Kim Jong Un Resort: উত্তর কোরিয়ায় খুলে গেল ২০ হাজার শয্যাবিশিষ্ট বিলাসবহুল রিসর্ট, কিন্তু সেখানে যাবে কে?
Kim Jong Un Resort: যে দেশে আকাশ বা সড়ক পথে ঢোকা যায় না, সে দেশে নাকি বিলাসবহুল রিসর্ট। আবার কী নেই তার ভিতরে? সমুদ্রের ধারে ৫ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে একটি কমপ্লেক্স, যার ভিতরে রয়েছে সবমিলিয়ে ৫৪টি হোটেল, গল্ফ কোর্স, ওয়াটার পার্ক, সিনেমা হল, একাধিক শপিং মল, বিয়ার পাব, রেস্তোরাঁ এমনকী ভিডিও গেম পার্লারও।

পিয়ংইয়ং: রহস্যে মোড়া দেশ উত্তর কোরিয়া। দেশের সর্বাধিনায়ক খ্যাপাটে যুদ্ধবাজ নেতা কিম জং উন। তাঁর হাত ধরেই এযাবৎকালের সবচেয়ে বড়, বিলাসবহুল বিচ রিসর্ট খুলে গেল পিয়ংইয়ংয়ে। সমুদ্রের একদম গা ঘেঁষে অবস্থিত এই রিসর্টের নাম, ‘কালমা বিচসাইড রিসর্ট।’ কী নেই এই রিসর্টে? ভিতরেই ওয়াটার পার্ক, আকাশছোঁয়া সব হোটেল, এলাহি খানাপিনা, বিলাসবহুল একেকটি ঘর, নরম গদিমোড়া বিছানা, যেখানে একসঙ্গে প্রায় ২০ হাজার পর্যটক রাতে ঘুমোতে পারবেন। কিন্তু প্রশ্ন হল, যে দেশে ঘুরতে যাওয়াই যায় না, সে দেশে এত বড় বিলাসবহুল রিসর্টে থাকবেটা কে?
তার উপর একাধিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন এই প্রশ্নও তুলেছে, দেশটা দুর্ভিক্ষে ধুঁকছে। বাচ্চারা খেতে পায় না, যুবকদের চাকরি-কর্মসংস্থান নেই। অনেক বাড়ির মহিলারা চোরাচালানের সঙ্গে যুক্ত থেকে কিছু উপার্জন করেন যা দিয়ে বাড়িতে হাঁড়ি চড়ে। এহেন পরিস্থিতিতে এই আকাশছোঁয়া অট্টালিকা বিশিষ্ট এই ‘কালমা বিচসাইড রিসর্ট খোলার প্রয়োজন পড়ল কেন কিমের? আপাতত এই কোনও প্রশ্নেরই উত্তর নেই। সাতবছর ধরে কাজ চলার পর অবশেষে খুলে গেছে দেশের সবচেয়ে বড় ও বিলাসবহুল হোটেলটি। কিম নিজেই মহাধূমধাম করে এই রিসর্টের ফিতে কেটেছেন। যাঁকে সচারচর মিসাইল টেস্টিং গ্রাউন্ড ছাড়া অন্যত্র দেখা যায় না বললেই চলে, সেই কিম কেন একটি হোটেলের উদ্বোধনে এলেন, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।
এই প্রসঙ্গে বলে রাখা ভাল, দেশের সবচেয়ে বড় রিসর্টের উদ্বোধনে কিম ছাড়া আমন্ত্রিত অতিথি বলতে একমাত্র রাশিয়ার প্রতিনিধি। ইদানিং পুতিনের সঙ্গে কিমের মাখামাখি বেড়েছে। সম্প্রতি পিয়ংইয়ংয়ে গিয়ে কিমের সঙ্গে দেখা করে এসেছেন পুতিনের ‘দূত’ রুশ সংস্কৃতিমন্ত্রী। আশ্বাস দিয়েছেন, আগামী দিনে রাশিয়া ও উত্তর কোরিয়া একে অপরকে পর্যটন থেকে শুরু করে অস্ত্র সরবরাহ, সবক্ষেত্রেই বিপুল সাহায্য করবে।
সম্ভবত সেই সুসম্পর্কের খাতিরেই নিমন্ত্রণ পেয়েছেন রুশ প্রতিনিধি। আর কিম-ও এই সুযোগে বিশ্বকে দেখিয়ে দিতে চাইলেন, আমোদপ্রমোদের নিরিখে লাস ভেগাসের চেয়ে কোনও অংশে কম নয় উত্তর কোরিয়াও। চ্যালেঞ্জ করলেন কি মার্কিন প্রেসিডেন্টকে? যিনি আবার তাঁর নিজস্ব বিচ রিসর্টে মাঝেমধ্যেই দেশ বিদেশের নামিদামি অতিথিদের ডেকে এনে খাওয়ান? খাওয়ান অবশ্য নামেই! আসলে নিজের প্রচারের জন্য তহবিল সংগ্রহ করেন। মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে এক টেবিলে বসে ক্যান্ডেল-লাইট ডিনারের সুযোগ কেনই বা ছাড়তে চাইবেন কোটিপতিরা?

কিমের এই নয়া রিসর্ট কিন্তু একটা হোটেল নিয়ে তৈরি নয়। সমুদ্রের ধারে ৫ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে একটি কমপ্লেক্স, যার ভিতরে রয়েছে সবমিলিয়ে ৫৪টি হোটেল, গল্ফ কোর্স, ওয়াটার পার্ক, সিনেমা হল, একাধিক শপিং মল, বিয়ার পাব, রেস্তোরাঁ এমনকী ভিডিও গেম পার্লারও। পয়লা জুলাই থেকে এই হোটেল খুলে যাচ্ছে দেশি বিদেশি পর্যটকদের জন্য। নামেই অবশ্য বিদেশি পর্যটক, সুবিধার জন্য পড়ুন রাশিয়ার পর্যটকদের জন্য। কারণ, বিশ্বের অন্যান্য দেশ থেকে পিয়ংইয়ংয়ে উড়ে যাওয়ার অনুমতি নেই। সম্প্রতি একাধিক রুশ ট্র্যাভেল এজেন্সি ঘোষণা করেছে, ৭ জুলাই থেকে পিয়ংইয়ংয়ে যাওয়ার ও ফিরে আসার বিমান পরিষেবা চালু হচ্ছে। প্যাকেজের মধ্যে রয়েছে কিমের নতুন রিসর্টে ৪ দিন থাকা-খাওয়া, স্কি ও উত্তর কোরিয়ার রাজধানী একটা গোটা দিন ঘুরে দেখার সুযোগ। খরচ পড়বে ২ হাজার ডলারের কাছাকাছি।
North Korea has completed the Wonsan Kalma coastal tourist zone, a major east coast resort project promoted for years by leader Kim Jong Un to boost tourism, state media reported https://t.co/PyA9r2nW7c pic.twitter.com/cXkYwxjcx9
— Reuters (@Reuters) June 26, 2025
শুধু বিমান নয়, ট্রেনে চেপেও যাতে পর্যটকরা এখানে পৌঁছতে পারেন সেকারণে কালমা রেল স্টেশনও খুলে দেওয়া হয়েছে। কেউ কেউ বলছেন, এইরকম রিসর্ট খুলে কিম আসলে বোঝাতে চাইছেন, তিনি কতটা দিলদরিয়া। আসলে উত্তর কোরিয়াতে নাগরিকদের থাকা-খাওয়া এমনকী চুলের ছাঁটও কিম নিয়ন্ত্রণ করেন। ইন্টারনেট নেই, স্কুলে পাঠ্যবইতে পড়ানো হয় কিম ও তাঁর বাবা-দাদুদের সাহসিকতার নজির। কিমের বিরুদ্ধে মুখ খুললে শাস্তি একমাত্র মৃত্যুদণ্ড। দিনের পর দিন এটাই উত্তর কোরিয়ার ঘোর বাস্তব। পড়শি দক্ষিণ কোরিয়া যখন উন্নয়নের জোয়ারে ভর করে সামনের দিকে এগিয়ে গেছে, কিম তখন নিজের দেশকে গোটা বিশ্বের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন করে একটা একা দাঁড়িয়ে থাকা দ্বীপের মতো করে রেখেছেন। এ নিয়ে বহু সমালোচনা হয়েছে। বিশ্বের প্রথম সারির সবকটি দেশই প্রায় উত্তর কোরিয়ার উপরে কোনও না কোনও নিষেধাজ্ঞা জারি করে রেখেছে। এমনকী, রাষ্ট্রসংঘ তো এও ঘোষণা করেছে, ‘উত্তর কোরিয়াতে মানুষ দমবন্ধ করা অবস্থায় বেঁচে রয়েছে।’ সম্প্রতি যে রুশ পর্যটকরা উত্তর কোরিয়াতে বেড়াতে গিয়েছিলেন, তাঁরাও ফিরে এসে অভিযোগ করেছেন, কিমের পুলিশের নজরদারি ছাড়া এক মুহূর্ত তাঁদের ঘুরতে দেওয়া হয়নি।
সম্ভবত এই সব অভিযোগ থেকে রেহাই পেতেই কিম এখন নিজেকে খানিকটা ‘উদারপন্থী’ দেখাতে চাইছেন। আর তাই স্ত্রী-মেয়েকে নিয়ে একেবারে সপরিবারে উদ্বোধন করে এলেন দেশের সবচেয়ে দামি, বিলাসবহুল ও বড় রিসর্টের। এই সুযোগে কিমকে বেশ হাসিখুশি মেজাজে দেখতে পাওয়া গেল। এক হাতে সিগারেটের প্যাকেট, আর এক হাতে ঠাণ্ডা পানীয়, পাশেই এক অনুগত-র কাঁধে কিমের তোয়ালে। কিমের মেয়েকে তো এই প্রথম দেখতে পাওয়া গেল জনসমক্ষে। শোনা যায়, এই মেয়েই কিমের পরে দেশের সর্বাধিনায়কা হবেন। হোটেলগুলিকে অনেকটা পিছনে রেখে বিচের ধারে দেদার ছবিও তুললেন কিম। কিমের আশা, এত পর্যটক আসবে যে এবছরের শেষেই সবকটি হোটেলের সব শয্যা ভর্তি হয়ে যাবে। এখন প্রশ্ন হল, উত্তর কোরিয়ার ধুঁকতে থাকা অর্থনীতিতে কি এই রিসর্ট খুলে খানিকটা অক্সিজেন জোগাতে পারবেন কিম?

