TET: ‘সোনার গয়না রাখব কোথায়?’, পরীক্ষা না দিয়ে ফিরলেন গীতারা

টেট পরীক্ষার্থীরা সোনার গয়না, মোবাইল ফোন, টাকা-পয়সা রাখার মতো কোনও সুরক্ষা পাননি বলে অভিযোগ। ফলে কেবল ঈশ্বরের ভরসাতেই ব্যাগ, টাকা-পয়সা থেকে সোনার গয়নাও কলেজের গেটের বাইরে রেখে টেট পরীক্ষা দিতে বসেন অনেকেই।

TET: 'সোনার গয়না রাখব কোথায়?', পরীক্ষা না দিয়ে ফিরলেন গীতারা
পরীক্ষা না দিয়েই ফিরে গেলেন গীতা কুমারী।
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Dec 11, 2022 | 8:48 PM

আসানসোল: নির্বিঘ্নে টেট পরীক্ষা সম্পন্ন করাতে এবারে বিশেষ কড়াকড়ি ছিল প্রতিটি পরীক্ষা কেন্দ্রে। ব্যাগ-মোবাইলের পাশাপাশি ধাতব কোনও সামগ্রী নিয়ে পরীক্ষাকেন্দ্রে ঢোকায় নিষেধাজ্ঞা ছিল। কিন্তু, কলেজ কর্তৃপক্ষও কোনও জিনিস জমা রাখার দায় নেবে না। যার ফল, সোনার গয়না জমা রাখার জায়গা না পেয়ে কাঁদতে-কাঁদতে পরীক্ষাকেন্দ্র থেকে ফিরে গেলেন গীতা কুমারী, শুকদেবের মতো অনেকেই। রবিবার, টেট পরীক্ষায় নজিরবিহীন এমনই ঘটনার সাক্ষী থাকলেও আসানসোল গার্লস কলেজ।

দুর্গাপুরের বাসিন্দা গীতা কুমারী। তাঁর টেট পরীক্ষার সিট পড়েছিল আসানসোল গার্লস কলেজে। একাকী পরীক্ষা দিতে এসেছিলেন গীতা। তিনি জানতেন না, সোনার নাকের, কানের পরেও পরীক্ষাকেন্দ্রে ঢোকা যাবে না। পরীক্ষাকেন্দ্রে ঢোকার মুখে এরকম নির্দেশিকা শুনে কার্যত পায়ের নীচে থেকে মাটি সরে যায় গীতা কুমারীর। কোথায় রাখবেন সোনার গয়না? তিনি সেগুলি খুলে কলেজ কর্তৃপক্ষ থেকে সেখানে উপস্থিত নিরাপত্তারক্ষীদের কাছে রাখতে চাইলেও কেউ সোনার গয়নার দায়িত্ব নিতে চাননি। সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারের গীতা কুমারী মূল্যবাণ এই সমস্ত সামগ্রী বাইরে ফেলে রেখে যেতে ভরসা পাননি। বাধ্য হয়ে কাঁদতে-কাঁদতে পরীক্ষাকেন্দ্রের গেট থেকেই ফিরে যান তিনি।

গীতা কুমারীর মতো একই পরিস্থিতির শিকার হন শুকদেব। সোনার আংটি পরে থাকার জন্য তিনি পরীক্ষাকেন্দ্রে ঢোকার অনুমতি পাননি। আর কলেজ কর্তৃপক্ষও তাঁর সোনার আংটি জমা রাখার দায়িত্ব নেননি। ফলে তিনিও পরীক্ষা না দিয়েই বাড়ি ফিরে যান। এঁদের মতো অনেকেই এই পরিস্থিতির শিকার হন। অনেকেই দূর থেকে এসেছেন, একাকী এসেছেন। তবু সোনার গয়না, মোবাইল ফোন, টাকা-পয়সা রাখার মতো কোনও সুরক্ষা পাননি বলে অভিযোগ। ফলে কেবল ঈশ্বরের ভরসাতেই ব্যাগ, টাকা-পয়সা থেকে সোনার গয়নাও কলেজের গেটের বাইরে রেখে টেট পরীক্ষা দিতে বসেন অনেকেই। টেট পরীক্ষায় আসানসোল গার্লস কলেজের এই ধরনের কড়াকড়িকে কেন্দ্র করে জোর সমালোচনা শুরু হয়। মোবাইল, সোনার গয়না নিয়ে পরীক্ষাকেন্দ্রে ঢোকার নিয়ম না থাকলেও কেন সেগুলি জমা রাখার ব্যবস্থা করা হয়নি?- তা নিয়ে আসানসোল গার্লস কলেজ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে।

যদিও যাঁরা কেবল ঈশ্বরের ভরসায় কলেজের বাইরেই টাকা-পয়সা, মোবাইল ফোন থেকে সোনার গয়না ফেলে রেখে পরীক্ষা দিতে ঢুকেছিলেন, তাঁদের কারও কিছু খোয়া যায়নি। কলেজ চত্বরে মোতায়েন নিরাপত্তারক্ষী সেগুলি পাহাড়া দিয়েছেন এবং পরীক্ষা শেষে সকলেই নিজের মূল্যবান সামগ্রী ফেরৎ পেয়েছেন। কিন্তু, নিরাপত্তারক্ষী বা কলেজ কর্তৃপক্ষের তরফে যদি জিনিসপত্র দেখাশোনা করার আশ্বাসটুকু আগে মিলত, তাহলে হয়তো সকলেই পরীক্ষা দিতে পারতেন। আর যাঁরা ঈশ্বরের ভরসায় সমস্ত সামগ্রী বাইরে রেখে পরীক্ষাকেন্দ্রে ঢুকেছিলেন, তাঁরাও নিশ্চিন্তে পরীক্ষা দিতে পারতেন। সবমিলিয়ে, এদিন টেট পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে আসানসোল গার্লস কলেজে যে পরীক্ষার্থীরা হয়রানির শিকার হয়েছেন, তা বলা বাহুল্য।