নয়া দিল্লি: চলতি বছরের এপ্রিলে, টানা ১৭ দিন ধরে উত্তর ও পূর্ব ভারতের অধিকাংশ জায়গায় তাপমাত্রা ছিল ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে। ১৯৬৯ সালের পর, এত দীর্ঘ সময় ধরে একটানা এই ধরনের চরম তাপের পরিস্থিতি দেখেনি ভারত। শুধু ভারত নয়, এশিয়ার অনেক অঞ্চলেই এই বছরের এপ্রিলে রেকর্ড-ব্রেকিং তাপমাত্রা এবং তাপপ্রবাহ দেখা গিয়েছে। এই আবহাওয়া পরিস্থিতি বিরূপ প্রভাব ফেলছে সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্য ও জীবিকার উপরও। অদূর ভবিষ্যতে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে চলেছে বলে ইঙ্গিত দিচ্ছেন জলবায়ু বিজ্ঞানীরা। আবহাওয়া সংক্রান্ত তথ্যের যুক্তি দিয়ে তাদের দাবি, প্রতি ৩০ বছরে একবার করে এই ধরণের চরম গরমের সম্মুখীন হতে হতে পারে দক্ষিণ এশিয়া। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে, এই চরম তাপের পরিস্থিতি তৈরির সম্ভাবনা ইতিমধ্যেই প্রায় ৪৫ গুণ বেড়ে গিয়েছে।
বিশ্বব্যাপী চরম আবহাওয়া পরিস্থিতিগুলির উপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নিয়ে গবেষণা করে ‘ওয়ার্ল্ড ওয়েদার অ্যাট্রিবিউশন’। সংস্থার বিজ্ঞানীদের সাম্প্রতিক সমীক্ষা অনুসারে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এশিয়া জুড়ে তাপপ্রবাহ ঘটার সম্ভাবনা বেড়েছে। তচাদের মতে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ভারত-সহ দক্ষিণ এশিয়া জুড়ে এই ধরনের তাপপ্রবাহের সম্ভাবনা ৪৫ গুণ বেড়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এই এলাকার তাপমাত্রাও ০.৮৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এই চরম তাপপ্রবাহের কারণে এশিয়া জুড়ে দরিদ্র মানুষের জীবন কঠিন হয়ে উঠেছে।
চলতি বছরের ১ এপ্রিল, দিল্লির মৌসম ভবন থেকে সতর্ক করা হয়েছিল, ভারতের অনেক অংশেই এবারের গ্রীষ্মে অস্বাভাবিক গরম পড়তে চলেছে। অনেক অঞ্চলে তাপপ্রবাহের দিনের সংখ্যাও স্বাভাবিকের থেকে বেশি হবে। এপ্রিল মাসে সারা দেশ থেকে তাপপ্রবাহের খবর এসেছে। পূর্ব ভারতের অনেক অংশে এবারের এপ্রিলের গরম রেকর্জ ভেঙেছে। লেবানন থেকে ভিয়েতনাম বা কম্বোডিয়ার মতো এশিয়ার আরও বেশ কয়েকটি দেশও একটানা তাপপ্রবাহের সাক্ষী হয়েছে। ফিলিপিন্স, বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া এবং মায়ানমারেও রেকর্ড ভাঙা গরম পড়েছে।
সিরিয়া, লেবানন, ইসরাইল, প্যালেস্তাইন ও জর্ডান-সহ পশ্চিম এশিয়াতেও তাপপ্রবাহের এই চক্র পৌঁছে গিয়েছে। গোটা বিশ্বের গড় তাপমাত্রা ১.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পেয়েছে। এই অবস্থায় বিজ্ঞানীদের অনুমান, প্রতি ১০ বছরে একবার পশ্চিম এশিয়াও একই রকম তাপপ্রবাহের মুখোমুখি হতে পারে। যদি তাপমাত্রা দুই ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে যায়, তাহলে প্রতি পাঁচ বছরে একবার একই ধরনের চরম তাপপ্রবাহের সম্মুখিন হতে হবে। বিশেষ করে বয়স্ক এবং শিশুদের জন্য এই তাপপ্রবাহের মারাত্মক প্রভাব পড়তে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, ১৯৯৮ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে, শুধুমাত্র তাপপ্রবাহের কারণে ১ লক্ষ ৬৬ হাজারেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছে।