Panskura: ‘আরজি কর করে দেব’, এবার পাঁশকুড়ায় চিপসকাণ্ডে মৃত কিশোরের মাকে হুমকি
Panskura: ধৃত শুভঙ্করের বিরুদ্ধে মামলা তুলতেই পুলক গোস্বামী তাঁকে চাপ দেন বলে অভিযোগ মৃত কিশোরের মায়ের। তিনি বলেন, "প্রতিবেশী পুলক গোস্বামী ও আরও কয়েকজন শুভঙ্করের বিরুদ্ধে মামলা তুলে নিতে বলেন। আমি রাজি হইনি।"

পাঁশকুড়া: পাঁশকুড়ায় চিপসকাণ্ডে নয়া মোড়। ধৃত সিভিক ভলান্টিয়ার শুভঙ্কর দীক্ষিতের বিরুদ্ধে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য মৃত কিশোরের মাকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠল। তমলুক পুলিশ লাইনে কর্তব্যরত হোমগার্ড পুলক গোস্বামী মামলা তুলে নেওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করেন বলে অভিযোগ মৃত কিশোরের মায়ের। সেই প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় মৃত কিশোরের মাকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়। আরজি করের ঘটনার কথাও স্মরণ করিয়ে তাঁকে ও তাঁর মেয়েকে ধর্ষণের হুমকি দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ মৃত কিশোরের মায়ের। পাঁশকুড়া থানায় পুলক গোস্বামী-সহ আটজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন তিনি।
মাস দেড়েক আগে পাঁশকুড়ায় দোকান থেকে চিপসের প্যাকেট চুরির অপবাদ দিয়ে সপ্তম শ্রেণির কিশোরকে মারধর ও অপমান করার অভিযোগ ওঠে সিভিক ভলান্টিয়ার শুভঙ্করের বিরুদ্ধে। এরপর কীটনাশক খেয়ে আত্মহত্যা করে ওই কিশোর। শুভঙ্কর ও তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে পাঁশকুড়া থানায় অভিযোগ দায়ের করেন ওই কিশোরের মা। অভিযোগ দায়েরের ১৫ দিন পর গ্রেফতার করা হয় শুভঙ্করকে।
ধৃত শুভঙ্করের বিরুদ্ধে মামলা তুলতেই পুলক গোস্বামী তাঁকে চাপ দেন বলে অভিযোগ মৃত কিশোরের মায়ের। তিনি বলেন, “প্রতিবেশী পুলক গোস্বামী ও আরও কয়েকজন শুভঙ্করের বিরুদ্ধে মামলা তুলে নিতে বলেন। আমি রাজি হইনি।” তখনই তাঁকে হুমকি দেওয়া হয়। তাঁর নাবালিকা কন্যা রয়েছে। তিনি বলেন, “আমাকে বলে আরজি করের ঘটনা মনে আছে তো। আমাকে ও আমার মেয়েকে ধর্ষণ করে মেরে দেবে বলেছে। আরজি করের মতো অবস্থা করবে বলেছে।”
এই ঘটনার পর আতঙ্কিত হয়ে পড়ে পরিবার। মঙ্গলবার রাতে পাঁশকুড়া থানায় গিয়ে পুলক গোস্বামী-সহ আটজনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন মৃত কিশোরের মা। পাঁশকুড়া থানার পুলিশ জানিয়েছে, লিখিত যোগ পেয়েছে তারা। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। পূর্ব মেদিনীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হেড কোয়ার্টার্স) নিখিল আগরওয়াল বলেন, “অভিযোগের ভিত্তিতে প্রাথমিক তদন্ত শুরু হয়েছে। সেখানে যদি কোনও কিছু পাওয়া যায়, তার ভিত্তিতে আইনি পদক্ষেপ করা হবে।”
যদিও তমলুক পুলিশ লাইনে কর্তব্যরত হোমগার্ড পুলক গোস্বামীর পরিবার সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তাদের দাবি, অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। উদ্দেশ্যপ্রণোদিত পরিকল্পনা করে ফাঁসানোর চেষ্টা হচ্ছে তাদের।
এই নিয়ে তৃণমূলের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে বিজেপি। রাজ্যের শাসকদলকে তোপ দেগে রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, “তৃণমূলের আমলে এটাই সম্ভব। একজন মারাও যাবে, আবার তার পরিবার ধর্ষণের হুমকি পাবে। এটা তৃণমূলের সংস্কৃতি।” সরব হয়েছেন বিজেপি বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পালও। তিনি বলেন, “সব জায়গাতেই তো আমরা এটা দেখতে পাচ্ছি। আমরা তো কসবার ঘটনাতেও শুনছি যে নির্যাতিতার পরিবারকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে।”
অভিযোগ নিয়ে তৃণমূল নেতা তন্ময় ঘোষ বলেন, “এটা পশ্চিমবঙ্গ। এখানে আইনের শাসন চলে। হুমকি চলে না। যদি হুমকি দেওয়া হয়, তাহলে পুলিশ ব্যবস্থা নেবে।” প্রাক্তন পুলিশকর্তা সত্যজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ও সরব হয়েছেন। তিনি বলেন, “নিন্দাজনক ঘটনা। কতটা হিংস্র যে আরজি করের ঘটনার কথা বলছে। অভিযুক্তদের গ্রেফতার করতে হবে।” প্রসঙ্গত, গত বছরের ৮ অগস্ট আরজি করে এক জুনিয়র ডাক্তারকে নৃশংসভাবে ধর্ষণ করে খুনের অভিযোগ ওঠে। সেই ঘটনায় শোরগোল পড়েছিল সারা রাজ্যে।
শাসকদলকে তোপ দেগে পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা পরিষদের বিজেপি সদস্য অলোককুমার দোলুই বলেন, “অনেক গড়িমসির পর শুভঙ্করকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এখন মামলা তুলে নেওয়ার জন্য বাড়িতে এসে হুমকি দিচ্ছে পাশের বাড়ির কয়েকজন, যারা রাজ্য পুলিশে কাজ করে। আশা করব, পুলিশ পদক্ষেপ করবে। কিন্তু, বিগত দিনে পুলিশের যে ভূমিকা দেখেছি, তাতে এই পরিবার কতটা শান্তিতে বসবাস করতে পারবে তা নিয়ে আমরা আশঙ্কায় রয়েছি।”

