কথায় বলে ‘অভাবে স্বভাব নষ্ট’, জাপানেরও এখন খানিকটা সেই দশা। ক্রমবর্ধমান দারিদ্র্য আর মুদ্রাস্ফিতী এই দুইয়ের শাঁড়াশি চাপে স্বভাব নষ্ট হচ্ছে জাপানের রাজধানী টোকিও’র। ধীরে ধীরে নাকি ‘সেক্স ট্যুরিজম’-এর নতুন কেন্দ্র হয়ে উঠছে রাজধানী টোকিও, এমনটাই দাবি ‘দ্য স্টার’ প্রকাশিত একটি রিপোর্টে।
‘লিয়াজোন কাউন্সিল প্রোটেক্টিং ইয়ুথ (সেইবোরেন)’-এর সেক্রেটারি জেনারেল, ইয়োশিহিদ তানাকা জানান এশিয়ায় এই সপ্তাহে জাপান একটি দরিদ্র দেশে পরিণত হয়েছে।
‘দ্য স্টার’ প্রকাশিত সেই রিপোর্ট অনুসারে কোভিড পরবর্তী সময়ে নিষেধাজ্ঞা শিথিল হওয়ার পর থেকেই উল্লেখযোগ্য ভাবে পুরুষদের আনাগোনা বৃদ্ধি পেয়েছে। ‘যৌন শিল্পের’ টানে সব বর্ণের পুরুষরা তো বটেই, বিশেষ করে চিনা পুরুষদের আনাগোনা আরেকটু বেশি বলে খবর।
জীবিকা নির্বাহের জন্য কিশোরী এবং তরুণীদের মধ্যে এই পেশাকেই বেছে নেওয়ার প্রবণতাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। যৌন হিংসার শিকার হওয়া ব্যক্তিদের সাহায্যকারী অলাভজনক সংস্থা ‘Paps’-এর প্রতিনিধি কাজুনা কানাজিরির মতে, এই ধরনের ক্রিয়াকলাপ ওকুবো পার্কের মতো পার্ক বা অনান্য জায়গাতেও হচ্ছে, যা পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণের কারণ।
জাপানের প্রধান বিরোধী দল কনস্টিটিউশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টির কাজুনোরি ইয়ামানোই এবং অনান্য আইনপ্রণেতারাও যৌন শিল্পে রাশ টানতে উদ্যোগী। ইয়ামানোই বলেন, “জাপান এমন একটি দেশে পরিণত হয়েছে, যেখানে বিদেশী পুরুষরা অল্পবয়সী মহিলাদের কাছ থেকে টাকার বিনিময়ে যৌন সেবা কিনতে পারে।” এটা কেবল দেশের আভন্তরীণ সমস্যাই নয়, বরং বিশ্বে জাপানি মহিলাদের সম্পর্কে এক বাজে ধারণা তৈরি করছে।
২০২৩ সালে ওকুবো পার্কের আশেপাশে রাস্তায় যৌন কাজ করার অভিযোগে ১৪০ জন মহিলাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
মেট্রোপলিটন পুলিশ ডিপার্টমেন্ট (এমপিডি) দেওয়া তথ্য অনুসারে, ২০২৩ সালে রাস্তায় দাঁড়িয়েই সর্বসমক্ষে পতিতাবৃত্তি করার সময় গ্রেপ্তার হয়েছেন ৪৩% মহিলা। অর্থের বিনিময়ে সেই সব মহিলা নিজেদের শরীর বিক্রি করছিল। গ্রেপ্তার হওয়া মহিলাদের মধ্যে প্রায় ৮০ শতাংশ মহিলার বয়স ২০ বছরের আশেপাশে। যাঁদের মধ্যে তিনজনের বয়স আবার ১৯ বছরের কম ছিল।
জাপান হোস্ট ক্লাব অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধি ইউইচি হোজোর মতে, শুধুমাত্র শহরের কাবুকিচো এলাকায় এই ধরনের প্রায় ২৪০ থেকে ২৬০টি হোস্ট ক্লাব রয়েছে, যাঁদের হয়ে মহিলারা এই কাজে যুক্ত হন। প্রতি সেশনের গড় মূল্য প্রায় ২০,০০০ ইয়েন। যৌন কর্মীদের আবার একটি কোটা রয়েছে যা তাদের হোস্ট ক্লাবগুলিকে ফেরত দেওয়ার জন্য প্রতিদিন উপার্জন করতেই হয়।
যৌনকর্মীরা শুধু যৌনবাহিত রোগই নয়, শারীরিক হিংসা ও তোলাবাজির সম্মুখীন হয় প্রতিদিন। যদিও জাপানে টাকার বিনিময়ে কাউকে যৌন সুখ দেওয়া শাস্তিযোগ্য অপরাধ তবে তা কেবল ‘পেনিট্রেশন’ হলে তবেই। ‘ফোর প্লে’ অবধি সীমাবদ্ধ থাকলে তাকে অপরাধ বলে গণ্য করা হয় না।
পতিতাবৃত্তি বিরোধী ফৌজদারি আইন অনুযায়ী, অপরাধির ছ’মাস পর্যন্ত জেল এবং ১০,০০০ ইয়েন পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে। তবে এই সাজা কেবল যিনি এই ব্যবসা করছেন তার জন্য, কিন্তু সেই মহিলা বা পরিষেবা উপভোগকারী ক্রেতা কোনও শাস্তি পান না। তবে পুলিশ কড়া হাতে রাস্তায় পতিতাবৃত্তির দমনের বার্তা দিয়েছে।