Omicron Variant: ওমিক্রনের চোখ রাঙানিতেও ভীত নন গবেষকরা, তথ্য দিচ্ছে অন্য ইঙ্গিত…
Omicron Surge Signals Endemic: করোনা সংক্রমণ সাধারণত নাক থেকে শুরু হয়ে গলায় পৌঁছয় এবং সেখান থেকে ফুসফুস ও শরীরের বাকি অংশে। ভাইরাস শ্বাসনালি অবধি পৌঁছতে না পারলে, সংক্রমণ খুব একটা গুরুতর আকার ধারণ করে না। ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে করা পাঁচটি পৃথক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, এই ভ্য়ারিয়েন্ট ফুসফুসকে সহজে সংক্রমিত করে না।
ওয়াশিংটন: ২০২১ সালেই একাধিক গবেষক-বিশেষজ্ঞরা দাবি করেছিলেন করোনার ‘শেষের শুরু’ (Endemic) হয়ে গিয়েছে। কিন্তু বছর শেষ হওয়ার এক মাস আগেই দক্ষিণ আফ্রিকায় (South Africa) মিলল করোনার এক নতুন রূপ, যা বিশ্বের বাকি দেশে ছড়িয়ে পড়তে সময় লাগাল না। ওমিক্রন(Omicron)-র দাপটে বিশ্বজুড়ে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ফের একবার বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে গুরুতর অসুস্থ হওয়া বা হাসপাতালে ভর্তির হার এখনও তুলনামূলকভাবে অনেকটাই কম। আর এতেই আশার আলো দেখছেন বিজ্ঞানীরা।
সংক্রমণের নতুন অধ্য়ায়:
সান ফ্রান্সিসকো(San Francisco)-র ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমিউনোলজিস্ট মনিকা গান্ধী বলেন, “বর্তমানে আমরা সম্পূর্ণ এক নতুন অধ্যায়ের মধ্যে রয়েছি। এই ভাইরাস আমাদের সঙ্গে সবসময়ই থাকবে, তবে আমার আশা যে এই ভ্যারিয়েন্ট এমন রোগ প্রতি্রোধ ক্ষমতা গঠন করুক, যা এই মহামারিকে হারিয়ে দেবে।”
বাকি ভ্য়ারিয়েন্টের তুলনায় দুর্বল ওমিক্রন:
গত ২৪ নভেম্বর দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথম ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের খোঁজ মিলেছিল। সেই সময় জানা গিয়েছিল যে, করোনার এই নতুন ভ্যারিয়েন্ট কমপক্ষে ৩০ থেকে ৫০ বার অভিযোজিত হয়েছে। গবেষকরা আরও অভিযোজনের আশঙ্কা প্রকাশ করলেও, বিগত কয়েক সপ্তাহের প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, সংক্রমণের বিপুল বিস্তার ও অভিযোজনের ফলে ভাইরাস গুরুতর অসুস্থতা সৃষ্টি করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে।
দক্ষিণ আফ্রিকার একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে, ওমিক্রন আক্রান্তদের মধ্যে যারা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন, তাদের গুরুতর অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে(Delta Variant) আক্রান্তদের থেকে ৭৩ শতাংশ কম। বর্তমানে সে দেশে ওমিক্রন আক্রান্ত ও রোগীদের হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার সংখ্যা হ্রাস পাওয়ায়, গবেষণার ওই তথ্য যে সঠিক, তা প্রমাণিত হয়েছে বলেই দাবি করেন কেপটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমিউনোলজিস্ট ওয়েন্ডি বার্গার্স।
ভ্যাকসিনকে ফাঁকি দেওয়ার ক্ষমতা:
ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের এতবার অভিযোজন(Mutation) হওয়ার ফলেই প্রাথমিকভাবে দাবি করা হয়েছিল যে, এই ভ্যারিয়েন্ট কেবল টিকাপ্রাপ্ত নয়, এমন ব্যক্তিদেরই আক্রমণ করে না, একইসঙ্গে করোনা টিকা ও পূর্ববর্তী সংক্রমণের ফলে তৈরি হওয়া রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকেও ফাঁকি দিতে সক্ষম। তবে বর্তমানে একাধিক বিষয় উঠে এসেছে, যা ওমিক্রনকে তুলনামূলকভাবে কম ভয়ঙ্কর বলেই ইঙ্গিত দিচ্ছে।
করোনার আগের ঢেউগুলিতে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় ছিল ফুসফুসকে সংক্রমিত (Lung Infection) করার ক্ষমতা। করোনা সংক্রমণ সাধারণত নাক থেকে শুরু হয়ে গলায় পৌঁছয় এবং সেখান থেকে ফুসফুস ও শরীরের বাকি অংশে। ভাইরাস শ্বাসনালি অবধি পৌঁছতে না পারলে, সংক্রমণ খুব একটা গুরুতর আকার ধারণ করে না। ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে করা পাঁচটি পৃথক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, এই ভ্য়ারিয়েন্ট ফুসফুসকে সহজে সংক্রমিত করে না।
হংকংয়েও ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে বেশ কয়েকটি গবেষণা করা হয়েছে। এরমধ্যে একটি গবেষণায় ওমিক্রন আক্রান্তের কোষ বা টিস্যুর নমুনা পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে, ফুসফুসের প্রবেশ পথ ব্রঙ্কিতে প্রায় ৭০ গুণ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে ওমিক্রন। এরফলেই মানবদেহে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে এই ভ্যারিয়েন্ট।
হংকংয়ের ওই গবেষণায় আরও জানা গিয়েছে, দ্রুত ফুসফুসে পৌছলেও, ডেল্টার তুলনায় কমপক্ষে ১০ গুণ ধীরগতিতে ফুসফুসের ভিতরে ছড়িয়ে পড়ে ওমিক্রন। সেই কারণেই ওমিক্রনে আক্রান্ত হলেও সংক্রমণ গুরুতর আকার ধারণ করছে না।
টি-সেলের প্রতিরোধ ক্ষমতা ভাঙতে ব্যর্থ ওমিক্রন:
করোনার এই নয়া ভ্যারিয়েন্ট অ্যান্টিবডিকে ফাঁকি দিতে পারলেও, সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, টি সেল (T-Cell) ও বি সেল(B-Cell)-র প্রতিরোধ ক্ষমতা, যা ভ্যাকসিন ও পূর্ববর্তী করোনা সংক্রমণ থেকে তৈরি হয়, তাকে ফাঁকি দিতে ওতটাও কার্যকর নয়। উল্লেখ্য, যখন শরীরের অ্যান্টিবডি কোনও সংক্রমণ রুখতে ব্যর্থ হয়, তখন সেই ভাইরাসের উপর আক্রমণ করে টি সেল। যারা বিগত ৬ মাসের মধ্যে করোনা টিকা নিয়েছেন বা করোনা আক্রান্ত হয়েছেন, তাদের শরীরে তৈরি টি-সেল ওমিক্রনের বিরুদ্ধে দ্রুত লড়াই করতে সক্ষম। সুতরাং সংক্রমণ বাড়লেও, তা গুরুতর আকার ধারণ করবে না, এ বিষয়ে নিশ্চিত থাকা যায় এক প্রকার।