ডায়মন্ড হারবার: পেয়েছেন ১০ লক্ষের বেশি ভোট। জিতেছেন ৭ লক্ষের বেশি ভোটে। তবে ডায়মন্ড হারবার পুরসভার ৪টি ওয়ার্ডে পিছিয়ে থেকেছেন তৃণমূলের সেকেন্ড ইন কম্যান্ড অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তা নিয়ে কাটাছেঁড়া শুরু হয়েছে রাজ্যের শাসকদলে। তারা বলছে, ওই ওয়ার্ডগুলিতে পিছিয়ে পড়ার ক্ষেত্রে কী খামতি রয়েছে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আবার বিজেপির খোঁচা, ওই ওয়ার্ডগুলিতে ছাপ্পা ভোট দিতে পারেনি রাজ্যের শাসকদল। তাই পিছিয়ে পড়েছে।
সদ্য সমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনে ডায়মন্ড হারবারে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ২০১৪ সাল থেকে এই লোকসভা কেন্দ্রের সাংসদ তিনি। ২০১৯ সালে তিনি ৩ লক্ষ ২০ হাজারের বেশি ভোটের ব্যবধানে জিতেছিলেন। এবার তাঁর জয়ের ব্যবধান বাড়বে বলে প্রচারের প্রথম থেকেই আত্মবিশ্বাসী ছিলেন। গত পাঁচ বছরে ডায়মন্ড হারবারের উন্নয়নের খতিয়ান তুলে ধরেছেন বিভিন্ন সময়। ডায়মন্ড হারবার মডেলের কথা বলেছেন। ৪ জুন ভোটের ফল প্রকাশ হলে দেখা যায়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় পেয়েছেন ১০ লক্ষ ৪৮ হাজার ২৩০ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপি প্রার্থী অভিজিৎ দাস ওরফে ববি পেয়েছেন ৩ লক্ষ ৩৭ হাজার ৩০০ ভোট। অভিষেক জিতেছেন ৭ লক্ষ ১০ হাজার ৯৩০ ভোটে।
ভোটের ফল পর্যালোচনা করতে গিয়ে দেখা যায়, ডায়মন্ড হারবার পুরসভার ২, ৬, ৯ এবং ১১, এই চারটি ওয়ার্ডে শাসকদলের থেকে বেশি ভোট পেয়েছে বিজেপি। ডায়মন্ড হারবার পুরসভায় মোট ১৬টি ওয়ার্ড। ওই চারটি বাদ দিয়ে বাকি ১২টি ওয়ার্ডে অবশ্য এগিয়ে তৃণমূল।
উনিশের নির্বাচনেও ডায়মন্ড হারবার পুরসভার একাধিক ওয়ার্ডে পিছিয়ে ছিলেন তৃণমূলের সেকেন্ড ইন কম্যান্ড। ভোটের আগে দলীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে চারটি ওয়ার্ডে পিছিয়ে থাকার কারণ জানতে চেয়েছিলেন অভিষেক। ঘাটতি মেটাতে উদ্যোগী হওয়ার বার্তাও দিয়েছিলেন। তার পরও চব্বিশের নির্বাচনে ডায়মন্ড হারবার পুরসভার চারটি ওয়ার্ডে পিছিয়ে থাকল তৃণমূল।
ডায়মন্ড হারবার পুরসভা চারটি ওয়ার্ডে বিজেপির এগিয়ে থাকা নিয়ে বিজেপির ডায়মন্ড হারবার সাংগঠনিক জেলার সহ-সভাপতি সুফল ঘাটু বলেন, “এত সন্ত্রাসের পরও যেখানে যেখানে ভোট হয়েছে, মানুষ ভোট দিতে পেরেছেন, সেখানে বিজেপি জিতেছে। আর বাকিগুলোতে রিগিং করে, ছাপ্পা দিয়ে জিতেছে তৃণমূল। মানুষের রায় এলে তৃণমূল ধুয়ে মুছে যাবে।” বিজেপির সংগঠন না থাকার জন্য ডায়মন্ড হারবারে খারাপ ফলের অভিযোগ মানতে চাইলেন না সুফল ঘাটু। উল্টে তিনি বলেন, “সংগঠন যদি নাই থাকে, তাহলে সন্ত্রাস করছো কেন? বুথে এজেন্টকে বসতে দাওনি কেন? বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি দেওয়া হয়েছে।”
ডায়মন্ড হারবারে বিজেপি প্রার্থী অভিজিৎ দাসও ছাপ্পা ও রিগিংয়ের অভিযোগ তুললেন। তিনি বলেন, “ওই চারটে ওয়ার্ড ছাড়া বাকি ওয়ার্ডগুলোতে ভোট করতে দেয়নি। ২ নম্বর ওয়ার্ডে আমাদের কাউন্সিলর ছিলেন। এই চারটে ওয়ার্ডে ওরা ছাপ্পা মারতে পারেনি। আমাদের কমপক্ষে ১২টা ওয়ার্ডে লিড পাওয়ার কথা।”
চার ওয়ার্ডে পিছিয়ে থাকা নিয়ে তৃণমূলের ডায়মন্ড হারবার বিধানসভার পর্যবেক্ষক শামিম আহমেদ বলেন, “ডায়মন্ড হারবার পুরসভার ওয়ার্ড ভিত্তিক ভোটের ফলাফল বিশ্লেষণ করার কাজ চলছে। যে ওয়ার্ডগুলোতে আমরা পিছিয়ে রয়েছি, তার কারণ বিশ্লেষণ করে দেখা হবে। কেন সেখানকার মানুষ আমাদের ভোট দেননি, সেটাও দলীয়ভাবে খতিয়ে দেখে অবশ্যই আমরা তাঁদের কাছে খুব শীঘ্রই পৌঁছে যাব। ভোটে পিছিয়ে থাকা ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের মান-অভিমান, ক্ষোভ সহ যাবতীয় সমস্যার কথা শুনে দ্রুত সমাধান করার চেষ্টা করব।”
সদ্য সমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যের ৪২টি আসনের মধ্যে ২৯টি পেয়েছে তৃণমূল। বিজেপি পেয়েছে ১২টি আসন। আর কংগ্রেস জিতেছে একটি আসনে। কিন্তু, লোকসভা নির্বাচনের ফল পর্যালোচনা করতে গিয়ে দেখা গিয়েছে, শুধু ডায়মন্ড হারবার পুরসভা নয়, রাজ্যজুড়ে বিভিন্ন পুরসভায় অনেক ওয়ার্ডেই এগিয়ে বিরোধীরা। কলকাতার ১৪৪টি ওয়ার্ডের মধ্যে উত্তর ও দক্ষিণ কলকাতা মিলিয়ে ৪২টি ওয়ার্ডে এগিয়ে রয়েছে বিজেপি। রাজ্যজুড়ে বিভিন্ন পুরসভায় শাসকদলের তুলনামূলক কম ভোট পাওয়া নিয়ে বর্ষীয়ান তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় বলেন, গ্রাম বাংলার ভোট যতটা পেয়েছে তৃণমূল, শহরাঞ্চলে তত ভোট পায়নি। শহরাঞ্চলের ভোট সুইং করে বলে তিনি মন্তব্য করেন।