Diamond Harbour Child Recover: ‘মা কই?’, ফুল-ফুল জামা পরে ফুলের মতন মেয়েটা শুধু আঙুল উঁচিয়ে দেখাচ্ছিল চলন্ত ট্রেন…রহস্য সেখানেই
Diamond Harbour Child Recover: খোঁজ-খোঁজ- আর খুঁজে পাওয়া গেল না সেই শিশুর মাকে! সন্তানকে প্ল্যাটফর্মে বসিয়ে রেখে গায়েব হয়ে গেলেন মা! শুক্রবার সন্ধ্যায় এক নজিরবিহীন ঘটনার সাক্ষী থাকল ডায়মন্ডহারবার স্টেশন।
ডায়মন্ড হারবার: লাল-সাদা ফুল-ফুল ফ্রক জামা। হাতে একটা চিপসের প্যাকেট। পায়ে একটা মিষ্টি জুতো! প্ল্যাটফর্মের বসার আসনে বছর আড়াইয়ের এক শিশুকন্যা বসে! প্ল্যাটফর্ম তখন অনেকটাই ফাঁকা হয়ে গিয়েছে। মেয়েটি কাঁদছে ফুঁপিয়ে। এক মহিলা ব্যবসায়ী এগিয়ে আসেন। শিশুটি তখনও কাঁদছে। হাতে খাবার। কাছে আসতেই গলা জড়িয়ে ধরে! ‘মা কোথায়?’ প্রশ্ন করতে বাড়ে কান্নার জোর। বিপদ তখনই বুঝেছিলেন মহিলা হকার। খোঁজ-খোঁজ… আর খুঁজেই পাওয়া গেল না সেই শিশুর মাকে! সন্তানকে প্ল্যাটফর্মে বসিয়ে রেখে গায়েব হয়ে গেলেন মা! শুক্রবার সন্ধ্যায় এক নজিরবিহীন ঘটনার সাক্ষী থাকল ডায়মন্ডহারবার স্টেশন।
সন্ধ্যা তখন সাড়ে সাতটা হবে। শিশুটিকে বসে থাকতে দেখেছিলেন মহিলা হকার। ঘড়ির কাঁটা এগোয়। শিশুটি কান্না জুড়ে দেয়। সময়ের সঙ্গে বাড়ে অনিশ্চয়তা। শেষমেশ এই মহিলা ব্যবসায়ী এগিয়ে আসেন। শিশুটিকে কোলে তুলে খোঁজ করতে থাকেন তার মায়ের। মা না হোক অন্য কেউ তো থাকবে নিশ্চয়ই প্ল্যাটফর্মে! কিন্তু নাহ, শিশুটির আপনজন কেউই ছিল না সেখানে। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পর আসেনওনি। শেষমেশ ওই হকার শিশুকে কোলে আঁকড়েই হাজির হন পাশেই ডায়মন্ড হারবার জিআরপিতে। ততক্ষণ খবর চাউর হয়েছে। শিশুটিকে ঘিরে ভিড় জমান স্থানীয় বাসিন্দারা।
ওই মহিলা ব্যবসায়ীর কথায়, “শিশুটিকে অনেকক্ষণ বসে থাকতে দেখেছিলাম। হাতে খাবারের একটা প্যাকেট ছিল। প্রথমে ভেবেছিলাম মা চলে আসবে। কিন্তু আসেনি। খুবই কান্না শুরু করেছিল। আর থাকতে না পেরেই কোলে তুলে নিয়ে। প্ল্যাটফর্মেই ওকে কোলে নিয়ে ঘোরাফেরা করি। একে-তাকে জিজ্ঞাসা করি। কেউই কিছু বলতে পারেননি। পরে বিপদ বুঝতে পারি। মনে হচ্ছিল, শিশুটিকে ফেলেই পালিয়েছে কেউ। না হলে এতক্ষণ হয়ে গিয়েছে, নিজের সন্তানের খোঁজ নেবে না কেউ, এমন হয় নাকি। তখন সবার পরামর্শে পুলিশের কাছে নিয়ে যাই।”
প্ল্যাটফর্মেরই এক যাত্রীর কথায়, “আমরাও ট্রেন থেকে নেমে শিশুটিকে বসে থাকতে দেখেছিলাম। প্রথমে ভেবেছি মা আশেপাশেই রয়েছে। কিন্তু তারপর শুনি এই ঘটনা। ঠান্ডার মধ্যেই ওকে বসিয়ে রেখে চলে গিয়েছে কেউ।”
শিশুটির পরিবারের খোঁজে তত্পর হয়ে ওঠে পুলিশ। রাতেই শিশুটিকে নিয়ে স্টেশন চত্বর ও তার আশেপাশের এলাকাগুলিতে খোঁজ শুরু করা হয়। কিন্তু কোথাও শিশুর মা কিংবা তার পরিবারের লোকজনের খোঁজ মেলে না। শিশু নিখোঁজ হয়েছে, এ ধরনের কোনও অভিযোগ দায়ের হয় নি রাত পর্যন্ত। তাই ধন্দে রয়েছে পুলিশও।
পুলিশ কর্মীরা শিশুটিকে কোলে নিয়ে প্ল্যাটফর্মের বেঞ্চেই বসেন। তারপর নানারকম ভাবে ভুলিয়ে শিশুটির কাছ থেকে কোনও ‘ক্লু’ পাওয়ার চেষ্টা করেন। ‘মা কোথায় গিয়েছে?’ এই প্রশ্ন করতেই শিশুটি কেবল আঙুল দিয়ে ট্রেনের দিকে দেখাতে থাকে। তাতে পুলিশকর্মীরা মনে করছেন, এমনও হতে পারে, শিশুটিকে প্ল্যাটফর্মে বসিয়ে তার মা ট্রেনে চেপে অন্যত্র চলে গিয়েছেন।
পুলিশের অনুমান, শিশুটিকে নিয়ে ট্রেনে এসেছিলেন ওই মহিলা। ডায়মন্ডহারবার স্টেশনে নামেন। পরে শিশুটিকে বসিয়ে রেখে আবার চলে যান। আপাতত পুলিশ শিশুটিকে ডায়মন্ড হারবার চাইল্ড লাইনের হাতে তুলে দিয়েছে। রাত অনেক হয়ে যায়। কাঁদতে কাঁদতে ক্লান্ত হয়ে পড়ে শিশুটা। সন্ধ্যা থেকেই অনেকটা ধকল পেরিয়েছে। ক্লান্ত দুচোখ বুঝে আসে তার। চাইল্ড লাইনের মহিলা কর্মীদের ঘাড়ে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়ে সে। পরের দিনের সকালটা তার ঘুম ভাঙবে হোমের ঘরেই।