি। কিন্তু, শনিবারের পর সম্পূর্ণ বদলে যায় ছবিটা। খোদ তৃণমূল নেতার জামাইকে গ্রেফতার করায় কার্যত রাজনৈতিক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে এলাকায়।
উল্লেখ্য, রাজ্যে ভোট পরবর্তী হিংসা মামলায় জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের (NHRC) সুপারিশকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছিল রাজনৈতিক তরজা। পক্ষপাতিত্ব করা হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছিল তৃণমূল। কিন্তু, সেই মামলায় জোর ধাক্কা খেয়েছে রাজ্য সরকার। ধর্ষণ ও খুনের ঘটনাগুলির তদন্তভার তুলে দেওয়া হয়েছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই-এর হাতে। অন্যদিকে, বাকি হিংসার ঘটনার তদন্তের জন্য রাজ্য পুলিশের তিন সদস্যের একটি সিট গঠন করা হয়েছে।
কিন্তু এ ক্ষেত্রে মানবাধিকার কমিশনের রিপোর্ট গোদের উপর বিষফোঁড়া হয়ে ওঠে রাজ্য সরকারের জন্য। জাতীয় মানবাধিকার কমিশন নিজের রিপোর্টে উল্লেখ করে, এ রাজ্যে আইনের শাসন নেই, শাসকের আইন রয়েছে। যা তীব্র অস্বস্তির মধ্যে ফেলে রাজ্যকে। কেন্দ্রীয় সংস্থার তদন্তের থেকেও মানবাধিকার কমিশনের রিপোর্টই যেন গলার কাঁটা হয়ে ফুটছে। যে কারণে গোটা মামলায় হাইকোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে হাজির হয় রাজ্য সরকার।
ভোট পরবর্তী হিংসা মামলায় ইতিমধ্যেই প্রায় চারটি চার্জশিট দাখিল করেছে সিবিআই। শুক্রবার সেই চার্জশিটের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৫টি। বেড়েছে মামলার সংখ্যাও। আরও ৩ টি এফআইআর রুজু করেছে সিবিআই। মামলার সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৩৫। ভোট পরবর্তী হিংসার তদন্তে মোট ৮৪ জন তদন্তকারী অফিসার বা আইও-র মধ্যে ইন্সপেক্টর, ডিএসপি পদমর্যাদার অফিসার রয়েছেন। এছাড়া ২৫ জন কর্তা রয়েছেন এই দলে। জয়েন্ট ডিরেক্টর, ডিআইজি, এসপি পদমর্যাদার এই ২৫ জন অফিসার।
প্রত্যেক জোনের টিমে ২১ জন করে তদন্তকারী অফিসার বা আইও। বেশিরভাগ ডিআইজি ও এসপি পদমর্যাদার কর্তা। রাজ্যে ১৫ টি খুন এবং ৬ টি ধর্ষণের মামলায় ২৭ অগাস্ট ১১টি এফআইআর দায়ের করেছিল সিবিআই। খুন, খুনের চেষ্টা, বেআইনি অস্ত্র রাখা, অপহরণ, অনুপ্রবেশের মতো একাধিক অভিযোগের ভিত্তিতে এফআইআরগুলি দায়ের করা হয়। ইতিমধ্যেই হিংসা মামলার তদন্তে হাইকোর্টে মুখবন্ধ খামে স্ট্যাটাস রিপোর্ট জমা দিয়েছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা।
আরও পড়ুন: Post Poll Violence: ফের তৃণমূলের কার্যালয়ে সিবিআই, শাসক দলের একাধিক নেতাকে জিজ্ঞাসাবাদ