Abdus Salam: হায় রে পাকিস্তান, দেশের প্রথম নোবেলজয়ীকে এতটা অপমান!

Nobel laureate Abdus Salam: সারা বিশ্বের চোখে তিনি, প্রথম মুসলিম নোবেল বিজয়ী। অথচ, তাঁর মাতৃভূমি তাঁকে মুসলিম বলে বিবেচনাই করে না। তাঁর উত্তরাধিকারকে অস্বীকার করে। মৃত্যুর পরও তাঁকে শান্তিতে থাকতে দেয়নি। তিনি পাকিস্তানের প্রথম নোবেল পুরস্কার বিজয়ী, অধ্যাপক আবদুস সালাম।

Abdus Salam: হায় রে পাকিস্তান, দেশের প্রথম নোবেলজয়ীকে এতটা অপমান!
পাকিস্তান ভুলে যেতে চেয়েছে তাদের প্রথম নোবেল বিজয়ী আবদুস সালামকেImage Credit source: TV9 Bangla
Follow Us:
| Updated on: Jul 11, 2024 | 10:25 PM

কলকাতা: ১৯৮১ সাল। দক্ষিণ কলকাতার এক পুরোনো বাড়ি। তার থেকেও পুরোনো এক খাটে শুয়ে আছেন সাদা পাঞ্জাবি পরা এক বৃদ্ধ। দাঁত পড়ে গিয়েছে, গালের চামড়া শুকিয়ে ঢুকে গিয়েছে ভিতরে। আর তাঁর পাশে বসে আছেন স্যুট-বুট পরা এক ভদ্রলোক। মাত্র দুই বছর আগেই তিনি নোবেল পুরস্কার জিতেছেন, পদার্থবিদ্যায়। আর আজ এসেছেন, শিক্ষকের হাতে সেই পুরস্কার তুলে দিতে। কে এই ব্যক্তি, কেই বা তাঁর শিক্ষক? তা বলার আগে আরও একটা কাহিনি বলি। ওই স্যুট-বুট পরা ভদ্রলোকেরই। সেদিন অবশ্য তাঁর পরনে স্যুট-বুট ছিল না। শেলডন গ্ল্যাশো এবং স্টিভেন ওয়েইনবার্গের পাশে, তিনি নোবেল পুরস্কারের মঞ্চে উঠেছিলেন কালো পাঠানি স্যুট এবং সাদা পাগড়ি পরে। সগৌরবে তাঁর দেশের প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন। সারা বিশ্বের চোখে তিনি, প্রথম মুসলিম নোবেল বিজয়ী। অথচ, তাঁর মাতৃভূমি তাঁকে মুসলিম বলে বিবেচনাই করে না। তাঁর উত্তরাধিকারকে অস্বীকার করে। মৃত্যুর পরও তাঁকে শান্তিতে থাকতে দেয়নি। তিনি পাকিস্তানের প্রথম নোবেল পুরস্কার বিজয়ী, অধ্যাপক আবদুস সালাম।

অবিভক্ত পূর্ব পঞ্জাবের ঝাং প্রদেশে এক সাধারণ পরিবারে জন্মেছিলেন সালাম। তবে, তাঁর পরিবার ছিল শিক্ষিত পরিবার। ঠাকুর্দা ছিলেন ধর্মীয় পণ্ডিত তথা পদার্থবিজ্ঞানী। বাবা ছিলেন অবিভক্ত পূর্ব পঞ্জাবের শিক্ষা বিভাগের এক কর্তা। কিশোর বয়সেই সালামের প্রতিভার পরিচয় পাওয়া গিয়েছিল। লাহোর সরকারি কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পূর্ণ বৃত্তি পেয়েছিলেন। ইংরেজি, উর্দু এবং গণিতে তাঁর সমান আগ্রহ ছিল। তবে এক অধ্যাপকের প্রভাবে তিনি শেষ পর্যন্ত গণিতকেই বেছে নিয়েছিলেন। ১৮ বছর বয়সে প্রকাশ করেছিলেন প্রথম গবেষণাপত্র। সরাসরি চ্যালেঞ্জ করেছিলেন রামানুজনকে। ভারতীয় গণিতবিদ সেই সময় গণিত বিশ্বে এক বড় নাম। সালামের প্রথম গবেষণাপত্রের শিরোনাম ছিল “রামানুজনের একটি সমস্যা”। একটি গাণিতিক সমস্যা রামানুজন সমাধান করেছিলেন। সালাম আরও সহজ পদ্ধতি প্রস্তাব করেন। তিনি লিখেছিলেন, “তাঁর (রামানুজন) পদ্ধতি অত্যন্ত শ্রমসাধ্য”।

প্রথম গবেষণাপত্রেই রামানুজনকে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন সালাম

এরপর সালাম পাড়ি দিয়েছিলেন কেমব্রিজে। ভাগ্য করে লাহোর কলেজে কি্ছু অধ্যাপক পেয়েছিলেন। তাঁরা বুঝেছিলেন, এই ছেলেকে সাহায্য করতেই হবে। তাঁদের সর্বাত্মক প্রচেষ্টাতেই একটি বৃত্তি পেয়েছিলেন সালাম। নাহলে, তাঁর পক্ষে বিলেত যাওয়া সম্ভব ছিল না। কয়েক বছর পর দেশে ফিরেছিলেন। চোখে স্বপ্ন ছিল, দেশকে বিজ্ঞান শেখাবেন। লাহোরের সরকারি কলেজে গণিত পড়াতে শুরু করেন। কিন্তু, ধাক্কা খেতে হয়েছিল। শিক্ষা পরিকাঠামো অত্যন্ত দুর্বল। বিশেষ করে বিজ্ঞানের চেতনাই নেই। রয়েছে ধর্মের প্রাধান্য। লাহোর কলেজে তাঁকে নাকি একটি ফুটবল দল চালাতে বলা হয়েছিল। প্রখ্যাত পাক পরমাণু বিজ্ঞানী হুদভয় সেকথা বলেছেন। তবে, সেই কাজ সালামের পছন্দ হয়নি। তাও কয়েক বছর পড়ে ছিলেন। তারপর পিএইচডি করতে ফের বিদেশে চলে যান।

১৯৭৯ সালে তিনি নোবেল পুরস্কার জিতেছিলেন। তবে, তারও অনেক আগেই এই পুরস্কার তিনি জিততে পারতেন। এক প্রখ্যাত বিজ্ঞানীর খারাপ পরামর্শে সুযোগ হাতছাড়া হয়েছিল। পাঁচের দশকে তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের জগতে এক প্রকার শেষ কথা ছিলেন নোবেল পুরস্কার বিজয়ী অস্ট্রিয়ান বিজ্ঞানী, উলফগ্যাং পাওলি। একটি বিষয় নিয়ে সালাম তাঁর কাছে নথিপত্র পাঠিয়ে পরামর্শ চেয়েছিলেন। অনেক ভাবনাচিন্তা করে পাওলি জবাব দিয়েছিলেন, ‘আরও ভালো কিছু ভাবো হে। এটা চলবে না।’ অত বড় বিজ্ঞানী বলছেন, সালামও তাঁর থিসিস পেপার আস্তাকুঁড়ে ফেলে দিয়েছিলেন। আর সেই বছর ওই বিষয়ে গবেষণার জন্যই, পদার্থবিদ্যায় নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন টিডি লি এবং সিএন ইয়াং। সেই অভিজ্ঞতা তাঁকে আরও আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছিল। পরবর্তীকালে, দুর্বল পারমাণবিক শক্তি এবং তড়িৎচুম্বকত্বের ঐক্যের ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন। স্টিভেন ওয়েইনবার্গ এবং শেলডন লি গ্ল্যাশোও একই বিষয়ে কাজ করছিলেন। ‘ইলেক্ট্রোওয়েব তত্ত্ব’ প্রণয়নের জন্য তিনজনকেই নোবেল দেওয়া হয়েছিল।

নোবেল মঞ্চে স্টিভেন ওয়েইনবার্গ এবং শেলডন লি গ্ল্যাশোর সঙ্গে পাঠানি স্যুটে সালাম

এই একটি কাজ নয়, তাত্ত্বিক পদার্থবিদ্যায় তাঁর আরও অনেক কাজ আছে। ভেক্টর বোসন কণার অস্তিত্ব সম্পর্কেও ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন সালাম। যা পরবর্তীকালে আবিষ্কারও করা হয়েছে। যাইহোক, এই নিবন্ধ তাঁর বৈজ্ঞানিক পারদর্শিতা বিষয়ে নয়। এই নিবন্ধ এক দেশের তাঁর প্রথম নোবেল বিজয়ীকে ভুলে যাওয়ার। অথচ, পাকিস্তানে বিজ্ঞানের ভিত তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিলেন অধ্যাপক আবদুস সালাম। সেই দেশের কৃষি বিজ্ঞানের উন্নয়নে সাহায্য, পাকিস্তানের মহাকাশ ও উচ্চ বায়ুমণ্ডল গবেষণা কমিশন বা সুপারকো (SUPARCO) গঠন, এমনকি পারমাণবিক পরিকাঠামো তৈরিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে তাঁর। সেই সময় অবশ্য পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলি ভুট্টোর ঘনিষ্ঠ ছিলেন তিনি। যে জুলফিকারের আনা এক কালা কানুনের জন্যই আজ নিজ দেশে বিস্মৃত নোবেল জয়ী-বিজ্ঞানী। সেই প্রসঙ্গে যাওয়ার আগে পাকিস্তানের পারমাণবিক পরিকাঠামো স্থাপনের কথা বলা যাক। এই প্রসঙ্গেই এসে যায় আরও এক কিংবদন্তি বিজ্ঞানী হোমি জাহাঙ্গির ভাবার কথা। দুজনেই প্রায় একই সময় প্রেমে পড়েছিলেন। প্রেমিকা ছিল একজনই, পারমাণবিক চুল্লি।

দুজনেই কেমব্রিজ গ্র্যাজুয়েট। একে অপরকে ভালভাবেই চিনতেন। একজন ভারতের, একজন পাকিস্তানের। তবে, পদার্থবিজ্ঞানে একে অপরের কাজের প্রশংসা করতেন তাঁরা। কিন্তু দুজনেরই লক্ষ্য ছিল, নিজ নিজ দেশে পারমাণবিক চুল্লি তৈরি। এর পিছনে ছিল তাঁদের দেশপ্রেম। না, পরমাণু বোমা বানিয়ে একে অপরের দেশকে ধ্বংস করার বাসনা তাঁদের ছিল না। তবে, দুজনেই মনে করতেন, পারমাণবিক শক্তি দিয়ে অত্যন্ত সস্তার বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাবে। এতটাই সস্তা যে বিদ্যুতের মিটারের প্রয়োজন পড়বে না। বিনামূল্যে সকলকে বিদ্যুৎ দেওয়া যাবে। পারমাণবিক অস্ত্র কি তৈরি করতে চাইতেন না তাঁরা? শক্তির পাশাপাশি অস্ত্রও চেয়েছিলেন। পাকিস্তানের পরমাণু বোমা তৈরিতেও বড় ভূমিকা ছিল সালামের। তবে অনেকটা, ধরি মাছ, না ছুঁই পানির মতো। নিজে কোনও হিসাব করেননি। তবে নীরবে অনুমোদন দিয়েছেন। ছাত্রদের এগিয়ে দিয়েছেন।

তারপরও কেন পাকিস্তান তাঁকে দূর ছাই করল? উত্তর হল ধর্মের রাজনীতি। উন্নয়নের জায়গায় ধর্মকে প্রাধান্য দিয়েছিল পাকিস্তান। অধ্যাপক আবদুস সালাম ছিলেন আহমদী। ১৯৭৪ সালে, তৎকালীন পাক প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টো, আহমদিয়াদের ‘অমুসলিম’ বলে ঘোষণা করেছিলেন। এক সময় তিনি গর্ব করে বলতেন, “আমি মদ পান করি, কিন্তু আমি মানুষের রক্ত ​​পান করি না”। অথচ, সেই জুলফিকার ভুট্টোই কেন এমন চরমপন্থি সিদ্ধান্ত নিলেন? স্পষ্টতই গদি বাঁচাতে। মৌলবাদী ধর্মান্ধদের চাপে পড়ে, তিনি নিজেকে তাদের থেকেও বেশি ইসলামি বলে প্রমাণ করতে চেয়েছিলেন। আহমদিয়াদের নিশানা করা কেন? আহমদিয়া সম্প্রদায়ের বিশ্বাস অন্যান্য মুসলিমদের থেকে কিছুটা আলাদা। তাদের মতে, হজরত মহম্মদের পরও আরেক মশিহা এসেছিলেন ইসলাম ধর্মে। তিনি গোলাম আহমদ। মুসলিম সম্প্রদায়ের অনেকেই তাদের ইসলামের অংশ বলে মেনে নেয় না। পাকিস্তানেও দশকের পর দশক ধরে তারা নিপীড়নের শিকার হয়ে আসছে।

প্রাক্তন পাক প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলি ভুট্টোর সঙ্গে সালাম

এর সূত্রপাত অবশ্য ভুট্টোর অমুসলিম ঘোষণার অনেক আগে থেকেই। ১৯৫২ সালেই আহমদীদের বিরুদ্ধে লাহোরে দাঙ্গা হয়েছিল জামাত-এ-ইসলামির নেতৃত্বে। পাকিস্তানে প্রথমবার সামরিক আইন জারি করতে হয়। মহম্মদ আলি জিন্না অবশ্য আহমদিয়াদের সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখেছিলেন। তাঁর উপদেষ্টা ছিলেন জাফরুল্লাহ খান, যিনি আহমদিয়া সম্প্রদায়ের। সমস্যাটা দেশভাগের আগে থেকে থাকলেও, জুলফিকার আলি ভুট্টোর ঘোষণার পর পরিস্থিতির ব্যাপক অবনতি হয়। এই কালা কানুন জারিতে মর্মাহত হয়েছিলেন সালাম। ভুট্টোর সঙ্গে কথা বলার চেষ্টাও করেছিলেন। কিন্তু ভুট্টো সময় দিতে চাননি। জিয়া-উল-হকের শাসনকালে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের অবস্থা আরও খারাপ হয়েছিল। অথচ, সেই উত্তাল সময়েই নোবেল জিতে পাকিস্তানে ফিরেছিলেন সালাম।

১৯৮০ সালে জিয়া-উল-হক নিজে তাঁকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। তাঁকে সেই দেশের সর্বোচ্চ অসামরিক পুরষ্কার, ‘নিশান-ই-পাকিস্তান’ দেওয়া হয়। তবে লোকচক্ষুর আড়ালে। সংসদের বন্ধ অধিবেশনে কাক-পক্ষীও ঢুকতে দেওয়া হয়নি। তাঁকে পাকিস্তানের অন্য কোথাও কেউ সম্মান জানাতে পারেনি। জামাত-এ-ইসলামির হুমকি ছিল, তাঁকে দেখতে পেলেই হামলা করা হবে। আসলে, জিয়ারও তো সালামকে সম্মান জানানোর খুব একটা ইচ্ছে ছিল না। একপ্রকার বাধ্যই হয়েছিলেন । গোটা বিশ্ব সালামকে সম্মান জানাচ্ছে। পাকিস্তান না জানালে খারাপ দেখায়। তবে, এরপরও নোবেলজয়ী বিজ্ঞানীকে অপমান করার কোনও সুযোগ ছাড়েনি তাঁর দেশ। পদে পদে আহত হয়েছেন সালাম। পাকিস্তান তখন ধর্মীয় উন্মত্ততার রাস্তায় চলা শুরু করে দিয়েছিল। সালাম সেই পথের পথিক ছিলেন না।

সালামকে ‘নিশান-ই-পাকিস্তান’ দিয়েছিলেন জিয়া-উল-হক

ভারত নিয়ে কোনও বিদ্বেষ ছিল না। বরং, নোবেল জেতার পরই ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী, ইন্দিরা গান্ধীর কাছে এক অদ্ভূত আবদার করেছিলেন অধ্যাপক সালাম। প্রফেসর অনিলেন্দ্র গাঙ্গুলীকে খুঁজে দিতে হবে। লাহোর কলেজে সালামের গণিতের শিক্ষক ছিলেন তিনি। দুই বছর ধরে খুঁজেছিল সরকার। তারপর কলকাতায় খোঁজ পাওয়া যায় অধ্যাপক গাঙ্গুলীর। দেশভাগের পর লাহোর থেকে কলকাতায় চলে এসেছিলেন। ঐ যে শুরুতে কলকাতার শিক্ষকের কথা বলেছিলাম। তখন অধ্যাপক গাঙ্গুলী শয্যাশায়ী। সালাম এসে তাঁর বিছানার পাশে বসেন। তাঁর গলায় পরিয়ে দেন নোবেল পুরস্কারের পদক। তারপর বলেন, “স্যার, শেখার এবং গণিতের প্রতি আপনার ভালবাসার ফল এটা। আপনি সেই খিদে আমার মধ্যে স্থাপন না করলে কিছু হত না। তারই ফল এই নোবেল পুরষ্কার। স্যার, এটা আপনার, আমার নয়।”

কলকাতায় ছোটোবেলার শিক্ষক, প্রফেসর অনিলেন্দ্র গাঙ্গুলীর বাড়িতে সালাম

যে শ্রদ্ধার নজির সালাম স্থাপন করেছিলেন সেই দিন, তিনি নিজে তার ছিটেফোঁটাও নিজের দেশ থেকে পাননি। আর সালামকে ভুলে যাওয়ার ঘটনাতেই স্পষ্ট, পাকিস্তান কীভাবে ক্রমে বিজ্ঞান ও প্রগতির পথ থেকে সরে, ধর্ম ও রক্ষণশীলতার পথ আঁকড়ে ধরেছে। ক্রমে, বিজ্ঞানের থেকে ধর্মকে প্রাধান্য দিয়েছে। সমস্ত কিছুর সঙ্গেই ধর্মকে মিশিয়ে ফেলেছে। ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা, ইসরো প্রতিষ্ঠার নয় বছর আগে শুরু হয়েছিল পাকিস্তানের মহাকাশ কর্মসূচি। সুপারকো স্থাপনে সালামের যে বড় ভূমিকা ছিল, তা আগেই বলা হয়েছে। আজ ইসরো, মহাকাশ অনুসন্ধানের দৌড়ে নাসা বা চিন-জাপানের মহাকাশ সংস্থাগুলির সঙ্গে প্রতিযোগিতা করছে। সুপারকো-র নামই শোনা যায় না। একটা সময় পর্যন্ত রকেট তৈরি করছিল। তবে, অধিকাংশটাই ছিল মার্কিন সহযোগিতায়। কিন্তু, পাকিস্তানের গোড়ায় গলদ। শক্তিশালী বৈজ্ঞানিক ভিত্তিই নেই। বুনিয়াদি স্তরে বিজ্ঞান নয়, ধর্ম প্রাধান্য পেয়েছে। তাই ক্রমে সুপারকো দুর্বল হয়ে পড়েছে।

পাকিস্তানের সঙ্গেই যাত্রা শুরু করেছিল ভারত। আজ, দৌড়ে পাকিস্তানকে অনেক পিছনে ফেলে দিয়েছি আমরা। আমাদের এই অবস্থা না হওয়ার পিছনে ঐতিহাসিকরা প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরুর অবদানের কথা বলেন। নেহেরুর ধর্মনিরপেক্ষতা এবং আধুনিক পাশ্চাত্য বিজ্ঞানমনস্কতা তাঁর নেতৃত্বে ভারতেও বড় প্রভাব ফেলেছিল বলে মনে করা হয়। নেহরু স্পষ্টত বিজ্ঞান এবং ধর্মকে পৃথক জায়গায় রেখেছিলেন। আইআইটি, আইআইএম, এইমস-এর মতো আধুনিক প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেছিলেন। ইসরোও স্থাপনের ভাবনাও তাঁরই ছিল। এই শক্তিশালী প্রতিষ্ঠানগুলিই শেষ পর্যন্ত ভারতের বৈজ্ঞানিক শক্তির মেরুদণ্ড হয়ে উঠেছে বলে মনে করা হয়।

আবদুস সালামের কবরের ফলক থেকে মুূসলিম শব্দ মুছে দিয়েছে ধর্মন্ধরা

পাকিস্তান সেই পথ থেকে বহু আগেই ছিটকে গিয়েছে। বিজ্ঞান ও প্রগতির বদলে ধর্মীয় চরমপন্থাকে বেছে নিয়েছে। হোমি ভাবা, আব্দুল কালাম, রামানুজন, বিক্রম সারাভাইদের মতো বিজ্ঞানীদের লালন করেছে ভারত, আর পাকিস্তান ভুলে গিয়েছে আব্দুস সালামদের। এমনকি আব্দুস সালামের কবরও বিকৃত করা হয়েছে। তাঁর কবরের ফলক থেকে মুছে দেওয়া হয়েছে মুসলিম শব্দটি। সেদিন যদি পতভ্রষ্ট না হল পাকিস্তান, তাহলে হয়তো বিজ্ঞানে, অর্থনীতিতে আজ তারা ভারতকে টক্কর দেওয়ার মতো অবস্থায় থাকত। সম্ভবত জঙ্গিদের আঁতুড়ঘর হয়ে উঠত না। কারণ, বিজ্ঞানমনস্ক সমাজে চরমপন্থার কোনও জায়গা নেই। আর দুই প্রতিবেশির সুস্থ প্রতিযোগিতায় হয়তো দুই তরফেই লাভ হত।

তথ্য সূত্র – মুসলিম টাইমসে প্রকাশিত জিয়া এইচ শাহের নিবন্ধ, নেটফ্লিক্স ডকুমেন্টারি – ‘সালাম – দ্য ফার্স্ট ** নোবেল লরিয়েট’ এবং গর্ডন ফ্রেসার-এর লেখা বই ‘কসমিক অ্যাঙ্গার’