দুটো মাথা, চারটে হাত-পা, একটা দেহ! বিরলতম ঘটনার সাক্ষী রায়গঞ্জ
Cojoined Twins: ইটাহারের ছয়ঘরা গ্রামের বাসিন্দা আখতারা খাতুন বুধবার সকালে প্রসব যন্ত্রণা নিয়ে রায়গঞ্জ মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হন। তত্ক্ষণাত্ তাকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হয়।
উত্তর দিনাজপুর: দুই মাথা, চার হাত-পা, গলা থেকে পেট পর্যন্ত জোড়া! অপারেশন থিয়েটারে এমনই জট পাকানো যমজ শিশুর (Cojoined twins) জন্ম দিলেন এক মহিলা। চিকিত্সকদেকর সফল অস্ত্রোপচারে বিরল এই শিশু জন্ম নিল রায়গঞ্জ মেডিক্যাল কলেজে। হাসপাতাল সূত্রে জানানো হয়েছে, বর্তমানে নবজাতকের মা সুস্থ রয়েছেন। তবে সদ্য়োজাতকে নজরে রাখা হয়েছে। দেহ আলাদা করতে উন্নত চিকিত্সার জন্য চিন্তাভাবনা শুরু করেছে মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ।
ইটাহারের ছয়ঘরা গ্রামের বাসিন্দা আখতারা খাতুন বুধবার সকালে প্রসব যন্ত্রণা নিয়ে রায়গঞ্জ মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হন। তত্ক্ষণাত্ তাকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর অস্ত্রোপচারের পরই সদ্যোজাতকে (Cojoined twins) দেখে চোখ কপালে চিকিত্সকদের। দেখা যায়, গর্ভের যমজ দুই সন্তান একে অপরের সঙ্গে কেবল মিশে যায়নি, তাদের চারটি করে হাত-পা আর দুটি মাথা রয়েছে। গলা থেকে তলপেট পর্যন্ত পুরোটাই জুড়ে গিয়েছে। চিকিত্সকদের তত্ত্বাবধানে জীবিত অবস্থাতেই জন্ম নেয় সদ্যোজাত। কিন্তু, প্রসূতি ও নবজাতকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
রায়গঞ্জের হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, এইধরনের ঘটনা মিরাকল না হলেও ব্যতিক্রম। দশ লাখে একটি ঘটনা ঘটে থাকে। তবে এই ধরনের ঘটনা বাংলায় প্রথম বলেই মনে করছেন চিকিত্সকেরা। মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ কৌশিক সমঝদার বলেন, ” বুধবার সকালেই ওই মহিলা প্রসব যন্ত্রণা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। আলট্রাসোনোগ্রাফিতে বাচ্চার (Cojoined twins) অবস্থা বুঝে নিয়ে তারপরেই আমরা প্রসূতিকে অপারেশন টেবিলে নিয়ে যাই। এই ধরনের ঘটনা নতুন কিছু নয়। তবে, বাংলায় এই ঘটনা হয়ত প্রথমবার। সাধারণত এই ধরনের বাচ্চারা জন্মের পর বাঁচতে পারে না। তবে এক্ষেত্রে বেঁচে রয়েছে। আশা করছি বাচ্চা দুটোকে বাঁচানো সম্ভব হবে।”
অন্যদিকে, প্রসূতির এক আত্মীয়ের কথায়, “সাতমাস নাগাদ একবার ডাক্তারি পরীক্ষা করানো হয়েছিল। তখনই দেখা গিয়েছিল বাচ্চাটি জড়ানো। কিন্তু, ডাক্তার জানিয়েছিলেন কিছু করা সম্ভব নয়। তাই আমাদের হাতে আর কিছু করার ছিল না। ডাক্তার যা বলেছে তাই করতে হবে। ওর একটা আড়াই বছরের ছেলে রয়েছে। এই বাচ্চাটা ঠিকঠাকে বেঁচে ফিরলে ভাল।”
চিকিত্সাশাস্ত্র কী বলছে? কেন এমন যুগলের জন্ম? ডাক্তারি পরিভাষায় এই ধরনের শিশুদের ‘কোজয়েনড টুইনস’ বলা হয়। এটি কোনও জেনেটিক ডিসওর্ডার না হলেও মূলত মাতৃজঠরে জ়াইগোট তৈরি হওয়ার সময়েই কোনও কোষজ বিক্রিয়ার কারণে এই ধরনের শিশুর জন্ম হতে পারে। প্রায় দশ লক্ষের মধ্য়ে ১ টি ক্ষেত্রে এমন হয়ে থাকে। ডাক্তারি পরিভাষায় একে বিরল থেকে বিরলতম বলে আখ্য়া দেওয়া হয়েছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই শিশুরা বাঁচতে পারে না। বা বাঁচলেও খুব বেশিদিনের জন্য নয়। সর্বাধিক ছয় মাস থেকে এক বছর এদের আয়ু হয়ে থাকে। এর আগে ভারতে মধ্য় প্রদেশে আসমা নামে একটি মেয়ের জন্ম হয়েছিল যার চারটি হাত-পা, কিন্তু মাথা একটাই। ডাক্তারি শাস্ত্র বলছে, ‘ডাইসফ্যালিক প্য়াপাগাস’ এর জন্য দায়ী। তবে, এই ধরনের ঘটনা যে ঘটতে পারে তার কোনও উপসর্গ অনুভব করেন না প্রসূতি। তাই আগে থেকেও বোঝা যায় না। সাধারণত শিশু জন্মালেই উন্নততর চিকিত্সার মাধ্য়মে এদের আলাদা করা হয়। আরও পড়ুন: বিতর্কে ইতি! হাফ প্যান্ট পরেই সোনারপুর পুরসভায় টিকাপ্রাপ্তি যুবকের