ভাঙড়: আচমকাই ভাঙড়ে বিপুল পরিমাণ সরকারি নথিতে আগুন। ভস্ম হয়ে যাওয়া কাগজ উদ্ধারের চেষ্টায় মরিয়া সিবিআই। সাতসকালে ভয়ঙ্করকাণ্ড ভাঙড়ের আন্দুলবেড়িয়ার বাগানবাড়ি সংলগ্ন এলাকায়। অভিযোগ, স্থানীয় কয়েক জন তৃণমূল নেতা সকালে লরি বোঝাই কাগজপত্র নিয়ে যান সেই মাঠে। সেখানে কাগজগুলি একসঙ্গে জড়ো করে আগুন ধরিয়ে দেন। স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছ থেকে খবর পায় সিবিআই। ইতিমধ্যেই ঘটনাস্থলে পৌঁছেছেন সিবিআই আধিকারিকরা। কাগজে সরকারি স্ট্যাম্প দেখে তদন্তকারীরা মনে করছেন সেগুলো নিয়োগ সংক্রান্ত কোনও নথিই হতে পারে। কারণ যে তৃণমূল নেতারা লরিতে কাগজ এনেছিলেন, স্থানীয় এলাকায় তাঁরা আবার প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ। কাগজগুলি অর্ধেকের বেশি পুড়ে গিয়েছে। আগুনে বালি ফেলে নিভিয়ে নথি উদ্ধারের চেষ্টা করছেন তদন্তকারীরা। এই মুহূর্তে সেখানে রয়েছেন সাত থেকে আট জনের সিবিআই আধিকারিকের দল। গোটা বাগানবাড়ি কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে ঘিরে ফেলা হয়েছে। তদন্তকারীরা মনে করছেন, এই নথিতেই হয়তো কোনও বড় ‘ক্লু’ ছিল, সেই প্রমাণ লোপাটের চেষ্টা চলছিল।
সকাল থেকেই স্থানীয় বাসিন্দাদের চোখে পড়েছে, লরি লরি কাগজ এনে জমা করা হয়েছে বাগানবাড়িতে। যে বাগানবাড়িতে নথি পোড়ানো হয়েছে, তার মালিকানা হিসাবে নাম উঠে আসছে স্থানীয় তৃণমূল নেতা গৌতম মণ্ডল ও রাকেশ রায় চৌধুরীর। এই গৌতম ও রাকেশ আবার পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও ক্যানিং পূর্বের বিধায়ক সওকত মোল্লা ঘনিষ্ঠ বলে জানা গিয়েছে। যদিও গৌতম ও রাকেশের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে, এই জমি তাঁদের নয় বলে দাবি করেন। তাঁদের বক্তব্য, এই জমির মালিক বিহারের বাসিন্দা। তাঁরা এয়ারফোর্সে চাকরি করেন। যে নথিগুলি পোড়ানো হয়েছে, সেগুলিও বিহার, তামিলনাড়ু, তেলেঙ্গানার বলে জানা যাচ্ছে। মূলত ২০০৮-২০১০ সালের নথি। কিন্তু নথি পোড়ানো নিয়ে রহস্য দানা বেঁধেছে। তার মানে কি আরও বড় কোনও নাম, কোনও দুর্নীতি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চলছে।
সিবিআই আধিকারিকরা আপাতত পুড়ে যাওয়া নথিতে কখনও বালি, কখনও নিজেদের বোতল থেকে জল ঢেলে আগুন নেভানোর চেষ্টা করছেন। জ্বলন্ত কাগজ ধরতে গিয়ে হাত পুড়ছে আধিকারিকদেরও। বাগানবাড়ির চতুর্দিকে কালো ছাই পড়ে রয়েছে। সেখান থেকেই ঝলসে যাওয়া কাগজের অবশিষ্টাংশ উদ্ধার করছেন আধিকারিকরা।
এদিনের ঘটনা প্রসঙ্গে তৃণমূল বিধায়ক সওকত মোল্লা বলেন, “এজেন্সির তদন্ত করে দেখা উচিত। আমরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে। তদন্তে আমাদের পূর্ণাঙ্গ সহযোগিতা রয়েছে। এখানে যদি রাকেশ ও গৌতমের কোনও হাত থাকে, তাহলে তাদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারে সিবিআই।” এরপরই তাঁর সংযোজন, “আসলে বাংলায় যদি কোনও কাগজও পোড়ে, তা নথি দেখানো হয়। এটা তৃণমূলকে কালিমালিপ্ত করার চেষ্টা।” ভাঙড়ের বিধায়ক নওসাদ সিদ্দিকি বলেন, “ওটা সওকত মোল্লার এলাকা। ইতিমধ্যেই সওকত মোল্লাকে ডেকেছিল সিবিআই। কারণ তদন্তকারীরা খতিয়ে দেখছেন। কী নথি পুড়েছে তা তদন্তেই বেরোবে। যারা নথি পুড়াচ্ছিল, তাদের জবানবন্দি খুব প্রয়োজন। তাঁদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা দরকার। তা না হলে তাঁদেরও গুম করে দেওয়া হতে পারে।”