AQI
Sign In

By signing in or creating an account, you agree with Associated Broadcasting Company's Terms & Conditions and Privacy Policy.

Khaleda Zia Passes Away: ইন্তেকাল বেগম জিয়ার, তবু রয়ে গেল যে সব ভাল কথা ও মহা-বিতর্ক

Bangladesh Update: এই জয়ের আনন্দ বেশিদিন টিকিয়ে রাখা সম্ভব হয়নি। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয়বার জাতীয় নির্বাচনে জয়ী হয়ে মাত্র ১৫ দিনের জন্য প্রধানমন্ত্রী পদে থাকেন তিনি। কিন্তু কেন? এই সময়কালে দেশজুড়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন করানোর দাবিতে তৈরি হয়েছিল আন্দোলন।

Khaleda Zia Passes Away: ইন্তেকাল বেগম জিয়ার, তবু রয়ে গেল যে সব ভাল কথা ও মহা-বিতর্ক
খালেদা জিয়াImage Credit: X
| Updated on: Dec 30, 2025 | 2:19 PM
Share

ঢাকা: ব্যবসায়ী পরিবারের সন্তান। রাজনীতি থেকে শতহস্ত দূরে থাকার চেষ্টা করেও পাকচক্রে সেই রাজনীতিতেই জড়িয়েছিলেন খালেদা জিয়া। বাংলাদেশে তিনবারের প্রধানমন্ত্রী। সাফল্য যেমন রয়েছে, তেমই নয় ব্যর্থতাও। তাঁর হাতেই যেমন গড়ে উঠেছে বিএনপি, তাঁর ভুল সমীকরণেই ব্যাকফুটে পড়তে হয়েছে দলকে। তবে শুধুই রাজনৈতিক নয়, বাংলাদেশের বুকে নারী শিক্ষা নিয়ে সরব হয়েছিলেন খালেদা জিয়া। তাঁর আমলেই গতি পেয়েছিল মেয়েদের সাক্ষরতার হার।

১৯৮১ সালের মে মাসে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা এবং রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর সময় খালেদা জিয়া ছিলেন গৃহবধূ। রাজনীতি নিয়ে তখন বেজায় অনীহা তাঁর। কোনও কর্মসূচিতে দেখা যেত না জিয়াউর রহমানের পত্নীকে। কিন্তু স্বামীর মৃত্যুর সাত মাস পর কালের নিয়মে হোক বা বেনিয়মেই, দলের ব্যাটম নিজের হাতেই তুলে নেন খালেদা জিয়া। এই থেকেই শুরু হয় তাঁর রাজনৈতিক সংগ্রাম।

অবশ্য একাংশ মনে করেন, খালেদা জিয়ার এই রাজনীতিতে নামার সিদ্ধান্ত অনেকটাই ক্ষোভের কারণে। জেনারেল এরশাদের সামরিক সরকারকে উপড়ে ফেলতেই বিএনপিকে আধার করেছিলে তিনি। সেই দেশজুড়ে সামান্য সাংগঠনিক জোর নিয়ে শুরু হয়েছিল বিএনপি-র এরশাদ-বিরোধী আন্দোলন। যা আগামী দিনে খালেদা জিয়াকে বসিয়েছিল ক্ষমতার শীর্ষে। ১৯৯১ সালে এরশাদের পতনের পর যে নির্বাচন হয়েছিল, তাতে বিএনপি সংখ্য়াগরিষ্ঠতা পেয়েছিল। আর চিরাচরিত রাজনীতিতে নামার ১০ বছরের মাথায় খালেদা জিয়া হয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। যা তাঁর সাফল্য়ের অংশ বললেও ভুল হবে না।

এই প্রসঙ্গে সাফল্যে আঙ্গিকে কয়েকটি বিষয় জুড়ে দেওয়া প্রয়োজন, নিজের জীবনে যতবার তিনি ভোটের লড়াইয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন, তাঁকে কখনও হারতে হয়নি। ভোটের অঙ্কে খালেদা সব সময় থেকেছেন ‘ফার্স্ট ক্লাস’। যার নেপথ্য়ে তাঁর ‘আপোষহীন’ চরিত্র। বাংলাদেশের রাজনৈতিক আঙিনায় এটাই তাঁর পরিচয়। কিন্তু আপোষহীন কেন? একাংশ দাবি করেন, খালেদা জিয়ার জীবনে সমঝোতার পথ বেছে নেওয়ার কোনও অভাব ছিল না। রাজনৈতিক বা সামাজিক, জিয়াউর রহমানের স্ত্রী জোর দিতে পারতেন নিজের স্বার্থরক্ষায়। কিন্তু তা করেননি। বঙ্গবন্ধুর হত্য়ার পর শেখ হাসিনা এবং রেহানা ভারতে আশ্রয় নিয়েছিলেন। জিয়াউর রহমানের হত্যার পর খালেদা জিয়া ভয়কে এড়িয়ে নিজের দুই সন্তানকে নিয়ে থেকেছিলেন বাংলাদেশেই। লড়াই চালিয়েছিলেন এরশাদের সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে।

প্রশাসনিক স্তরেও তাঁর সাফল্য কম নয়। বাংলাদেশের শিক্ষার হাল তিনি ফিরিয়েছিলেন বলে মত একাংশের। ১৯৯৪ সালে গ্রামের মেয়েদের জন্য উচ্চমাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত বিনামূল্যে শিক্ষা ও বৃত্তি প্রদানের ঘোষণা করেছিলেন তিনি। পরবর্তীতে সেই নীতি চালু হয়েছিল গোটা দেশজুড়ে। পাশাপাশি, শিশু শিক্ষা বৃদ্ধিতে বাংলাদেশজুড়ে প্রাথমিক শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করেন তিনি।

এই প্রসঙ্গে বিবিসি বাংলাকে সাক্ষাৎকারে আমেরিকার পাবলিক ইউনিভার্সিটি সিস্টেমের শিক্ষক সাঈদ ইফতেখার আহমেদ বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশ অত্য়ন্ত রক্ষণশীল একটি রাষ্ট্র। সেই রক্ষণশীল রাষ্ট্রে তিনি প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী হন। নারীদেরকে ঘিরে যে প্রচলিত সংস্কার ছিল, সে সংস্কারের বাধাগুলো উনি ভেঙেছেন। বাংলাদেশের নারীর অগ্রযাত্রায় ওনার একটা বড় ভূমিকা রয়েছে।’

রয়েছে সাফল্য়, রয়েছে বিতর্ক

নিজের এই প্রগতিশীল ভাবধারাকে বেশিদিন ধরে রাখতে পারেননি খালেদা জিয়া। সময়ের কালে বাংলাদেশের রক্ষণশীল ভোটব্যাঙ্কে গা ভাসিয়েছেন তিনি। জামায়াতের মতো দলের সঙ্গে জোট গড়তেই ঝাঁপ দিতে হয়েছে ধর্মের রাজনীতিতে। যা কোথাও গিয়ে বিপদ ডেকেছে বিএনপির জন্য। একটা বড় সময় ক্ষমতাচ্যুত থাকতে হয়েছে বিএনপিকে। বিবিসি বাংলাকে সাক্ষাৎকারে সাঈদ আহমেদ বলেছিলেন, ‘খালেদা জিয়াকে ক্রমশই আপোষ করতে দেখা গিয়েছে। ধর্ম ভিত্তিক রাজনীতিতে ঝাঁপাতে দেখা গিয়েছে। মৌলবাদী রাজনৈতিক দলগুলির সঙ্গে অতিমাত্রায় যোগাযোগ বেড়েছে।’ শুধু তা-ই নয়, তাঁর এই বিতর্কের তালিকায় রয়েছে ১৯৯৬ সালের বিতর্কিত নির্বাচন।

১৯৯১ সালে জয়। কিন্তু ১৯৯৬ সাল ঢুকতেই বদলে গেল রাজনৈতিক মানচিত্র। ওই বছর দ্বিতীয়বার জাতীয় নির্বাচনে জয়ী হয়ে মাত্র ১৫ দিনের জন্য প্রধানমন্ত্রী পদে থাকেন তিনি। কিন্তু কেন? এই সময়কালে দেশজুড়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন করানোর দাবিতে তৈরি হয়েছিল আন্দোলন। আওয়ামী, জামায়াতের মতো রাজনৈতিক দলগুলি পথে নেমেছিল। কিন্তু অনড় ছিলেন খালেদা। বিরোধীরা নির্বাচন বয়কট করেন, তিনি একক নির্বাচন করিয়ে ক্ষমতায় ফিরে আসেন। মাত্র ১৫ দিনের জন্য। তার পরই আন্দোলনের চাপে পদত্যাগ করতে হয় খালেদাকে। সাফল্য হিসাবে গড়ে তোলেন খালেদা গড়ে পাশ করান তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল। কিন্তু দাগ কেটে যায় সেই আন্দোলন। নতুন করে আবার নির্বাচন হয়। কিন্তু তাতে আর সংখ্য়াগরিষ্ঠতা পায়নি বিএনপি। প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া হয়ে যান প্রধান বিরোধী দলনেত্রী।

রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, খালেদা জিয়া যদি প্রথমে বিরোধীদের দাবি মেনে নিতেন, তা হলে হয়তো ১৯৯৬ সালের দ্বিতীয় দফার নির্বাচনে আবার জয়জয়কার করে বিএনপিই ফিরে আসত। কিন্তু ‘ক্ষমতার টিকিয়ে রাখার মোহে’ তা আর ঠাওর করে উঠতে পারেননি খালেদা, এমনটাই ধারণা একাংশের।

২০০৪ সালে ২১ আগস্ট ঢাকায় আওয়ামী লিগের এক জনসভায় গ্রেনেড হামলা হয়। সেই ক্ষমতায় খালেদা। বিরোধী দলনেত্রী শেখ হাসিনা। গর্জে ওঠে আওয়ামী লিগ। এই একটা মামলায় বারংবার প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছিল খালেদা জিয়া ও তাঁর পুত্র তারেক রহমানকে। এমনকি, ওই বছরেই হওয়া চট্টগ্রাম ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলা। বিপদে ফেলেছিল বিএনপিকে। ব্যাকফুটে পড়তে হয়েছিল খালেদা জিয়াকে।

উল্লেখ্য, মায়ের মৃত্য়ুর পাঁচ দিন আগে দেশে ফিরেছেন ছেলে তারেক রহমান। বর্তমানে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত প্রধান তিনি। কিন্তু এই সাংগঠনিক পদ তিনি যতটা না রাজনৈতিক সংগ্রাম ও শিক্ষার মধ্য়ে দিয়ে পেয়েছেন, তার চেয়েও বেশি পেয়েছেন উত্তরাধিকার সূত্রে। ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর তারেক রহমানকে অতি দ্রুততার সঙ্গে দলের শীর্ষ পর্যায়ে তুলে ধরা হয়েছিল। যা কোথাও গিয়ে প্রভাব ফেলেছিল দলে খেটে ওঠা বর্ষীয়ান নেতাদের মনে। এছাড়াও জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মতো নানা অভিযোগ, রাজনৈতিক ভাবে ও সামাজিক ভাবেও ব্য়াকফুটে ফেলেছিল তাঁদের।